নারায়ণগঞ্জ: আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলার অন্যতম আসামি নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খান।
এসময় আদালতে ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায়ও হাসতে দেখা গেছে জাকির খানকে।
বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা-২ আদালতের বিচারক শাম্মী আক্তারের আদালতে সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়।
জাকির খান ছাড়াও মামলার আরও দুই আসামি নাজির হোসেন ও মোক্তার হোসেন আদালতে হাজির ছিলেন।
সাক্ষ্য প্রদান শেষে বের হয়ে তৈমূর আলম খন্দকার গণমাধ্যমকে বলেন, জাকির খান কী কী অপকর্ম করেছে তা তুলে ধরেছি আমরা। নারায়ণগঞ্জের ৩২টি সংগঠনের মিটিংয়ে অপারেশন ক্লিন হার্টের সময় জিজ্ঞেস করা হয়েছিল আপনারা কে আছেন যে সন্ত্রাস করে না, তার পরিবারেও কেউ সন্ত্রাস করে না। তখন সাব্বির বলেছিল আমি সন্ত্রাস করি না, আমার পরিবারেও কেউ সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত নন। তখন আর্মি অফিসাররা তাকে বলেছিল, তাহলে আপনি বলেন। এরপর সাব্বির বলেছিল, আমার জানাজায় শরীক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আমি আমার বক্তব্য শুরু করলাম। তখন এই জাকির খানরা কীভাবে সন্ত্রাস করে নাম উল্লেখ করে এগুলোর ব্যাখ্যা করেছিল সে (সাব্বির)। তারপরেই তারা সাব্বিরকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুর রহিম বলেন, এই মামলায় আজ একজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হলো। মামলার আরও ২৭/২৮ জন সাক্ষী রয়েছেন। পর্যায়ক্রমে তাদের সাক্ষ্যগ্রহণ চলবে। সাব্বির হত্যার বিচার আগেই শুরু হয়েছিল। আজ তৈমূর সাহেব বাদী হয়ে এসেছেন। তিনি সাক্ষী দিয়েছেন এবং আসামি পক্ষ তাকে জেরা করেছেন। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। আগামী ৬ মার্চ আবারও সাক্ষ্যগ্রহণ হবে।
জাকির খানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রবিউল হোসেন বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ একজন সাক্ষীকে উপস্থিত করেছে। তিনি মামলার বাদী। তিনি তার বক্তব্য দিয়েছেন। তার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা জাকির খানের পক্ষে জেরা করেছি আইনগতভাবে। আজ জেরা শেষ হয়নি। আরও একদিনের জন্য আদালত সময় মঞ্জুর করেছেন। সেদিন সেই সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হবে।
নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান জানান, মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ আগামী ৬ মার্চ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে জাকির খানকে আদালতে আনা হবে বলে সকাল থেকেই আদালতপাড়ায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আদালতে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সদস্যদের। একদিন আগেই সাক্ষ্যগ্রহণে উপস্থিত করার জন্য কাশিমপুর কাগার থেকে নারায়ণগঞ্জ কারাগারে এনে রাখা হয় জাকির খানকে।
সাব্বির আলম খন্দকার ছিলেন দেশের গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার অ্যান্ড ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) প্রতিষ্ঠাপরিচালক ও সাবেক সহ-সভাপতি। তিনি বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকারের ছোট ভাই।
আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলার ২০তম বার্ষিকী। সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলায় ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি শহরের মাসদাইর এলাকায় নিজ বাড়ির অদূরে আততায়ীদের গুলিতে নিহত হন সাব্বির।
হত্যাকাণ্ডের পর তার বড় ভাই তৈমুর আলম বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসনের তৎকালীন বিএনপি দলীয় এমপি গিয়াসউদ্দিনকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। দীর্ঘ প্রায় ৩৪ মাস তদন্ত শেষে সিআইডি ২০০৬ সালের ৮ জানুয়ারি আদালতে ৮ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেন।
এ চার্জশিটে মামলার প্রধান আসামি গিয়াস উদ্দিনকে মামলা থেকে বাদ দেওয়ায় মামলার বাদী তৈমুর আলম খন্দকার সিআইডির দেওয়া চার্জশিটের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৪ জানুয়ারি আদালতে নারাজি পিটিশন দাখিল করেন।
নারাজি পিটিশনে তৈমুর আলম বলেছিলেন, ‘গিয়াসউদ্দিনই সাব্বির আলম হত্যাকাণ্ডের মূল নায়ক। গিয়াসউদ্দিন ও তার সহযোগীদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা একটি গোঁজামিলের চার্জশিট দাখিল করেছেন। পরবর্তীতে আদালত মামলাটি পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন। ’
এর পর থেকে ৬ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ বিচারিক হাকিম আদালতে (ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট) মামলার শুনানি চলে আসছিল। গত ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে তৈমুর আলম খন্দকার আদালতে দাখিলকৃত না রাজি পিটিশনটি আবেদন করে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। নারাজি পিটিশন প্রত্যাহারের কারণে গিয়াসউদ্দিন এখন আর মামলায় অভিযুক্ত নেই। ফলে সিআইডি ২০০৬ সালের ৮ জানুয়ারি আদালতে যে ৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছেন তার উপর ভিত্তি করেই মামলাটি পরিচালিত হচ্ছে।
>>> পড়ুন ডান্ডাবেড়ি পরে হাসিমুখে আদালতে জাকির খান
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৩
এমআরপি/এসএএইচ