ঢাকা: ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজনের জঙ্গি হামলার ঘটনার প্রেক্ষাপট নিয়ে নির্মিত ভারতীয় সিনেমা ‘ফারাজ’ বাংলাদেশে প্রচার প্রদর্শন বন্ধে করা রিটের ওপর শুনানি শেষ হয়েছে।
রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) শুনানি শেষে এ বিষয়ে আদেশের জন্য বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দিন রেখেছেন।
এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় খাস কামরায় সিনেমাটি দেখে আদালত আদেশ দেবেন।
আদালতে রিট আবেদনটি দায়ের করেন আবেদনের পক্ষে ওই ঘটনায় নিহত অবিন্তা কবিরের মা রুবা আহমেদ।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আহসানুল করীম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
পরে আহসানুল করীম বলেন, ভারতীয় সিনেমাটিতে অবিন্তার পোশাক পরিচ্ছেদ এমনভাবে দেখানো হয়েছে আমাদের সভ্য সমাজে যারা শিক্ষিত পরিবার তারা এসব পোশাক কখনও পরিধান করে না। এখানে মেয়েটিকে চারিত্রিকভাবে অবনমিত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের র্যাব পুলিশকে এখানে ব্যর্থ দেখানো হয়েছে। এসব কারণে বাংলাদেশের কোনো প্ল্যাটফর্মে সিনেমাটা আসা উচিত না, তাই রিট করা হয়েছে।
আদালত এ সিনেমা সোমবার সাড়ে ৯টায় দেখবেন। তারপর আদালত মতামত দেবেন বলে জানান আইনজীবী আহসানুল করীম।
আবেদনে তথ্য ও সম্প্রচার সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি অথরিটি (বিটিআরসি) ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে বিবাদী করা হয়েছে।
রিট আবেদনে ভারতে প্রযোজিত সিনেমা ফারাজ বাংলাদেশের সিনেমা হলে প্রদর্শন এবং নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইমসসহ অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রচার স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না এবং বাংলাদেশের সিনেমা হলে প্রদর্শন এবং নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইমসসহ অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রচার বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, ৩ ফেব্রুয়ারি ভারতে মুক্তি পায় ফারাজ।
এর আগে ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর শাহজাদপুরে এলিগেন্টস হাইট টাওয়ারে আবন্তিকা কবির ফাউন্ডেশনে এক সংবাদ সম্মেলনে নিহত অবিন্তা কবিরের মা রুবা আহমেদ দেশের প্ল্যাটফর্মে মুক্তি না দেওয়ার দাবি জানান।
রুবা আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমি ছয় মাস সিনেমাটি আটকে রেখেছি। তা না হলে ছয় মাস আগেই মুক্তি পেয়ে যেত। আমার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছে না। প্লিজ, আপনারা (সাংবাদিক) সিনেমাটিকে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে রিলিজ হতে দেবেন না। আমি জানি এই সিনেমা রিলিজ পেয়ে যাবে। তারপরও আপনাদের কাছে অনুরোধ এটা দেশের ওটিটি প্ল্যাটফর্মে যেন রিলিজ না হয়।
তিনি বলেন, ২০১৯ সালে আমি সিনেমাটি সম্পর্কে জানতে পারি। ২০২১ সালের ৫ আগস্ট সিনেমার পোস্টার আমার হাতে আসে। নির্মাতাদের কাছে আমি আইনি নোটিশও পাঠিয়েছিলাম। কোর্টের আদেশ থাকার পরও তারা আমাকে এখন পর্যন্ত সিনেমাটি বা এর কোনো স্ক্রিপ্ট দেখায়নি।
২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর লন্ডনের ফিল্ম ফেস্টিভালে ফারাজ সিনেমাটির স্ক্রিনিং করানো হয়। সেখানে রুবা আহমেদের এক প্রতিনিধি সিনেমাটি দেখেন। তিনি দেশে ফিরে রুবার আইনজীবীকে বলেছেন, সিনেমায় অবিন্তার চরিত্রের নাম আয়শা।
রুবা বলেন, সিনেমার নাম ফারজ হওয়ায় একজনকে হিরো সাজানো হয়েছে। আর বাকিদের বোঝানো হয়েছে তারা ‘ভিলেন’। তাদেরকে বাঁচাতে গিয়ে ফারাজ নিহত হয়েছে। আমার মেয়ে কারও জন্য জীবন দেয়নি। সেখানে কি ঘটে ছিল আমরা কেউ জানি না। আর একজন ভারতীয় হয়ে বাঙালিদের তারা কেন যাচাই করবে? তারা এই সিনেমাটি বানানোর সময় কোনো পরিবারের সঙ্গে কথা বলেনি।
তিনি বলেন, আমি মা হয়ে কীভাবে চাইব, আমার মেয়ের মৃত্যুকে বড় পর্দায় দেখে অন্য কেউ বিনোদন নেবে? মেয়ের জীবন কীভাবে চলে গেছে, একজন মা হয়ে কী কারও পক্ষে তা দেখা সম্ভব? এতে আমার মেয়ের ভাবমূর্তি যেমন নষ্ট হচ্ছে, সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছে।
রুবা আহমেদ আরও বলেন, আমার মেয়ে সাধারণ জনতা। আমার মেয়ে কোনো পণ্য নয়। ও কোনো কিচ্ছু না। ও অবিন্তা কবির, আমার মেয়ে। আপনারা কেউ ওকে জানতেন না। আপনারা কী আসলেই অবিন্তা কবিরকে চিনতেন? যদি ও ২০১৬ সালে মারা না যেত? চিনতেন না। আপনার ওর (অবিন্তা) নামটা জেনেছেন কারণ, শি পাসড ওয়ে দ্যাট নাইট।
যুক্তরাষ্ট্রের ইমোরি ইউনিভার্সিটির অক্সফোর্ড কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন অবিন্তা কবির। ২০১৬ সালের জুন মাসে দেশে ফিরেছিলেন তিনি। গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে খেতে গিয়েছিলেন তিনি। সেদিন জঙ্গি হামলায় ফারাজের সঙ্গে তিনিও নিহত হন। তার স্মৃতি ধরে রাখতে ২০১৭ সালের ৪ মার্চ প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন’।
>>> পড়ুন ‘ফারাজ’ সিনেমা দেশের প্লাটফর্মে মুক্তি না দেওয়ার দাবি
বাংলাদেশ সময়:১৪১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯,২০২৩/আপডেট: ১৬১১ ঘণ্টা
ইএস/এসএএইচ/এএটি