ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রীকে পদাধিকার বলে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) চেয়ারম্যান ও সচিবকে সদস্য পদে নিয়োগ সংক্রান্ত আইনের বিধান কেন বাতিল নয়, সেই মর্মে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সোমবার (২২ মে) বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনকারী মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে মামলা পরিচালন করেন ব্যারিস্টার তৌফিক ইনাম, তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী অনিক হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ সেলিম আজাদ।
পরে তৌফিক ইনাম জানান, বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা নওয়াব আলী ১৯৬৭ সালে তৎকালীন পাকিস্তান পুলিশে যোগদান করেন। পরে ১৯৭১ সালে যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি অস্ত্র লুট করে সম্মুখ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যা পুলিশ বাহিনীর গৌরবগাঁথা হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশের প্রকাশিত বইয়ে স্থান পায়। বীরত্বের স্বীকৃতি হিসেবে সরকার গত ২০০৫ সালে তাকে মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেয় এবং ওই বছরেই তার নাম গেজেটভুক্ত হয়। তিনি নিয়মিত সম্মানী ভাতাও পেয়ে আসছিলেন।
গত বছরের ১৮ অক্টোবর জামুকার ৮১তম সভায় তার গেজেটটি বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়। ওই সুপারিশ অনুসারে মন্ত্রণালয় চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি তার গেজেট বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এ গেজেট বাতিলের প্রজ্ঞাপন, ভাতা বন্ধ ও জামুকার চেয়ারম্যান এবং সদস্য হিসেবে মন্ত্রী ও সচিবের নিয়োগ সংক্রান্ত আইনের সংশ্লিষ্ট বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন।
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন, ২০২২ এর ৫ (১) ধারায় বলা হয়েছে, এ আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, নিম্নবর্ণিত সদস্য সমন্বয়ে কাউন্সিল গঠিত হবে, যথা: (ক) মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী, যিনি উহার চেয়ারম্যানও হইবেন; তবে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী সবাই বিদ্যমান থাকলে মন্ত্রী চেয়ারম্যান, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, অন্য দুইজন বা একজন ভাইস চেয়ারম্যানও হবেন; (খ) সচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
তৌফিক ইনাম বলেন, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল ২০২২ সালের আইন দ্বারা গঠিত একটি পৃথক সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। জামুকা আইন ২০২২ এর ছয় ধারা অনুসারে জামুকার অন্যতম প্রধান কাজ হলো- গেজেটভুক্ত কোনো মুক্তিযোদ্ধা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নয় মর্মে তদন্তে এলে তার গেজেটটি বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয় বরাবরে 'সুপারিশ' করা এবং নতুন মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে সুপারিশ করা।
যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী ও সচিব একই সঙ্গে জামুকার সর্বোচ্চ পদে আসীন, ফলে তারা জামুকার নির্বাহী প্রধান হিসেবে যে সুপারিশ দেবে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং সচিব হিসেবে সেটাই ‘মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত’ হিসেবে প্রকাশ করেন।
এছাড়া জামুকা যখন একজন মুক্তিযোদ্ধার গেজেট বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয় বরাবরে সুপারিশ করে মন্ত্রণালয় কিন্তু গেজেট বাতিলের আগে তাকে কোনো ধরনের অভিযোগ খণ্ডানোর বা শুনানির সুযোগও দেয় না; শুধুমাত্র জামুকার সুপারিশ মোতাবেক গেজেট বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। জামুকা আইনের আট ধারা অনুসারে জামুকার চেয়ারম্যান অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী জামুকার সব নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী; অন্যদিকে মন্ত্রণালয়েরও প্রধান তিনি। সে কারণে প্রকৃত অর্থে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় একই প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এক্ষেত্রে তদন্তকারী ও বিচারক একই ব্যক্তি। এটা প্রতিষ্ঠিত ন্যায়বিচার নীতির পরিপন্থি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৪ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০২৩
ইএস/আরআইএস