ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

র‌্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যু: দুই মাস সময় পেল তদন্ত কমিটি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৫ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২৩
র‌্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যু: দুই মাস সময় পেল তদন্ত কমিটি

ঢাকা: নওগাঁয় র‍্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের (৪৫) মৃত্যুর পুরো ঘটনার তদন্ত শেষ করতে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটিকে দুই মাস সময় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

রাষ্ট্রপক্ষে সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (১৩ জুন) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহম্মদ মাহবুব-উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস আদালতে বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। উচ্চ পর্যায়ের কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন। আরও আনুষঙ্গিক কাজ রয়েছে। তদন্ত শেষ করতে আট সপ্তাহ সময় প্রয়োজন।

এরপর আদালত দুই মাসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করতে বলেন।

আদালতে রিট আবেদনকারী আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিকও উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ৫ মার্চ ওই ঘটনা তদন্তের জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

এরপর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খানকে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রেজাউল মোস্তফা কামাল, নওগাঁ জেলা ও দায়রা জজ আবু শামীম আজাদ, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইমতিয়াজুল ইসলাম, সিভিল সার্জন রায়হানুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল করিম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান।

পরে এ কমিটি কাজ শুরু করে।

গত ২২ মার্চ নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় থেকে সুলতানাকে আটক করা হয়। এরপর ২৪ মার্চ সকাল ৯টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই নারীর মৃত্যু হয়। সুলতানা নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সহকারী পদে চাকরি করতেন।

র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) ভাষ্য, সুলতানার নামে প্রতারণার অভিযোগ ছিল। সে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করা হয়েছিল।

রাজশাহী র‍্যাব-৫ এর কোম্পানি কমান্ডার বলেন, সুলতানার নামে আর্থিক প্রতারণার একটি অভিযোগ পাই। তার ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক টাকা লেনদেনের অভিযোগ ছিল। পরে তার ব্যাংক স্টেটমেন্ট সংগ্রহ করে আমরা অভিযোগের সত্যতা পাই। অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় থেকে র‍্যাব হেফাজতে নেওয়া হয়।

আটকের পরপরই সুলতানা অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ মার্চ স্ট্রোক করে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। আইনি প্রক্রিয়া শেষে ২৫ মার্চ দুপুরে স্বজনদের কাছে তার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।

র‍্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, আটকের পর ওই নারীকে র‍্যাবের কোনো ক্যাম্পে নেওয়া হয়নি। আটক করার পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার পরিবারের লোকজন সঙ্গেই ছিলেন।

তবে সুলতানার মামা ও নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক (মন্টু) জানান, সুলতানার সঙ্গে তার স্বামীর ছাড়াছাড়ি হয় ১৭ বছর আগে। এরপর সুলতানা তার এক সন্তানকে অনেক কষ্ট করে অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে লালন-পালন করে আসছিল। নওগাঁ শহরের জনকল্যাণ এলাকায় একটা ভাড়া বাড়িতে থেকে ছেলেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছিল। সুলতানা ভূমি অফিসের একজন সামান্য কর্মচারী ছিল। কোনো দিন তার নামে কোনো দুর্নীতি কিংবা অনিয়মের অভিযোগ কেউ করতে পারেনি।  

এ অবস্থায় ডেইলি স্টারে প্রকাশিত প্রতিবেদন ২৭ মার্চ হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক। এদিন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় নথি চান এবং আইনজীবীকে এ বিষয়ে আবেদন করতে বলেন। সে অনুসারে আইনজীবী ওই ঘটনা তদন্তে একজন অবসরপ্রাপ্ত হাইকোর্টের বিচারপতির নেতৃত্বে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি চেয়ে রিট করেন। আর অ্যাটর্নি জেনারেল প্রয়োজনীয় নথি আদালতের সামনে তুলে ধরেন। এরপর আদালত দুটি আইনি প্রশ্নের জবাব ও পোস্টমর্টেম রিপোর্ট চেয়ে শুনানি ৫ এপ্রিল পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।  পরে ৫ এপ্রিল উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনে আদেশ দেন এবং ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

পাশাপাশি এ তদন্ত চলাকালে ঘটনার সময় দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট র‍্যাব সদস্যদের সরিয়ে নিতে বলা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৪ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২৩
ইএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।