ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

দেশের শীর্ষ ড্রাগ ডিলারদের তালিকা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩০ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২৩
দেশের শীর্ষ ড্রাগ ডিলারদের তালিকা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন

ঢাকা: দুই মাসের মধ্যে দেশের শীর্ষ ড্রাগ ডিলারদের নাম ও ঠিকানা দাখিল করতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রতি নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছে।  

‘মাদক ব্যবসার কারণে বছরে পাচার ৫ হাজার কোটি টাকা’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে মঙ্গলবার (১৩ জুন) এ সম্পুরক আবেদনটি করেছেন আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস।

 
আবেদনে মাদক ব্যবসার মাধ্যমে অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, এই মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে।

পাশাপাশি ‘মাদক ব্যবসার কারণে বছরে পাচার ৫ হাজার কোটি টাকা’ শীর্ষক অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান করতে দুর্নীতি দমন কমিশন, বিএফআইইউ, সিআইডি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রতি নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

১১ জুন দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়. ‘বাংলাদেশ থেকে মাদকের কারণে প্রতিবছর পাচার হয়ে যায় ৪৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ৫ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। আর মাদক কেনাবেচা করে অর্থ পাচারের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে পঞ্চম। এশিয়ার দেশগুলো বিবেচনায় নিলে মাদকের মাধ্যমে টাকা পাচারের ঘটনায় বাংলাদেশ একেবারে শীর্ষে রয়েছে।  

অবশ্য পাচার করা টাকার হিসাব অনুমানভিত্তিক, এটি করেছে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাড। গত বৃহস্পতিবার আঙ্কটাড (ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) তাদের ওয়েবসাইটে অবৈধ অর্থপ্রবাহ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করেছে। এতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের নয়টি দেশের মাদকসংশ্লিষ্ট অবৈধ অর্থপ্রবাহের অনুমানভিত্তিক হিসাব তুলে ধরেছে সংস্থাটি। অন্য দেশগুলো হলো আফগানিস্তান, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, মালদ্বীপ, মেক্সিকো, মিয়ানমার, নেপাল ও পেরু।  

আঙ্কটাডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাদকের অবৈধ অর্থপ্রবাহের দিক থেকে বিশ্বে প্রথম অবস্থানে রয়েছে মেক্সিকো। এরপর যথাক্রমে রয়েছে কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, পেরু ও বাংলাদেশ। মাদক এবং অপরাধ প্রতিরোধে কাজ করা জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনওডিসির সহায়তায় এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মাদকের মাধ্যমে অবৈধ অর্থপ্রবাহের অনুমানভিত্তিক এই হিসাব করেছে আঙ্কটাড।  

তালিকায় এশিয়ার যে পাঁচটি দেশের নাম রয়েছে, এর মধ্যে শীর্ষে থাকা বাংলাদেশের পরেই আছে মালদ্বীপ ও নেপাল। চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে আফগানিস্তান ও মিয়ানমার। মূলত ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে মাদকের মাধ্যমে অবৈধ অর্থপ্রবাহের এই চিত্র প্রথমবারের মতো তুলে ধরেছে আঙ্কটাড।  

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, দেশের ভেতর দিয়ে যত মাদক চোরাচালান হয়, এর সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ উদ্ধার হয়। অর্থাৎ দেশে আসা ৮০ শতাংশ মাদক উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। ফলে যত মাদক উদ্ধার হয়, তার বাজারমূল্যকে পাঁচ গুণ বাড়িয়ে অনুমিত হিসাব করে ইউএনওডিসি। তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়েই মাদকসংশ্লিষ্ট অর্থ পাচারের অনুমানভিত্তিক হিসাবটি করেছে আঙ্কটাড।  

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যই বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে মাদকের বিস্তার বেড়েছে। গত বছর দেশে চার কোটি ৫৮ লাখ ৬৮ হাজার ৫৬৯টি ইয়াবা বড়ি উদ্ধার হয়েছে। ইয়াবার মূল উপাদান ম্যাথঅ্যাম্ফিটামিন বা আইস উদ্ধার হয়েছে ১১৩ কেজি ৩৩১ গ্রাম। আর হেরোইন উদ্ধার হয়েছে ৩৩৮ কেজি। এর আগের বছর (২০২১) ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে পাঁচ কোটি ৩০ লাখ ৭৩ হাজার ৬৬৫টি, আইস উদ্ধার হয়েছে ৩৬ কেজি ৭৯৪ গ্রাম এবং হেরোইন উদ্ধার হয়েছে ৪৪১ কেজি।  

আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইয়াবা, হেরোইনসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক বাংলাদেশে ঢুকছে। আর মাদক কেনার অর্থ বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এশিয়ার যে পাঁচটি দেশের মাদকসংশ্লিষ্ট অবৈধ অর্থপ্রবাহের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, এর মধ্যে বাংলাদেশ, মালদ্বীপ ও নেপাল থেকে অর্থ পাচার বেশি হয়। অন্যদিকে বিভিন্ন দেশে মাদক বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করছেন আফগানিস্তান ও মিয়ানমারের মাদক ব্যবসায়ীরা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৭ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২৩
ইএস/এসআইএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।