ঢাকা: সরকারিভাবে আমদানি করা ৭২ হাজার টন রাসায়নিক সার বন্দর থেকে খালাসের পর গুদামে পৌঁছে না দিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগের ঘটনায় হাইকোর্ট বলেছেন, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান কঠোর। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না, সে যেই হোক।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।
আদালতে বিসিআইসির পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মোল্লা কিসমত হাবিব। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ শুনানিতে ছিলেন।
‘৫৮২ কোটি টাকার সার আত্মসাৎ’ শীর্ষক শিরোনামে গত ৪ জানুয়ারি একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
প্রতিবেদনটি নজরে আসার পর গত ৫ জানুয়ারি হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত রুল জারি করে আদেশ দেন।
আদেশে অভিযোগটি অনুসন্ধান করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) চার মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন।
পাশাপাশি ওই অভিযোগ অনুসন্ধান করে শিল্পসচিব ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) চেয়ারম্যানকে চার মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
সে অনুযায়ী মামলাটি বৃহস্পতিবার কার্যতালিকায় ওঠে। শুনানিতে বিসিআইসির আইনজীবী মোল্লা কিসমত হাবিব বলেন, প্রতিবেদন এসেছে, তবে হলফনামা করতে পারেনি।
তখন আদালত বলেন, ওই ঘটনায় কারা জড়িত? নাম–ঠিকানা পাওয়া যায়নি? মানুষ আত্মসাৎ করেনি? তাহলে বাতাস খেয়ে ফেলেছে? তদন্ত প্রতিবেদনে নাম উল্লেখ না থাকলে এর কী দাম আছে?
এ সময় বিসিআইসির আইনজীবী মোল্লা কিসমত হাবিব বলেন, আত্মসাৎ হয়েছে।
তখন আদালত আত্মসাৎকারী বা আত্মসাৎকারীদের নাম পরিচয় জানতে চাইলে বিসিআইসির আইনজীবী বলেন, মেসার্স পোটন ট্রেডার্স জড়িত।
আদালত বলেন, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান কঠোর। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না, সে যেই হোক।
এরপর প্রতিবেদন হলফনামা করে দাখিল করতে সময় চান আইনজীবী। পরে আদালত আগামী ৯ জুলাই শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য রাখেন।
আদেশের পর খুরশীদ আলম বলেন, ৫৮২ কোটি টাকা মূল্যের সার আত্মসাতের বিষয়ে যে স্বপ্রণোদিত একটি রুল ছিল, সে বিষয়ে দুদকের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছিল। আজ (বৃহস্পতিবার) আদেশের জন্য ছিল। কিন্তু দুদক থেকে আরেকটি প্রতিবেদন পাওয়ার কথা জানিয়ে একদিন সময় চেয়েছিলাম। আদালত পরে ৯ জুলাই পর্যন্ত সময় দিয়েছেন।
মোল্লা কিসমত হাবিব বলেন, বিসিআইসি ২৭৭ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। কিন্তু সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। যে কারণে আদালতের কাছে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় চেয়েছিলাম। আদালত সময় দিয়েছেন।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারিভাবে আমদানি করা ৭২ হাজার মেট্রিক টন রাসায়নিক সার বন্দর থেকে খালাসের পর গুদামে পৌঁছে না দিয়ে আত্মসাৎ করেছে পরিবহনের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স পোটন ট্রেডার্স। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৫৮২ কোটি টাকা।
মেসার্স পোটন ট্রেডার্স সাবেক সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খানের (পোটন) মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। কামরুল আশরাফ খান সার ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) সভাপতি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি, তিনিই মূলত দেশে সারের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন।
পোটন ট্রেডার্স যে সার আত্মসাৎ করেছে, তা উঠে এসেছে সারের আমদানিকারক শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি প্রতিষ্ঠান রসায়ন শিল্প সংস্থার (বিসিআইসি) দুটি তদন্তে। সারগুলো খালাস হয়েছিল ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ১৫ মে’র মধ্যে । সার সরবরাহ না করার পর সাত মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি বিসিআইসি। সর্বশেষ গত ২০ ডিসেম্বর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে বিসিআইসির পক্ষ থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২৩
ইএস/আরএইচ