ঢাকা: সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র ও পৌর বিএনপির সদস্য সচিব মো. তাজকিন আহমেদ চিশতীকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে প্যানেল মেয়র কাজী ফিরোজ হাসানকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সোমবার (১৯ জুন) কাজী ফিরোজ হাসান তলবে হাজির হলে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মো. শওকত আলী চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ। মেয়র তাসকিন আহমেদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ।
আইনজীবীরা জানান, গত ৬ ফেব্রুয়ারি সোমবার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো. আব্দুর রহমানের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, মেয়র চিশতীর নামে ২০২২ সালের ২৪ ডিসেম্বরে ৫১ নম্বর এবং চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জিআর নম্বর- ৯৬২/২০২২ নম্বর মামলা হয়। এর মধ্যে জিআর মামলায় চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ কারণে তাকে মেয়র পদ থেকে অপসারণ করার সিদ্ধান্ত নেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ। এর পরিপ্রেক্ষিতে মেয়র চিশতীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে পৌরসভা আইন ২০০৯ এর ৪০-২ ধারা অনুযায়ী প্যানেল মেয়র কাজী ফিরোজ হাসানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
পরে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন তাজকিন আহমেদ। ১৪ ফেব্রুয়ারি আদেশে হাইকোর্ট সাময়িক বরখাস্তের আদেশ স্থগিত করার পাশাপাশি বরখাস্তের বৈধতা নিয়ে রুল দেন। পরে সরকার হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করলে গত ১৪ জুন চেম্বার আদালতও হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন।
এদিকে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ নিয়ে তাজকিন আহমেদ দায়িত্ব বুঝে নিতে গেলে পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্যানেল মেয়র কাজী ফিরোজ হাসান তাকে লাঞ্ছিত করেন। পরে হাইকোর্টে তিনি সম্পূরক আবেদন করেন। সে আবেদনের শুনানির পর হাইকোর্ট গত ১ জুন কাজী ফিরোজ হাসানকে ৬ জুনের মধ্যে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে মৌখিক নির্দেশ দেন। কিন্তু দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ায় বিষয়টি আদালতের নজরে আনলে গত ১২ জুন আদালত তাজকিন আহমেদকে পৌরসভার দায়িত্ব পালন করে যেতে মৌখিক আদেশ দেন।
আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ জানান, হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের পর প্যানেল মেয়রের সঙ্গে স্থানীয় সিটি ব্যাংক শাখা পৌরসভার লেনদেনে অপারগতা প্রকাশ করে। তখন প্যানেল মেয়র কাজী ফিরোজ হাসান সাতক্ষীরায় সিটি ব্যাংকের ট্রেড লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দিয়ে কারণ দর্শাতে নোটিশ দেন। এ নোটিশ পেয়ে সিটি ব্যাংক রিটে পক্ষভুক্তির আবেদন করে। সে আবেদনের শুনানির পর হাইকোর্ট কাজী ফিরোজ হাসানকে তলব করেন।
সোমবার তিনি তলবে হাজির হয়ে কাজী ফিরোজ হাসান নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলে আদালত উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, আদালতের আদেশ অমান্য করলে শাস্তি দেওয়া হবে। জরিমানা করা হবে। মেয়রকে বরখাস্তের স্থগিতাদেশ আগেই পেয়েছেন। তাহলে ব্যাংকে চিঠি দিয়ে হুমকি দিলেন কেন? এগুলো তো ভালো লক্ষণ না। আপনি জন প্রতিনিধি। জনপ্রতিনিধির কাজ মানুষের সেবা করা, হুমকি দেওয়া না। আপনি ব্যাংকগুলোকে সহযোগিতা করতে পারতেন।
তখন কাজী ফিরোজ হাসান বলেন, ছয় মাস ধরে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন না পাওয়ায় ব্যাংকে নোটিশ দিয়েছিলেন তিনি। তখন আদালত বলেন, তার জন্য তো আপনিই দায়ী। চার-পাঁচ মাস ধরে ক্ষমতা দখল করে আছেন। আপনি কি মেয়র যে, আপনার কথায় ব্যাংক টাকা দেবে? আপনার কারণে কর্মচারীরা যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বড় ধরনের জরিমানা করা হবে। আপনি আদালতের আদেশ অমান্য করেছেন। আদালতের আদেশ অমান্য করলে শাস্তি দেওয়া হবে।
এরপর আদালত আগামী ১৬ জুলাই পরবর্তী আদেশের জন্য রেখে মেয়র তাজকিন আহমেদকে পৌরসভার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে নির্দেশ দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২৩
ইএস/আরআইএস