ঢাকা: জামিনে থাকা কলেজ শিক্ষার্থী মো. আশরাফুল হাওলাদারকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় পটুয়াখালীর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান ও সহকারী উপ-পরিদর্শকের (এএসআই) মিজানুর রহমানকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি আদেশের জন্য শুনানি দুই সপ্তাহ মুলতবি করেছেন।
বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার (৩০ জুলাই) এ আদেশ দেন।
২০ মে একটি জাতীয় দৈনিকে ‘জামিন নেওয়া শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার, আদালতে মুক্তি’ শীর্ষক শিরোনামে সংবাদ ছাপা হয়। পরদিন সংবাদটি আদালতের নজরে আনেন উচ্চ আদালতে আসামিপক্ষে নিয়োজিত আইনজীবী আলী আহসান মোল্লা।
২১ মে হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন। একইসঙ্গে ব্যাখ্যা জানাতে পটুয়াখালী সদর থানার ওসি মনিরুজ্জামান ও এএসআই মিজানুরকে ১৮ জুন আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। সেই আদেশ অনুসারে ১৮ জুন তারা হাজিন হন। পরে ২৩ ও ২৪ জুলাই তারা আদালতে হাজির হন। ওই ঘটনার জন্য তারা লিখিতভাবে নিঃশর্ত ক্ষমাও প্রার্থনা করেছেন।
আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবী আলী আহসান মোল্লা এবং দুই পুলিশ কর্মকর্তার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবু রেজা মো. কাইয়ুম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন।
আদালতে আশরাফুলের আইনজীবী আলী আহসান মোল্লা আদালতে বলেন, গ্রেপ্তারের সময় এএসআই ও গ্রেপ্তারের পর ওসির সঙ্গে ফোনে কথোপকথনের বিষয়ে আমার কাছে হলফনামা চাওয়া হয়েছিল, আমি সেটি দাখিল করেছি। এ বিষয়ে বিবাদী পক্ষের বক্তব্য থাকলে তা আজ দিতে বলা হয়েছিল।
তখন আদালত দুই পুলিশ সদস্যের আইনজীবী আবু রেজা মো. কাইয়ুম খানের কাছে জানতে চান ফোন কলের বিষয়ে কিছু বলার আছে কি না। জবাবে এ আইনজীবী বলেন, আমরা নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছি। নতুন করে কিছু বলার নেই। এরপর আদালত বলেন, আমরা তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ দেবো রোববার (৬ আগস্ট)।
নাগরিক অধিকার ও ফোন কলের বিষয়টি তুলে ধরে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলে দেওয়া হবে। তখন আইনজীবী কাইয়ুম খান দুই পুলিশ সদস্যের ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আদেশ জন্য দুই সপ্তাহ সময় চান। এরপর আদালত দুই পুলিশ সদস্যকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়ে মামলাটির আদেশ দুই সপ্তাহ মুলতবি করেন।
২০ মে একটি জাতীয় দৈনিকে ‘জামিন নেওয়া শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পটুয়াখালী সদর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেওয়া কলেজ শিক্ষার্থী আশরাফুলকে আটক করে আদালতের পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (১৮ মে) রাতে আসামির বাড়ি থেকে আটকের পর শুক্রবার সকালে আদালতে পাঠানো হয়।
এ সময় পুলিশকে হাইকোর্টের জামিনের কপি দেখালে তা আমলে নেয়নি বলে দাবি আসামির পরিবারের।
পরিবারের অভিযোগ, আটকের পর পুলিশ মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে, তা দিতে না পারায় পুলিশি ক্ষমতার বলে তাকে আদালতে পাঠানো হয়। যদিও হাইকোর্টের জামিননামা দেখে শুক্রবার দুপুরে আসামিকে ছেড়ে দিয়েছেন পটুয়াখালী চিফ জুডিসিয়াল আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মো. জামাল হোসেন।
আশরাফুল পটুয়াখালী সদর উপজেলার মরিচবুনিয়া ইউনিয়নের বাজারঘোনা গ্রামের আব্দুল লতিফ হাওলাদারে ছেলে।
এদিকে এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছে জেলা আইনজীবী সমিতি।
আশরাফুলের চাচা রাজা মিয়া বলেন, বৃহস্পতিবার সদর থানা পুলিশের এএসআই মিজানুর রহমান আশরাফুলকে আটক করেন। আশরাফুলের পরিবার ওই রাতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আলী আহসান মোল্লার স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্র ও জামিননামার অনলাইন কপি দেখায় পুলিশকে।
এ প্রসঙ্গে এএসআই মিজানুর রহমান বলেন, আমি ওয়ারেন্ট অনুযায়ী আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। এরপর আশরাফুলের পরিবার ওসি স্যারের সঙ্গে কথা বলেছেন ও ওসি স্যার কাগজপত্র দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২৩
ইএস/এএটি