ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

সাগর-রুনি হত্যা: প্রতিবেদন দাখিলে সময় নেওয়ার সেঞ্চুরি 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০২৩
সাগর-রুনি হত্যা: প্রতিবেদন দাখিলে সময় নেওয়ার সেঞ্চুরি 

ঢাকা: সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে সময় নেওয়ার রেকর্ড গড়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান। ৯৯ বার সময় নিয়েও দাখিল করতে পারেনি প্রতিবেদন।

এবার সময় নেওয়ার সেঞ্চুরি গড়ার রেকর্ড হলো।  

সোমবার (০৭ আগস্ট) এই মামলার প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। তবে এবারও র‌্যাব প্রতিবেদন দাখিল না করায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাশিদুল আলম আগামী ১১ সেপ্টেম্বর তারিখ প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী দিন ধার্য করেন। এ নিয়ে প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ১০০ বার পেছালো।  

আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের সাড়ে ১১ বছর পার হয়েছে। ঘটনার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা হবে। তবে এ হত্যাকাণ্ডের পর সাড়ে ১১ বছরে ৬ জন তদন্ত কর্মকর্তা বদলি হয়েছেন।  

বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার মোহাম্মদ শহিদুল আলম সপ্তম ব্যক্তি হিসেবে এ মামলা তদন্ত করছেন। এ পর্যন্ত ১০ বার অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করলেও তদন্ত শেষ হয়নি।  

এ মামলায় ২০১৪ সালের ২০ মার্চ র‌্যাবের সহকারী পুলিশ সুপার মো. ওয়ারেছ আলী মিয়া তদন্তের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় প্রথম অগ্রগতি প্রতিবেদন দেন। এরপর তিনি আরো ছয়বার অগ্রগতি প্রতিবেদন দেন। এরপর র‌্যাবের সহকারী পুলিশ কমিশনার মহিউদ্দিন আহম্মদ ২০১৭ সালে ১৫ মার্চ ও ২০১৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি দুবার অগ্রগতি প্রতিবেদন দেন। সর্বশেষ বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার মোহাম্মদ শহিদুল আলম ২০১৯ সালের ৭ জুলাই তিনি এ মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন। এরপর ২০২০ সালের ৫ অক্টোবর তিনি অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন।  

সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মামলাটি যথাযথভাবে তদন্তের লক্ষ্যে জব্দকৃত আলামত ডিএনএ পরীক্ষার জন্য বিজ আদালতের অনুমতিক্রমে আমেরিকার ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফরেন্সিক সার্ভিস’ বরাবর পাঠানো হয়েছে।  

ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, পর্যালোচনায় অজ্ঞাতনামা দুজন পুরুষ ব্যক্তির ডিএনএ পাওয়া গেছে। অজ্ঞাতনামা পুরুষ ব্যক্তিকে চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে আমেরিকার আরেকটি ডিএনএ ল্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। যারা ডিএনএ থেকে অপরাধী বা জড়িত ব্যক্তির ছবি প্রস্তুত করতে পারে। এই ল্যাবের সঙ্গে পূর্বের প্রতিষ্ঠান ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফরেন্সিক সার্ভিসের সমন্বয়ের মাধ্যমে ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ছবি প্রস্তুতের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তাদেরকে সার্ভিস চার্জ হিসেবে ১ হাজার দুইশত মার্কিন ডলার ফি পরিশোধ করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে অগ্রগতি বিষয়ে মতামত প্রদানের জন্য ই-মেইল প্রেরণ করা হয়। ল্যাব কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে এখনো কোনো মতামত প্রদান করেনি। ডিএনএ প্রযুক্তির মাধ্যমে সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহের প্রচেষ্টাসহ মামলার তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।  

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না হওয়ায় হতাশ সাগর-রুনির পরিবার।  

মামলার বাদী নওশের আলম রোমান বলেন, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের সাড়ে ১১ বছর হয়ে গেলো। এ সাড়ে ১১ বছরের মধ্যে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেনি তদন্তকারী সংস্থা। এতদিনে প্রতিবেদন দাখিল না হওয়ায় হতাশ আমাদের পরিবার। মামলার তদন্ত সংস্থা র‌্যাবকে এলিট ফোর্স বলা হয়। এই এলিট ফোর্স দীর্ঘদিনেও প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। তারা ব্যর্থতা স্বীকার করে সংবাদ সম্মেলন করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, গত সাড়ে ১১ বছরে আমার চোখের সামনে অনেক আলোচিত হত্যা মামলার বিচার শেষ হয়েছে। সেসব মামলার আসামিদের শাস্তি হয়েছে। কিন্তু কোনো অদৃশ্য শক্তির কারণে সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত আটকে আছে সরকারের কাছে আমাদের পরিবারের দাবি এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য যেন দ্রুত উদঘাটন করে।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার মো. শফিকুল আলম বলেন, মামলাটি গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্ব সহকারে মামলার তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু বলেন, সাগর-রুনি হত্যা মামলাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মামলাটির দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা উঠিত। মামলার তদন্ত সংস্থা র‌্যাব যদি তদন্ত করতে না পারে অন্য কোনো সংস্থা দিয়ে তদন্ত করা যেতে পারে।  

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি তাদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ পাওয়া যায়। ওই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি রুনির ভাই নওশের আলী রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন।

প্রথমে মামলাটির তদন্ত করেন শেরেবাংলা নগর থানার একজন কর্মকর্তা। এরপর ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত ভার পড়ে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলমের ওপর।

দুই মাস পর হাইকোর্টের আদেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় র‌্যাবকে। সেই থেকে ১১ বছরের বেশি সময়ে ১০০ বার সময় নিয়েও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি সংস্থাটি।

এ মামলায় রুনির বন্ধু তানভীর রহমানসহ মোট আটজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার অপর আসামিরা হলেন—বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ, পলাশ রুদ্র পাল ও আবু সাঈদ। এদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ রুদ্র জামিনে আছেন। অপর আসামিরা এখনো কারাগারে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০২৩
কেআই/এসআইএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।