ঢাকা: আইনের দৃষ্টিতে পলাতক থাকায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞার রিটে তার ঠিকানা সংশোধন করে রিটকারীদের আবেদন জমা দিতে বলেছেন হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কামরুল ইসলাম, সাঈদ আহমেদ রাজা ও সানজিদা খানম। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
এ সময় বিএনপিপন্থী আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন, কায়সার কামাল, বদরুদ্দোজা বাদল, মাহবুব উদ্দিন খোকন ও রুহুল কুদ্দুস কাজল এ বিষয়ে মতামত দেন।
শুনানির শুরুতে হাইকোর্টের এই বেঞ্চের দরজার সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েনের বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করে আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা আদালতের অফিসার। এখানে পুলিশ কেন? এখানে আদালতের সামনে পুলিশ আনা দুঃখজনক। আমি এখানে ৪৫ বছর আইন পেশায়, এ অবস্থা দেখিনি।
এ সময় আদালত তার কাছে জানতে চান তিনি কার পক্ষে কীভাবে বক্তব্য দেবেন। তখন এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, আমি একজন কোর্ট অফিসার হিসেবে বলছি।
তিনি বলেন, নোটিশ দেওয়া ছাড়া একজনের বিষয়ে আদেশ দেওয়া যায় না। আদেশ দিতে পারেন না।
এক পর্যায়ে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, তারেক রহমান ৬ মইনুল রোডের বাড়িতে ছিলেন। তারপর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে গেছেন। এরপর চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গেছেন। তিনি পালিয়ে যাননি।
এ সময় অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, তারেক রহমান পলাতক। অতি সম্প্রতি আমরা দেখছি মিটিংয়ে তার ভিডিও বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে। এতে আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করা হচ্ছে।
আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা আদেশ প্রার্থনা করেন বলেন, জারিকারকের রিপোর্ট সামনে এসেছে, সেখানে বিস্তারিত বলা আছে। আদালতই এটা সংশোধন করে নিতে পারেন।
তখন আদালত বলেন, আমরা তাৎক্ষণিক সংশোধন করে নেই যখন দুই পক্ষই উপস্থিত থাকে। কিন্তু এখানে তো আইনের দৃষ্টিতে একপক্ষ অনুপস্থিত। সে কারণে আপনারা সংশোধন করে নিয়ে আসেন।
জানা যায়, রুল শুনানির জন্য সেকশন থেকে যে নোটিশ পাঠানো হয়, সেখানে তারেক রহমানের ঠিকানা ভুল লেখা হয়েছে। রোড নম্বরের জায়গায় রুম নম্বর হয়েছে।
পরে আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, অফিসার্স অব দ্য কোর্ট হিসেবে আমরা আদালতে আমাদের বক্তব্য দিয়েছি। আদালত সব শুনে রিটে থাকা ঠিকানা সংশোধন করে রিটকারীদের নতুন করে আবেদন দিতে বলেছেন।
এর আগে ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি আইনজীবী নাসরিন সিদ্দিকী লিনা হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন।
রিটে কোনো পত্রিকা, ইলেট্রনিক মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসে তারেক রহমানের কোনো বক্তব্য প্রকাশ, প্রচার, সম্প্রচার, পুনঃউৎপাদন না করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তথ্য সচিবের প্রতি নির্দেশনা চেয়েছিলেন।
রিটে বলা হয়, তারেক একজন ফেরারি আসামি। তিনি সংবিধান লঙ্ঘন করে ও বেআইনিভাবে বক্তব্য দিচ্ছেন। একজন ফেরারি আসামির বক্তব্য মিডিয়ায় প্রচার হতে পারে না। যাকে আদালত খুঁজে পাচ্ছেন না, তার বক্তব্য প্রচারযোগ্য নয়।
পরদিন রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ তারেকের বক্তব্য প্রচার ও প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রুল জারি করেন।
রুলে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রকাশ ও প্রচার নিষিদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কেন বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। তথ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, পররাষ্ট্রসচিব, আইজিপি, বিটিভির মহাপরিচালক, বিটিআরসির চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে সেই দিন রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন (প্রয়াত), অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন, অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম (বর্তমানে মন্ত্রী), অ্যাডভোকেট এস এম মুনীর (বর্তমানে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল), অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম (তৎকালীন এমপি)।
সম্প্রতি এই রুল শুনানির জন্য উদ্যোগ নেয় রিটকারী পক্ষ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২৩
ইএস/এমজেএফ