ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

সিলেটে পরকীয়া প্রেমিকের মৃত্যুদণ্ড, প্রেমিকার যাবজ্জীবন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২৩
সিলেটে পরকীয়া প্রেমিকের মৃত্যুদণ্ড, প্রেমিকার যাবজ্জীবন

সিলেট: পরকীয়ার জেরে অগ্নিসংযোগে ছয়জন দগ্ধ হয়ে একজন নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার প্রধান আসামি আরশ আলীর (৪২) মৃত্যুদণ্ড ও তার প্রেমিকা রেহেনা বেগসের (৩০) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৪র্থ আদালতের বিচারক সায়লা শারমিন এ রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আরশ আলী সিলেটের বিশ্বনাথের অলংকারী ইউনিয়নের রহিমপুর (পূর্বপাড়া) গ্রামের মৃত হুসন আলীর ছেলে এবং রেহেনা বেগম একই গ্রামের ফরিদ মিয়ার স্ত্রী।

সিলেট জেলা জজ আদালতের পাকলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মামলার বরাত দিয়ে আদালত সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ২৮ আগস্ট দিনগত রাতে নিজ বসত ঘরে আগুনে দগ্ধ হন রহিমপুর পূর্বপাড়া গ্রামের ফারুক মিয়া ও স্ত্রী চম্পা বেগম, মেয়ে রিফা বেগম, ছেলে এমাদ উদ্দিন, ইমরান আহমদ ও নিজাম উদ্দিন।
আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চম্পা বেগম মারা যান।

এ ঘটনায় নিহত চম্পা বেগমের ভাই সফিক মিয়া বাদী হয়ে ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর অজ্ঞাত আসামি করে বিশ্বনাথ থানায় মামলা দায়ের (নং-২১(৯)’১৮ দায়ের করেন। তদন্তকালে পুলিশ নিশ্চিত হয় হত্যার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটানো হয়।

ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় প্রযুক্তির মাধ্যমে ভিকটিম ফারুক মিয়ার ছোট ভাই ফরিদ মিয়ার স্ত্রী ঘটনার মূল সন্দেহভাজন রেহেনা ও তার ভগ্নিপতি একই গ্রামের মৃত হুসনের ছেলে আরশ আলীর অবস্থান শনাক্ত করে পুলিশ।

পরে ওই বছরের ৫ অক্টোবর মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা থেকে রেহেনাকে ও ৯ অক্টোবর রাতে সিলেট নগরী থেকে আরশকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রেহেনা ও আরশ ঘটনার দায় স্বীকার করেন।


পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ভিকটিম ফারুক মিয়ার সৎ বোনের স্বামী হচ্ছেন গ্রেপ্তার হওয়া আরশ আলী ও সৎ ভাইয়ের স্ত্রী রেহেনা। সেই সুবাদে ফারুক মিয়ার বাড়িতে রেহেনার ঘরে সব সময় যাওয়া করতেন ঘটনার মূলহোতা আরশ আলী। স্বামী ফরিদ মিয়া প্রবাসে থাকাবস্থায় রেহেনার সঙ্গে ২/৩ পুরুষের অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে রেহেনার সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলেন আরশ।

এরপর থেকে অবাধে রেহেনার সঙ্গে মেলামেশা করতে থাকেন আরশ। ঘটনার কিছু দিন আগে চান মিয়ার বসত ঘরের একটি কক্ষে অবৈধভাবে মেলামেশা করা অবস্থায় দেখে ফেলেন ভিকটিম চম্পা বেগম। এই অনৈতিক কর্মকাণ্ড দেখে তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না ফারুক মিয়া, তার স্ত্রী চম্পা বেগম, মেয়ে রিপা বেগম ও ছেলেরা।

বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার সালিশ বৈঠকও হলেও ফারুক মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি চরম ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন আরশ আলী ও রেহেনা বেগম।
তারা ফারুক মিয়ার পরিবারের ক্ষতি সাধন করার চেষ্টা করে ও বিভিন্ন সময়ে হুমকি প্রদান করে। একপর্যায়ে ফারুক মিয়ার ঘরে আগুন দেওয়ার পরিকল্পনা নেয় আরশ ও রেহেনা। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দুই দিন আগে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কামাল বাজারস্থ (আনন্দ বাজার) একটি দোকান থেকে ২ লিটার পেট্রল কিনে নেন আরশ আলী। ঘটনার রাতে আড়াইটার দিকে রেহেনা বেগমের দরজায় কড়া নাড়ে আরশ। এসময় ঘর থেকে বের হয়ে রেহেনা ও আরশ পরিকল্পনা অনুযায়ী ফারুক মিয়ার বসতঘরের দরজার ভাঙা অংশ দিয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং ঘটনার পর কয়েলের আগুন থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে বলে তারা (আরশ ও রেহেনা) লোকমুখে প্রচার করতে থাকে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মিজানুর রহমান ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় আরশ ও রেহেনাকে অভিযুক্ত করে ২০১৯ সালের ২৩ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। এরপর আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন ও দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ায় সাক্ষিদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আসামিদের বিরুদ্ধে এই সাজা ঘোষণা করেন বিচারক।

বাংলাদেশ সময়: ০০১২ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২৩
এনইউ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।