ঢাকা: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বুলিং বা র্যাগিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২৩ এর গেজেট সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিন মাসের মধ্যে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে জারি করা গেজেট আদালতে উপস্থাপনের পর সোমবার (১৪ আগস্ট) বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ সুয়োমোটো রুল এবং এক আইনজীবীর রিটে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে রায় দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে আইনজীবী আইনুন নাহার সিদ্দিকা, অনীক আর হক ও তানভীর আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান।
পরে আইনজীবী তানভীর আহমেদ বলেন, তিন মাসের মধ্যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ নীতিমালা পাঠাতে শিক্ষা সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর ছয় মাসের মধ্যে কাউন্সিলর নিয়োগ, কমিটি গঠন করে নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নীতিমালায় বুলিংয়ের জন্য ফৌজদারি শাস্তির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু নির্দিষ্ট করে শাস্তি নির্ধারণ করা হয়নি। আদালত মনে করেন-এখানে নির্দিষ্ট করে শাস্তি নির্ধারণ হওয়া উচিত।
বিবিসি বাংলায় ‘মোটা বলে সহপাঠী ও শিক্ষকের লাঞ্ছনার শিকার মৃত কিশোরের পরিবার যা বলছে’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ যুক্ত করেন আইনজীবী তানভীর আহমেদ। এ রিটে হাইকোর্টে রুল জারি করেন।
এছাড়া ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের ছাত্রী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনা নজরে আসার পর হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে বুলিং প্রতিরোধের উপায় নির্ণয় করে একটি জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন করার নির্দেশ দেন।
এ দুটি রুলের একসঙ্গে শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ কয়েকবার এ নীতিমালার খসড়া দাখিল করে। সর্বশেষ ২৯ জুন এ বিষয়ে প্রকাশিত গেজেট সোমবার হাইকোর্টে দাখিল করা হয়।
‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বুলিং (Bullying)/ র্যাগিং (Ragging) প্রতিরোধ সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২৩’ নীতিমালায় বলা হয়, মৌখিক বুলিং র্যাগিংয়ের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, কাউকে উদ্দেশ্য করে মানহানিকর/অপমানজনক এমন কিছু বলা বা লেখা, যা খারাপ কোনো কিছুর প্রতি ইঙ্গিত বহন করে- ইত্যাদিকে মৌখিক বুলিং বোঝাবে। যেমন-উপহাস করা, খারাপ নামে সম্বোধন করা বা ডাকা, অশালীন শব্দ ব্যবহার করা, গালিগালাজ করা, হুমকি দেওয়া, শারীরিক অসমর্থতাকে নিয়ে উপহাস করা বা অনুরূপ কার্যাদি।
শারীরিক বুলিং ও র্যাগিংয়ের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, কাউকে কোনো কিছু দিয়ে আঘাত করা, চড় মারা, শরীরে পানি বা রং ঢেলে দেওয়া, লাথি মারা, ধাক্কা মারা, খোঁচা দেওয়া, থুথু দেওয়া, বেঁধে রাখা কোনো বিশেষ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে/বসে বা বিশেষ অবস্থায় থাকতে নির্দেশ দেওয়া অথবা কোনো কিছু করতে বা না করতে বাধ্য করা, কারো কোনো জিনিসপত্র জোর করে নিয়ে যাওয়া বা ভেঙে ফেলা, মুখ বা হাত দিয়ে অশালীন বা অসৌজন্যমূলক অঙ্গভঙ্গি করা বা অনুরূপ কার্যাদি।
সামাজিক বুলিং ও র্যাগিংয়ের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, কারো সম্পর্কে গুজব ছড়ানো, প্রকাশ্যে কাউকে অপমান করা, ধর্ম, বর্ণ, জাতি, গোত্র, পেশা, গায়ের রং, অঞ্চল বা জাত তুলে কোনো কথা বলা বা অনুরূপ কার্যাদি।
সাইবার বুলিং-র্যাগিং সম্পর্কে বলা হয়েছে, কারো সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কটু কিছু লেখা বা ছবি বা অশালীন ব্যঙ্গাত্মক কিছু পোস্ট করে তাকে অপদস্থ করা বা অনুরূপ কার্যাদি।
সেক্সুয়াল বুলিং ও র্যাগিং সম্পর্কে বলা হয়েছে, ইচ্ছাকৃতভাবে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আপত্তিজনক স্পর্শ করা বা করার চেষ্টা করা, ইঙ্গিতবাহী চিহ্ন প্রদর্শন করা, আঁচড় দেওয়া, জামা-কাপড় খুলে নেওয়া বা খুলতে বাধ্য করা বা অনুরূপ কার্যাদি। এছাড়া এমন কর্ম, আচরণ, কার্যাদি যা অসম্মানজনক, অপমানজনক ও মানহানিকর এবং শারীরিক/মানসিক যাতনার কারণ হতে পারে, তা যে নামেই হোক না কেন, তা বুলিং ও র্যাগিং হিসেবে গণ্য হবে।
চূড়ান্ত নীতিমালায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধে কমিটি গঠন এবং কার্যপরিধি সম্পর্কে বলা হয়েছে, বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে ৩-৫ সদস্য বিশিষ্ট বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ কমিটি কমিটি গঠন করতে হবে। প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষ এক বা একাধিক কমিটি গঠন করতে পারবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আত্মহত্যা, বুলিং ও র্যাগিং সংক্রান্ত যে কোনো ধরনের ইনজুরি প্রতিরোধে বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ কমিটি সব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। শিক্ষা বছরের শুরুতেই কমিটি আবশ্যিকভাবে এবং পরে তিন মাস অন্তর শিক্ষার্থী এবং সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা/মতবিনিময় সভা/সেমিনার/সিম্পোজিয়াম/ওয়ার্কশপ আয়োজন করবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২৩
ইএস/এসআই