ঢাকা: বিবাহিত পুরুষ বা নারী বিয়ে বলবৎ থাকা অবস্থায় অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে তাকে পরকীয়া হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। পরকীয়া একটি সামাজিক ব্যাধির মতো মহামারি আকার ধারণ করেছে।
দেশের প্রচলিত আইনে এ ধরনের সম্পর্কে জাড়ানোকে ব্যভিচার হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী স্ত্রীর পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে আইনি প্রতিকার রয়েছে। তবে একইভাবে স্বামী যদি পরকীয়ার সম্পর্কে জড়ায় তখন তার বিরুদ্ধে আইনগত কোনো প্রতিকার নেওয়ার সুযোগ নেই।
ব্রিটিশ আমলে প্রণীত ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারা মোতাবেক স্ত্রী পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়লে আইনগত প্রতিকার রয়েছে।
এই ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি অপর কোনো ব্যক্তির স্ত্রী অথবা যাকে সে অন্য কোনো ব্যক্তির স্ত্রী বলে জানে বা তার অনুরূপ বিশ্বাস করার কারণ আছে এমন কোনো ব্যক্তির সম্মতি ও সমর্থন ছাড়া এরূপ যৌন সংগম করে যা নারী ধর্ষণের শামিল নয়, তবে সে ব্যক্তি ব্যভিচারের অপরাধের জন্য দোষী হবে।
এরূপ অপরাধের ক্ষেত্রে সাত বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। এক্ষেত্রে দুষ্কর্মের সহযোগী হিসেবে স্ত্রী দণ্ডিত হবে না। অর্থাৎ স্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যভিচার যেটি আমাদের সমাজে পরকীয়া হিসেবে পরিচিত, তার জন্য স্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে যার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছে, সেই ব্যক্তির এরূপ কাজ শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে। স্ত্রী যার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়াচ্ছে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার সুযোগ থাকলেও স্বামী পরকীয়ায় জড়ালে তার বিরুদ্ধে বা সে যার সঙ্গে সম্পর্কে জড়াচ্ছে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে নেই। পরকীয়ার ক্ষেত্রে আইনি প্রতিকারে এই বৈষম্য নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট বিচারাধীন আছে।
পরকীয়ার ক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপের সুযোগ না থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে নারীরা যৌতুক আইন বা নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করতে গিয়ে স্বামীর একাধিক সম্পর্ককে ঘটনার একটি প্রমাণ হিসেবে দ্বার করানোর চেষ্টা করেন। উভয় ক্ষেত্রে বিয়ের বাইরে সম্পর্কের জন্য শেষ পর্যন্ত অপরপক্ষ বিবাহ বিচ্ছেদের পথ বেছে নেন।
লেখক: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৩
এএটি