ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

পি কে হালদারের নামে ৩৬ মামলা, প্রথম রায় রোববার 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০২৩
পি কে হালদারের নামে ৩৬ মামলা, প্রথম রায় রোববার  পি কে হালদার

ঢাকা: ভারতের কারাগারে বন্দি গ্লোবাল ইসলামী (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল) ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে এ পর্যন্ত তিন ৩৬টির মতো মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে ৪২৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং তা পাচারের অভিযোগে প্রথম রায় হচ্ছে রোববার (০৮ অক্টোবর)।

 

এদিন ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে-১০ এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের আদালতে মামলার রায় ঘোষণার কথা রয়েছে।
এই মামলায় পি কে হালদারসহ মোট আসামি ১৪ জন। এর মধ্যে ৪ জন কারাগারে আছেন। তারা হলেন, অবন্তিকা বড়াল, শংখ বেপারী, সুকুমার মৃধা ও অনিন্দিতা মৃধা।

পি কে হালদারসহ বাকি ১০ আসামি পলাতক। পলাতক অন্য আসামিরা হলেন, পি কে হালদারের মা লিলাবতী হালদার, ভাই প্রিতিশ কুমার হালদার, সহযোগী অমিতাভ অধিকারী, পূর্ণিমা রানি হালদার, উত্তম কুমার মিস্ত্রি, রাজিব সোম, সুব্রত দাস, অনঙ্গ মোহন রায় ও স্বপন কুমার মিস্ত্রি।

আসামিদের বিরুদ্ধে ৪২৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৪ সালের দুদক আইনের ২৭(১) ধারায় এবং সেই সম্পদ পাচারের অভিযোগে ২০১২ সালের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২)(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। দুটি অভিযোগের মধ্যে দুদক আইনের ২৭(১) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর এবং মানিলন্ডারিং আইনের ৪(২) ধারায় সর্বোচ্চ ১২ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

রায়ের বিষয়ে দুদক কৌঁসলি মীর আহমেদ আলী সালাম বাংলানিউজকে বলেন, পি কে হালদারসহ আসামিদের বিরুদ্ধে ৬ হাজার ৮০ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য আমরা পেয়েছি। এছাড়া এক কোটি ১৭ লাখ কানাডিয়ান ডলার পাচারের অভিযোগ চার্জশিটে এসেছে। আর এই মামলায় তার বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুযায়ী সুনির্দিষ্টভাবে প্রায় ৪৭৬ কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং সেগুলো পাচার সংক্রান্ত দালিলিক সাক্ষ্য আমরা আদালতে উপস্থাপন করেছি। অভিযোগ প্রমাণে দুদকের পক্ষে ১১৪ জন সাক্ষী উপস্থাপন করা হয়েছে। আমরা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে তার বিরুদ্ধে আশা করছি আইন অনুযায়ী তাদের সর্বোচ্চ সাজা হবে।

এই মামলায় পি কে হালদার পলাতক থাকায় তার পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।

এর আগে ৪ অক্টোবর এই মামলায় দুদক ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। ওইদিন আদালত রায়ের জন্য ৮ অক্টোবর দিন ধার্য করেন। ২০ জুলাই এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। চার্জশিটভুক্ত ১০৬ জন সাক্ষী থাকলেও দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মোট ১১৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত। এরপর ২৬ জুলাই কারাগারে থাকা ৪ আসামি ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার চান। তবে পি কে হালদারসহ বাকিরা পলাতক থাকায় তারা আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য রাখেননি। এরপর মামলাটিতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য এই দিন ধার্য করা হয়।

মামলার বিবরণীতে জানা যায়, ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী।

মামলার এজাহারে বলা হয়, পি কে হালদার বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৫ টাকার অবৈধ সম্পদ নিজ দখলে রেখেছেন। যা দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ওই অপরাধলব্ধ আয়ের অবৈধ উৎস, প্রকৃতি, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ, উৎস গোপন বা আড়াল করতে স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তর করে মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধ করেছেন।
এরপর ২০২২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি মামলাটি তদন্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন। চার্জশিটে তার বিরুদ্ধে প্রায় ৪২৬ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া তিনি কানাডায় ১ কোটি ১৭ লাখ কানাডিয়ান ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮০ কোটি টাকা) পাচার করেছেন বলে তথ্য দেওয়া হয়। তদন্তকালে তার বিরুদ্ধে ৬ হাজার কোটি ৮০ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ পায় দুদক।

পি কে হালদার ২০০৮ সালে আইআইডিএফসির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে তিনি এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হন। ২০১৯ সালের ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় আলোচনায় আসেন তিনি।

২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান- পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেড, এফএএস ফাইন্যান্স এবং রিলায়েন্স ফাইন্যান্স থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন পি কে হালদার ও তার সহযোগীরা।

২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে রেড এলার্ট জারি করা হয়। তবে তার কয়েক ঘণ্টা আগে যশোরের বেনাপোল সীমান্ত হয়ে দেশ ছাড়েন তিনি। এরপর গত বছর ১৪ মে কলকাতায় গ্রেপ্তার হন তিনি। এখন তিনি সেখানেই বন্দি আছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০২৩
কেআই/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।