ঢাকা: প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় রমনা থানার মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
রোববার (২৯ অক্টোবর) রাতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে আদালতে পাঠানোর আদেশ দেন।
একটি আবেদনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে প্রথম শ্রেণির বন্দি হিসেবে ডিভিশন দেওয়ার আবেদন করেন তার আইনজীবী সৈয়দ জয়নাল আবেদীন মেজবাহ। আরেক আবেদনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে তার চিকিৎসার আর্জি জানানো হয়।
জামিন শুনানিকালে সৈয়দ জয়নাল আবেদীন মেজবাহ আদালতকে বলেন, আপনি জামিন দিতে পারবেন কি না, তা আমরা জানি। তাই আগেই দুটি আবেদন করছি। তাকে কারাগারে পাঠানো হলে যেন সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক এমপি হিসেবে ডিভিশন দেওয়া হয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
এ সময় ফখরুলের পক্ষে ওমর ফারুক ফারুকী, মহসীন মিঞা, মোসলেহ উদ্দিন জসীম প্রমুখ আইনজীবী জামিন শুনানি করেন। তারা বলেন, মির্জা ফখরুল এই মামলার ঘটনাস্থল থেকে প্রায় এক-দেড় কিলোমিটার দূরে সমাবেশের মঞ্চে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
আইনজীবীরা বলেন, তাকে মিথ্যা অভিযোগে হয়রানিমূলকভাবে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তিনি ৮১ বছর বয়সী একজন ব্যক্তি, বিএনপির দেশে অবস্থান করা সবচেয়ে বড় নেতা এবং একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ। তিনি বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন এবং যেকোনো শর্তে তাকে জামিন দেওয়া হলে তিনি পলাতক হবেন না।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মহানগর পিপি আব্দুল্লাহ আবু জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে বলেন, মির্জা ফখরুল এই আন্দোলনের মূল পরিকল্পনাকারী। তারা প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলাসহ পুলিশ হত্যা, গাড়িতে আগুন ও সাধারণ জনগণের জানমাল ক্ষয়ক্ষতি করেছেন। এক্ষেত্রে তার ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার প্রয়োজন নেই।
পিপি বলেন, ফখরুলের পূর্বপরিকল্পনা ও নির্দেশনাতেই এসব ঘটনা ঘটেছে। তিনি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মহলের ইন্ধনে গণতান্ত্রিকভাবে একটি নির্বাচিত সরকারকে অস্থিতিশীল করা এবং দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এসব ঘটনা ঘটিয়েছেন। তিনি এই ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না। তাই আমরা তার জামিনের বিরোধিতা করছি।
শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তবে তার পক্ষে করা ডিভিশনের আবেদন মঞ্জুর করেন এবং কারাবিধি অনুযায়ী যথাযথ চিকিৎসা দেওয়ার আদেশ দেন।
গোয়েন্দা পুলিশ রোববার সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে মির্জা ফখরুলকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে নিয়ে মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয় থেকে সিএমএম আদালতের উদ্দেশে রওয়ানা হয়। তাকে বহনকারী গাড়িটি রাত ৮টার দিকে সিএমএম আদালতে পৌঁছায়।
রাত ৯টার দিকে জামিন শুনানি শুরু হয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী শুনানি শেষে আদালত রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর পরপরই ফখরুলকে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গুলশানের বাসা থেকে আটক করে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ফখরুলের স্ত্রী রাহাত আরা বেগম বলেন, গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল বাসায় এসে সিসি ক্যামেরার ডিভাইস নিয়ে যায়। তার ১০ মিনিট পর বাসায় গিয়ে মির্জা ফখরুলকে আটক করে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে যায়। অসুস্থ একজন মানুষকে এভাবে তুলে নিয়ে যাওয়া মেনে নেওয়া যায় না।
বাংলাদেশ সময়: ০১০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২৩
কেআই/আরএইচ