ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

নাইকো দুর্নীতি মামলা: দুই বিদেশিকে জেরা করেনি খালেদার আইনজীবী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২৩
নাইকো দুর্নীতি মামলা: দুই বিদেশিকে জেরা করেনি খালেদার আইনজীবী

ঢাকা: নাইকো দুর্নীতি মামলায় রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের সদস্য কেবিন দুগ্গান ও লয়েড শোয়েপকে জেরা করতে অস্বীকৃতি জানান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবী। সোমবার (৩০ অক্টোবর) কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী ঢাকার নবম বিশেষ জজ শেখ হাফিজুর রহমানের আদালতে তাদের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়।

দুজনের মধ্যে মধ্যে কেবিন দুগ্গানের জবানবন্দি শেষ হলেও জেরা অসমাপ্ত রয়েছে। তার অসমাপ্ত জেরা ও পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আদালত মঙ্গলবার ফের দিন রেখেছেন।

তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জানিয়েছেন এই দুই সাক্ষীকে তারা জেরা করেননি। এর কারণ উল্লেখ করে আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, শুধু বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতেই এই দুজনকে সাক্ষী হিসেবে আনা হয়। এর আগে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস থেকে দুজন সাক্ষীর লিখিত বক্তব্য আদালতে জমা দেন। তবে সেই লিখিত বক্তব্যকে সমর্থন করে তারা কোনো বক্তব্য দেয়নি। এমনকি লিখিত বক্তব্যের কপি আদালতে উপস্থাপন করেননি। আমরা দেখলাম তারা আগে লিখিত বক্তব্যে যা বলেছিলেন আজকে আদালতে এসে সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন কথা বলেছেন।

তিনি আরও বলেন, আজকে রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেন পুলিশের দুই সদস্য বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কিছুই বলেননি। সরকার পক্ষ হয়তো চেষ্টা করেছিল এ দুজন সাক্ষীর মুখ থেকে বেগম খালেদা জিয়ার সম্পর্কে কোনো একটি মিথ্যা বক্তব্য আদায় করবে। এই সাক্ষী দুজনকে আমরা ধন্যবাদ জানাতে চাই যে, তারা বেগম খালেদা জিয়ার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এ ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবে তিনি জড়িত এরকম কোনো অভিযোগ তারা বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করেননি। যেহেতু বেগম খালেদা জিয়ার সম্পর্কে কোনো বক্তব্য দেননি বা তার নামই উচ্চারণ করেননি বা তার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নামই উচ্চারণ করেননি সে কারণে আমরা বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে আমরা জেরা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছি। আমরা তাদের জেরা করার প্রয়োজন বোধ করিনি।

গত ১৯ অক্টোবর তাদেরকে সাক্ষ্য দিতে সমন জারি করেন একই আদালত।  

এর আগে গত ১২ সেপ্টেম্বর মামলার বাদী মাহবুবুল আলম তার জবানবন্দি শেষ করেন। এরপর আসামি গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ও সেলিম ভূঁইয়ার পক্ষে তাদের আইনজীবী তাকে জেরা শেষ করেন। এরপর থেকে খালেদা জিয়ার পক্ষে জেরা করেন তার আইনজীবী, যা শেষ হয় গত ১৭ অক্টোবর।  

গত ১৯ মার্চ এই মামলায় চার্জগঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। এরপর গত ২৩ মে আদালতে সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী দুদকের তৎকালীন সহকারি পরিচালক মাহবুবুল আলম। তবে মামলার চার্জগঠনের বৈধতা প্রশ্নে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া তাই ২২ আগস্ট এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। গত ৩০ আগস্ট বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ সেই আবেদন খারিজ করে দেন।

অপর আসামিরা হলেন- তৎকালীন মুখ্য সচিব কামাল উদ্দীন সিদ্দিকী,বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সিএম ইউসুফ হোসাইন, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ও বাগেরহাটের সাবেক সংসদ সদস্য এমএএইচ সেলিম। এদের মধ্য প্রথম তিনজন পলাতক রয়েছেন।

অপরদিকে আসামিদের মধ্যে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন ও বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান মারা যাওয়ায় তাদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় খালেদা জিয়ার নামে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তদন্তের পর ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়।

দুদকের করা অপর দুই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রাখা হয়। সেখান থেকে পরে চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায়ই সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান। বর্তমানে তিনি নিজ বাসায়ই চিকিৎসাধীন।

বাংলাদেশ সময়: ২২২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২৩

কেআই/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।