ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

কাঠগড়ায় আসামিকে চড় মারলেন কনস্টেবল!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২৩
কাঠগড়ায় আসামিকে চড় মারলেন কনস্টেবল!

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কাঠগড়ায় আবদুল্লাহ আল মামুন নামে এক আসামিকে চড় মারার অভিযোগ উঠেছে এক পুলিশ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে। আরও অভিযোগ উঠেছে, এ আদালতের বিচারক নুসরাত জামানের নির্দেশেই তাকে চড় মারা হয়েছে।

এনিয়ে আদালত ও পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে নানা সমালোচনা চলছে। আইনজীবীরাও নুসরাত জামানের আদালত বর্জন করেছেন। একই সঙ্গে তাকে লক্ষ্মীপুর থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন আইনজীবীরা।  

ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর)। বুধবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে লক্ষ্মীপুর কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মুকুল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত জামান মামলার শুনানির পর মামুন নামে এক আসামিকে এজলাসে ডেকে নেন। পরে পুলিশের এক কনস্টেবলকে বলেন, ওই আসামিকে দুটি চড় মারতে। ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে কনস্টেবল আসামিকে চড় মারেন। মামুনও পুলিশের একজন সদস্য। এ ঘটনায় একটি প্রতিবেদন জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।  

এদিকে এ বিষয়ে মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) আইনগত সমাধান পেতে ভুক্তভোগী আবদুল্লাহ আল মামুন চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। একই সঙ্গে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছেও অভিযোগ করেন তিনি। মামুন চট্টগ্রামের মিরসরাই থানার মোবারকঘোনা গ্রামের সামছুল হকের ছেলে।

অভিযোগে আবদুল্লাহ আল মামুন উল্লেখ করেন, স্ত্রী সুমাইয়া সুলতানা বাদী হয়ে তার (মামুন) নামে লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যৌতুকের মামলা (সিআর ৭৫/২০২৩) করেছেন। মামলাটি সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩ নম্বর আদালতে বিচারাধীন। মঙ্গলবার সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য ছিল। বাদীপক্ষ দুজন সাক্ষী আদালতে উপস্থাপন করে। সাক্ষীর জেরা শেষে মামুন এজলাস থেকে বের হয়ে বারান্দায় যান। এসময় তাকে সুমাইয়া ও তার মা পারুল বেগম মারধর করেন। বিষয়টি তিনি আদালতের বিচারক নুসরাত জামানকে জানান। কিন্তু বিচারক তার কথা না শুনে তাকে কাঠগড়ায় ডেকে নেন। পরে বিচারক পুলিশ কনস্টেবল কবিরকে নির্দেশ দেন, মামুনকে দুটি চড় মারতে। বিচারকের নির্দেশে বিচারপ্রার্থী জনগণের সামনেই কনস্টেবল কবির তাকে দুটি চড় মারেন। এসময় তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়। বিচারক তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, পুলিশ দিয়ে চড় দিইয়েছি, এখন আমি নিজে তোকে চড় মারব। পরে বিচারকের নির্দেশে মামুনকে জেলহাজতে নিয়ে যাওয়া হয়।  

মামুনের আইনজীবী আবদুর রহিম রাজু বলেন, এজলাসে এমন ঘটনা আইন সম্মত নয়। এ ঘটনায় আইনজীবী সমিতি সাধারণ সভা করেছে। বিকেলে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সঙ্গে সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক  বসেন। প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে- নুসরাত জামানের আদালতে কোনো আইনজীবী যাবেন না। তাকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন আইনজীবীরা।  

লক্ষ্মীপুর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এমরান হোসেন ফয়সাল সাংবাদিকদের বলেন, লিখিত অভিযোগের বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি বাইরে আছি। এ বিষয়ে এখন বিস্তারিত বলতে পারব না।

জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মাহমুদ বলেন, ঘটনাটি নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে সভা করেছি। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারকের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২৩
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।