মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের আলোচিত কলেজছাত্র রেজাউল করিম নাঈম হত্যা মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত পলাতক আসামিদের মধ্যে এ পর্যন্ত ছয় আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। তবে ঘটনার পরদিন সকালেই সোহান মিয়া নামে এক আসামিকে আটক করে পুলিশ।
সোমবার (২০ নভেম্বর) দুপুরে মৌলভীবাজার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পুলিশ পরিদর্শক মো. ইউনুছ মিয়া পাঁচ আসামির আত্মসমর্পণের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আদালত চলাকালে ওই পাঁচ আসামি আত্মসমপর্ণ করে জামিন চাইলে আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করেছেন। গত রোববার সকালে মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঁচ আসামি আত্মসমর্পণ করেন বলে জানান তিনি।
আত্মসমর্পণের পর আসামিরা আদালতে জামিনের আবেদন করলে আদালত তাদের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আত্মসমর্পণ করা আসামিরা হলেন- মূলহোতা বর্ষিজোড়া এলাকার নুরুল ইসলাম, তার ছেলে রনি মিয়া, ভাতিজা আনোয়ার হোসেন, নাতি সোহান মিয়া ও ইমন মিয়া।
এর আগে গত ১৫ নভেম্বর আদালতে আত্মসমপর্ণ করেন ওই মামলার এজাহারভুক্ত ৭ নম্বর আসামি আলামীন মিয়া।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এ মামলায় এ পর্যন্ত কারাগারে পাঠানো হয়েছে সাত আসামিকে।
আলোচিত ওই হত্যাকাণ্ডে মৌলভীবাজার মডেল থানায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল রেজা জানান, আসামিদের খোঁজে তাদের আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি এমন কী প্রধান আসামি নুরুল ইসলামের শ্বশুর বাড়িতেও খোঁজ নেওয়া হয়েছে। তাদের ব্যবহৃত ফোন বন্ধ থাকায় কোথাও তাদের পাওয়া যায়নি। আসামিরা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন সেজন্য নুরুল ইসলামের পাসপোর্টের নম্বরও সংগ্রহ করেছি। সব মিলিয়ে পুলিশ জেলার বিভিন্ন জায়গায় তাদের খোঁজে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়েছে।
পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, আসামিরা আত্মসমর্পণ করার পর গত ১৯ নভেম্বর রাতেই তদন্তের জন্য তাদের জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন চাওয়া হয়েছে। আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুর হলে আশা করি জিজ্ঞাসাবাদেই বেরিয়ে আসবে ঘটনার প্রকৃত রহস্য।
এদিকে জেলাজুড়ে তোলপাড় করা এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে মৌলভীবাজার শহরের বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধনসহ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে আসছিল।
উল্লেখ্য, গত ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় নিজ বাসায় বাবা-মা ও বোনের সামনে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের বর্ষিজোড়া গ্রামে মো. চেরাগ মিয়ার সঙ্গে প্রতিবেশী নুরুল ইসলামের কথিত ফেসবুক আইডি নিয়ে বাগবিতণ্ডা হয়। এসময় নুরুল ইসলাম দাবি করেন তার ছবি ব্যবহার করে চেরাগ মিয়া ফেক আইডি চালাচ্ছেন। মূলত ওই ঘটনার জেরেই নুরুল ইসলাম নাঈমের বাবা-মাকে গালাগালি ও মারধর শুরু করেন। এক পর্যায়ে চেরাগ মিয়ার কলেজ পড়ুয়া ছেলে রেজাউল করিম নাঈম ঘটনা থামাতে এগিয়ে এলে তাকেও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে গুরুতর আহত করে নুরুল ইসলাম, তার ছেলে রনি মিয়াসহ সহযোগীরা। এতে নিজ বাড়িতেই নাঈমের রক্তক্ষরণ শুরু হলে নাঈমের বাবা-মা তাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে ওইদিন ভোরে তার মৃত্যু হয়।
পরিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে পরিবারে সবার বড় নাঈম। সে এ বছর মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছে। ঘটনার দুদিন পর ৯ নভেম্বর নিহত রেজাউল করিম নাঈমের বাবা মো. চেরাগ মিয়া বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ ও আজ্ঞাতনামা আরো ৪ থেকে ৫ জনের নামে মৌলভীবাজার মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। তবে ঘটনার পর থেকেই মূলহোতা নুরুল ইসলামসহ অন্য আসামিরা গা ঢাকা দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২৩
বিবিবি/আরবি