ঢাকা: যশোরে বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার যুবদলের এক নেতাকে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে তাকে ১০ দিনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (৪ ডিসেম্বর) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী।
ওই যুবদল নেতাকে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন গত ২৯ নভেম্বর হাইকোর্টের নজরে আনা হয়। আদালতে প্রতিবেদনটি নজরে আনেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী। তিনি আদালতের কাছে সুয়োমোটো (স্বতঃপ্রণোদিত) আদেশ প্রার্থনা করেন।
তখন হাইকোর্ট বলেছিলেন, ‘জঙ্গি সম্পৃক্ততাসহ হিনিয়াস ক্রাইমের (জঘন্য অপরাধের) ক্ষেত্রে সাধারণত অপরাধীকে ডাণ্ডাবেড়ি পরানো হয়। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের একাধিক সিদ্ধান্তও রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডাণ্ডাবেড়ি পরানো যাবে, সে বিষয়ে গাইডলাইন আছে। ’
তবে আদালত বলেন, এ বিষয়ে সুয়োমোটো আদেশ দেব না। চাইলে রিট নিয়ে আসতে পারেন। এরপর তার স্ত্রী রিট করেন।
প্রকাশিত খবরে বলা হয়, যশোরে বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার যুবদলের এক নেতাকে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পেশায় কলেজশিক্ষক ওই যুবদল নেতা কারাগারে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। খাওয়ার সময়ও হাতকড়া খোলা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তার স্বজনরা।
ভুক্তভোগী আমিনুর রহমান মধু যশোর জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি। তিনি সদর উপজেলার আমদাবাদ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক ও বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডাণ্ডাবেড়ি পরা আমিনুর রহমান মধুর ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এরপর থেকেই তার সঙ্গে এমন আচরণের সমালোচনা চলছে। বিএনপি নেতারা এটিকে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছেন।
কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, নিরাপত্তার স্বার্থে কারাবিধি অনুযায়ী ডাণ্ডাবেড়ি পরানো হয়। এখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো বিষয় নেই। যদি কোনো আসামি অসুস্থ হন তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
গত ২ নভেম্বর সদর উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের আমদাবাদ গ্রাম থেকে পুলিশ তাকে আটক করে। এরপর গেল ১২ নভেম্বর যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা অবস্থায় আমিনুর রহমান মধু হৃদরোগে আক্রান্ত হন। কারাগার থেকে তার দুই পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি ও হাতকড়া লাগিয়ে প্রথমে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ওই রাতেই তাকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। পরদিন কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।
আমিনুর রহমান মধুর দুই পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে ও ডান হাতে হাতকড়া লাগানো অবস্থায় হাসপাতালের মেঝেতে রেখে তার চিকিৎসা দেওয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তার শরীরে ডাণ্ডাবেড়ি এবং হাতকড়া এমনভাবে লাগানো এতে তিনি সামান্য নড়েচড়ে বসার সুযোগ পাচ্ছেন না।
বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০২৩
ইএস/আরবি