ঢাকা: রাজধানীর বাড্ডার সাতারকুলে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খতনা করার পর চিকিৎসাধীন অবস্থা মারা যাওয়ার শিশু আয়ানের বিষয়ে প্রতিবেদন হলফনামা করে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রোববার (২৮ জানুয়ারি) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দিতে ১৫ জানুয়ারি নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে রুলে আয়ানের পরিবারকে কেন পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।
এ আদেশ অনুসারে, অধিদপ্তরে উপ-পরিচালক ডা. পরিমল কুমার পালের সই করা ১৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর আদালত হলফনামা আকারে দাখিল করতে বলেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহজাহান আকন্দ মাসুম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় জানান, হলফনামা করে সোমবার (২৯ জানুয়ারি) প্রতিবেদন দাখিল করবো।
শিশু আয়ানের মৃত্যুর পর পত্রিকায় আসা খবরের ভিত্তিতে অভিযোগ তদন্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি কমিটি গঠন করে। কমিটির সভাপতি হলেন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পেডিয়াট্রিক সার্জারির বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শাদরুল আলম। সদস্যরা হলেন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. সত্যজিত কুমার সাহা, অ্যানেস্থেসিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. আনিছুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ও কমিটির সদস্য সচিব ডা. মো. আলী হাসান।
তদন্তে যেসব বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, সেগুলো:
শিশু আয়ানের বাবা শামীম আহমেদের লিখিত ও মৌখিক বক্তব্য, বাড্ডায় আয়ানের খতনা করার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার লিখিত ও মৌখিক বক্তব্য, গুলশানে আয়ানের চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার লিখিত ও মৌখিক বক্তব্য নেওয়া হয়।
ঘটনার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩১ ডিসেম্বর বাড্ডার সাতারকুলে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খতনা করাতে আয়ানের বাবা নিয়ে আসেন এবং সুন্নতে খতনা করান। সেখানে আয়ানের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। পরে ওইদিনই ইউনাইটেড হাসপাতাল লিমিটেডের গুলশান-২ এর পাঠায় আয়ানকে। ৭ জানুয়ারি গুলশান-২ ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়। ৮ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্মারকমূলে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সাত কর্মদিবসের মধ্যে মতামতসহ প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য নির্দেশ দেন।
প্রতিবেদনের মতামত অংশে চিকিৎিসা ও ওষুধ সংক্রান্ত কিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। আর শেষাংশে বলা হয়, ‘সুন্নতে খতনা অপারেশনে স্বাভাবিক রক্তপাত হয়েছে বলিয়া ধারণা হয়। ’
সুপারিশ অংশে বলা হয়, হাসপাতালে একাধিক অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া। রোগী ও এর আত্মীয়-স্বজনকে অ্যানেস্থেসিয়া ও অপারেশনের ঝুঁকিগুলো ভালোভাবে অবহিত করা। হাসপাতালে আইসিইউ ব্যবস্থা রাখা। সরকারের অনুমোদনের পরে হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করা।
৯ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম।
১৫ জানুয়ারি আইনজীবী শাহজাহান আকন্দ মাসুম জানিয়েছিলেন, সারা দেশে লাইসেন্স ও অনুমোদনহীন কতগুলো হাসপাতাল আছে। তার তালিকা এক মাসের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে (স্বাস্থ্যসেবা) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এছাড়া ১৫ বছরে চিকিৎসায় অবহেলার কারণে কতজনের মৃত্যু হয়েছে, সেই বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তিন মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতেও বলা হয়েছে।
৩১ ডিসেম্বর সুন্নতে খতনা করানোর জন্য আয়ানকে বাড্ডার সাতারকুল এলাকার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় অভিভাবকরা। খতনার পর আয়ানের জ্ঞান না ফেরায় তাকে সেখান থেকে পাঠানো হয় গুলশান-২ এর ইউনাইটেড হাসপাতালে। সেখানে পিআইসিইউতে (শিশু নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। এর সাতদিন পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২৪
ইএস/এএটি