ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

৩ মেয়েকে বাংলাদেশি বাবা-জাপানি মায়ের কাছে ভাগাভাগি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৪
৩ মেয়েকে বাংলাদেশি বাবা-জাপানি মায়ের কাছে ভাগাভাগি

ঢাকা: জাপানি মা ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বাবার তিন সন্তানকে ভাগাভাগি করে দিলেন হাইকোর্ট। এরমধ্যে জাপানে থাকা ছোট মেয়ে এবং বাংলাদেশে থাকা বড় মেয়ে মায়ের কাছে থাকবে।

আর বাংলাদেশে থাকা মেজো মেয়ে বাবার কাছে থাকবে। তবে তিন সন্তানকে বাবা-মা যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে দেখতে পারবেন।

মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে বাবা ইমরান শরীফের করা আপিল আংশিক মঞ্জুর করে রায় দেন বিচারপতি মামনুন রহমানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ।

আদালতে ইমরান শরীফের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার আখতার ইমাম, ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম, ব্যারিস্টার রেশাদ ইমাম ও নাসিমা আক্তার লাভলী।

এরিকো নাকানোর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কেসি ও আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

এরিকোর আইনজীবী শিশির মনিরের তথ্যমতে, ২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানি নাগরিক ডা. এরিকো নাকানো ও বাংলাদেশি আমেরিকান নাগরিক ইমরান শরীফ জাপানি আইনানুসারে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিনজন সন্তান জন্ম নেয়।

তারা হলো জেসমিন মালিকা, লাইলা লিনা ও সানিয়া হেনা। তিন মেয়ে টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের (এএসজেআই) শিক্ষার্থী ছিল।

২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি ইমরান তার স্ত্রী এরিকোর সঙ্গে ডিভোর্স আবেদন করেন। এরপর ২১ জানুয়ারি ইমরান স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু তাতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ তার প্রস্তাব নাকচ করে। পরে স্কুলবাসে বাড়ি ফেরার পথে বাস স্টপেজ থেকে ইমরান তাদের বড় দুই মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।

ওই ঘটনার চারদিন পর ২৫ জানুয়ারি ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছে সন্তানদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো তা প্রত্যাখ্যান করেন। এরমধ্যে ২৮ জানুয়ারি এরিকো টোকিওর পারিবারিক আদালতে তার সন্তানদের জিম্মার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চেয়ে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক সাক্ষাতের আদেশ দেন। ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়ের সাক্ষাতের সুযোগ দেন।

এদিকে, একই বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন পাসপোর্ট নেন। পরে ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি দুই মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। পরে ছোট মেয়ে সানিয়া হেনাকে মায়ের কাছে রেখে ১৮ জুলাই এরিকো শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন।

তিনি ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করলে তাদের সমঝোতায় আসতে বলেন উচ্চ আদালত। কিন্তু ওই দম্পতি সমঝোতায় না আসায় কয়েক মাস ধরে শুনানির পর হাইকোর্ট একই সালের ২১ নভেম্বর দুই সন্তানকে বাবার হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত দেন। পাশাপাশি মা যাতে সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে বাবাকে খরচ দিতে বলা হয়।

হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন শিশুদের মা নাকানো এরিকো। পরে গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি দুই মেয়ে কার জিম্মায় থাকবে, তার নিষ্পত্তি হবে পারিবারিক আদালতে হবে এবং তার আগ পর্যন্ত দুই শিশু তাদের মায়ের কাছেই থাকবে বলে সিদ্ধান্ত দেন আপিল বিভাগ। তাই আপিল বিভাগ থেকে মামলাটি পারিবারিক আদালতে আসে।

শুনানি শেষে ২০২৩ সালের ২৯ জানুয়ারি ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান শিশুদের জিম্মা চেয়ে বাবা ইমরান শরীফের মামলা খারিজ করে রায় দেন। সেই রায়ের বিরুদ্ধে পরদিন ইমরান শরিফ আপিল করেন জেলা জজ আদালতে। এরপর জজ আদালতেও ইমরান শরীফের আবেদন খারিজ করে দেন। তারপর তিনি হাইকোর্টে রিভিশন করেন। মঙ্গলবার সে রিভিশন আংশিক মঞ্জুর করে রায় দেন।

রায়ের পর শিশির মনির বলেন, তাদের তিনজন মেয়ে সন্তান আছে। তারমধ্যে প্রথম জন জেসমিন ও ছোটজন সোনিয়া মায়ের কাছে থাকবে। যেকোনো স্থানে যেকোনো সময় আনা নেওয়া যাবে। দ্বিতীয় সন্তান লায়লা বাবার কাছে থাকবে। তিন সন্তানের সঙ্গে বাবা মা যেকোনো সময়ে দেখা করতে পারবেন।

তবে দুই পক্ষও আপিল করার কথা জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন: জাপানি দুই শিশুর বাবার আপিল শুনানি ২৪ মে

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৪
ইএস/এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।