ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

পিলখানা হত্যার ১৫ বছরেও শেষ হয়নি বিস্ফোরক মামলার বিচার 

খাদেমুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৪
পিলখানা হত্যার ১৫ বছরেও শেষ হয়নি বিস্ফোরক মামলার বিচার 

ঢাকা: পিলখানা ট্রাজেডির ১৫ বছর পূর্ণ হলো রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি)। দীর্ঘ এ সময়েও শেষ হয়নি দায়ের হওয়া মামলার বিচার প্রক্রিয়া।

হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের পর হাইকোর্টেও আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানি হয়েছে। তবে বিস্ফোরক মামলা আটকে আছে সাক্ষ্যগ্রহণেই।  

এ বছরই সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হবে বলে আশা করছে রাষ্ট্রপক্ষ। আর আসামিপক্ষ বলছে, বিস্ফোরক মামলার বিচারে বিলম্বের কারণে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে কয়েকশ আসামির পরিবার। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন আসামির মৃত্যু হয়েছে কারাগারেই।  

বকশীবাজার আলিয়া মাদরাসা ময়দানে স্থাপিত ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. আছাদুজ্জামানের আদালতে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছিল। তবে তিনি অবসরে যাওয়ায় তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন বিচারক মোহাম্মদ আসসামস জগলুল হোসেন। তার আদালতেই হবে পরবর্তী বিচারকাজ। রাষ্ট্রপক্ষের এক হাজার ৩৪৫ জন সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন ২৭৩ জন। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২৮ ও ২৯ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য রয়েছে।

জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) বিদ্রোহী জওয়ানরা সংস্থাটির সদরদপ্তর রাজধানীর পিলখানায় নারকীয় তাণ্ডব চালান। তাদের হাতে প্রাণ হারান ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ ব্যক্তি।  

এ বিদ্রোহের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আরেকটি তদন্ত আদালত গঠন করা হয়। দুই কমিটির প্রতিবেদনে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার বিচার সেনা আইনে করার সুপারিশ করা হলেও উচ্চ আদালতের মতামতের পর সরকার প্রচলিত আইনেই এর বিচার করে।

বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় দুটি ফৌজদারি মামলা করা হয়। এর একটি ছিল হত্যা মামলা আর অন্যটি বিস্ফোরক আইনের মামলা। খুনের মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। এতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর ২৭৮ জন খালাস পান। ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর এ মামলায় হাইকোর্টের আপিলের রায়ও হয়ে যায়।

অন্যদিকে বিস্ফোরক মামলায় আসামি ৮৩৪ জন। হত্যা মামলার সঙ্গে এ মামলার বিচার কাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে শুধু হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। বিস্ফোরক মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করেনি। একপর্যায়ে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম একপ্রকার স্থগিত করে দেয় রাষ্ট্রপক্ষ, যে কারণে মামলাটির বিচারকাজ শেষ হতে বিলম্ব হয়।

আসামিপক্ষের অভিযোগ মামলাটি শেষ করতে রাষ্ট্রপক্ষ তৎপর নয়। আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, সাক্ষ্যগ্রহণের সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে। তবে সেটা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নয়। ২৭৮ জন আসামি এ ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলায় খালাস পান। এ ছাড়া স্বল্পমেয়াদে সাজা ভোগ করে আরও ১৯০ আসামি অপেক্ষা করছেন বিস্ফোরক মামলা নিষ্পত্তির জন্য। তাই আমরা চাই মামলাটি দ্রুত শেষ হোক।  

তিনি আরও বলেন, ৪৬৮ জন আসামি মূল মামলায় খালাস বা সাজাভোগ করেও মুক্তি পাচ্ছে না। এমনকি জামিন নামঞ্জুরের আদেশও আমাদের সরবরাহ করা হচ্ছে না। তাই জামিন আবেদন নিয়ে আমরা হাইকোর্টেও যেতে পারছি না। তাই আমরা চাই হয় এসব আসামিকে জামিন দেয়া হোক অথবা মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করা হোক।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বাংলানিউজকে বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন আদালত বন্ধ ছিল। আদালত খোলার পর রাষ্ট্রপক্ষে আমরা নিয়মিত সাক্ষী হাজির করছি।  অভিযোগপত্রে এক হাজার ৩৪৫ জন সাক্ষী থাকলেও সবার সাক্ষ্য নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। আশা করছি গুরুত্বপূর্ণ ৪০০ জনের মতো সাক্ষ্য নেওয়া হলেই অভিযোগ প্রমাণ করা সম্ভব হবে। তাই যারা সাক্ষ্য দিতে আসবেন, তাদের জবানবন্দি নিয়েই বিচার শেষ করা হবে। আশা করছি এ বছরের মধ্যেই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৪
কেআই/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।