ঢাকা: সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ভোট গণনার সময় মারধরের ঘটনার তিনদিন পর তিন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে দুইজন আরেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এস আর সিদ্দিকী সাইফকে মারধরের মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।
সোমবার (১১ মার্চ) এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির আদেশে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর অনুবিভাগ।
অব্যাহতি পাওয়া তিনজন হলেন- সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জাকির হোসেন (মাসুদ), কাজী বশির আহমেদ ও শ্যামা আক্তার।
প্রজ্ঞাপনের ভাষ্যমতে, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মো. জাকির হোসেন, অ্যাডভোকেট কাজী বশির আহমেদ ও অ্যাডভোকেট শ্যামা আক্তারকে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে যথাক্রমে ২০১৭ সালের ১২ জুন, ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর এবং ২০১৯ সালের ৭ জুলাইয়ের নিয়োগ আদেশ বাতিলক্রমে তাদের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
প্রায় আট হাজার ভোটারের মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২০২৫ সেশনের দুই দিনব্যাপী নির্বাচনের প্রথমদিন (০৬ মার্চ) ভোট পড়েছিল তিন হাজার ২৬১টি। শেষদিন (০৭ মার্চ) পড়েছে দুই হাজার ৫৮ ভোট। সব মিলিয়ে ভোট পড়েছে পাঁচ হাজার ৩১৯টি।
শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার (০৮ মার্চ) ভোরে আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে হট্টগোল, বাদানুবাদ, ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, মিলনায়তনের ভেতরে কয়েকজন লোক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এস আর সিদ্দিকী সাইফকে মারধর করছেন। আর তিনি দৌড়ে মারধরের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন। পরে তিনিসহ আরও একজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ঘটনায় শুক্রবার মামলা করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এস আর সিদ্দিকী সাইফ।
শাহবাগ থানা করা মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- স্বতন্ত্র সম্পাদক প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথী, বিএনপি সমর্থিত সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট মো. জাকির হোসেন ওরফে মাসুদ, অ্যাডভোকেট শাকিলা রৌশন, অ্যাডভোকেট কাজী বশির আহম্মেদ, অ্যাডভোকেট উসমান, অ্যাডভোকেট আরিফ, অ্যাডভোকেট সুমন, অ্যাডভোকেট তুষার, রবিউল, ব্যারিস্টার চৌধুরী মৌসুমী ফাতেমা (কবিতা), সাইদুর রহমান জুয়েল, অলিউর, জয়দেব নন্দী, মাইন উদ্দিন রানা, মশিউর রহমান সুমন, ডা. কামাল হোসেন, আসলাম রাইয়ান, অ্যাডভোকেট তরিকুল ও অ্যাডভোকেট সোহাগ। এ ছাড়াও ৩০-৪০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা ১ নম্বর আসামির নির্দেশে এবং প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার সমিতির নীচ তলার শহিদ শফিউর রহমান মিলনায়তন রুমের দরজা ৩ নম্বর আসামি ১, ২, ও ৪ নম্বর আসামির পরামর্শক্রমে সু-কৌশলে ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে অডিটোরিয়ামের দরজা খুলে দেন। পরে তারা অস্ত্র হাতে জোরপূর্বক বেআইনি জনতাবদ্ধে অনধিকার প্রবেশ করে অকথ্য ভাষায় আমাকেসহ (ভুক্তভোগী এস আর সিদ্দিকী সাইফ) নির্বাচন সাব-কমিটির অন্যান্য সদস্যদের গালিগালাজ করেন। ৫ নম্বর আসামিদের হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে আমাকে হত্যার উদ্দেশে মাথার মাঝ বরাবর আঘাত করেন। তাতে আমি বাধা দিতে গেলে আমার বাম পাশের কানের উপরে মাথার অংশে সজোরে আঘাত লেগে মারাত্মকভাবে জখম হই। অন্যান্য আসামিরা কাঠের লাঠি, কাঠের ও প্লাস্টিকের চেয়ার দিয়ে অতর্কিতভাবে এলোপাথাড়ি মারধর করেন ও পা দিয়ে আঘাত করে আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করেন এবং আমার পরিহিত কাপড় ছিড়ে ফেলেন।
এ মামলার পর রুহুল কুদ্দুস কাজলস, কাজী বশির আহমেদসহ ছয়জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।
এদিকে ভোট গণনার পর ১৪টি পদের বিপরীতে সভাপতিসহ চারটি পদে বিজয়ী হয়েছে বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল। অপরদিকে সম্পাদকসহ ১০টি পদে বিজয়ী হয়েছে সরকার সমর্থিত বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ।
শনিবার (০৯ মার্চ) দিনগত রাতে ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করেন নির্বাচন পরিচালনা উপ কমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র অ্যাডভোকেট বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের (নীল প্যানেল হিসেবে পরিচিত) বিজয়ী প্রার্থীরা হচ্ছেন- সভাপতি পদে এ এম মাহবুব উদ্দিন (খোকন) এবং সদস্য পদে সৈয়দ ফজলে এলাহী, ফাতিমা আক্তার ও মো. শফিকুল ইসলাম শফিক।
বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ (সাদা প্যানেল হিসেবে পরিচিত) বিজয়ীরা হচ্ছেন, সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক, সহ-সভাপতি পদে রমজান আলী শিকদার ও দেওয়ান মো. আবু ওবাঈদ হোসেন সেতু, কোশাধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ নুরুল হুদা আনসারী, সহ-সম্পাদক পদে মো. হুমায়ুন কবির ও মোহাম্মদ হুমায়ন কবির।
সদস্য পদে বিজয়ীরা হচ্ছেন- মো. বেলাল হোসেন শাহীন, খালেদ মোশাররফ রিপন, মো. রায়হান রনি ও রাশেদুল হক খোকন।
বাংলাদেশ সময়: ১২১২ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২৪
ইএস/এফআর