ঢাকা: ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) উত্তরা মেট্রোরেল ডিপোতে অবস্থিত ৭৫৮০ বর্গফুট স্টাফ ক্যান্টিন পরিচালনার জন্য মাসিক এক হাজার টাকা ভাড়ায় চুক্তির বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবীর করা রিটের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সেতু বিভাগের সচিবকে বিষয়টি তদন্ত করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী তানভীর আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ।
গত ১৪ মার্চ ডিএমটিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (স্টোর ও প্রকিউরমেন্ট) মো. নজরুল ইসলামের সই করা একটি স্মারক খন্দকার এন্টারপ্রাইজকে দেওয়া হয়।
ওই স্মারকে বলা হয়, ভাড়া হিসাবে মাসিক এক হাজার টাকা হারে এক বছরের জন্য ভ্যাট ও আয়কর ব্যতীত সর্বমোট ১২ হাজার টাকা মূল্যে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের আওতায় পরিচালনাধীন এমআরটি লাইন-৬ এর উত্তরা ডিপোতে অবস্থিত ৭৫৮০ বর্গফুট স্টাফ ক্যান্টিন পরিচালনার উদ্দেশ্যে ১ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে দাখিলকৃত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খন্দকার এন্টারপ্রাইজের দরপত্রটি ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃক গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয়েছে।
এই নোটিশ জারি করার সাত দিনের মধ্যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে তিন বছরের জন্য চুক্তি সম্পাদন করতে সম্মত রয়েছেন মর্মে লিখিতভাবে জানানোর আহ্বান করা হয় ডিএমটিসিএলের বিজ্ঞপ্তিতে। এছাড়াও কার্য সম্পাদন জামানত হিসেবে তিন লাখ টাকা আগামী ২৮ মার্চ জমা দিতে বলা হয়।
আইনজীবী তানভীর আহমেদ বলেন, নোটিশ দেখার পর সংশ্লিষ্টদের লিগ্যাল নোটিশ দেই। কিন্তু তাতে ভ্রূক্ষেপ না করায় হাইকোর্টে রিট দায়ের করি। শুনানি শেষে কোর্ট রুল ইস্যু করেন। রুলে নোটিশটা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েছেন। এক মাসের মধ্যে ইনকোয়ারি করার জন্য এবং ইনকোয়ারি করে রিপোর্ট সাবমিট করার জন্য এক নম্বর বিবাদীকে নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এটা শুধু আমার কাছেই নয়, যে দেখবে তার কাছে অস্বাভাবিক মনে হবে, কারণ এটা একটা ছোটখাটো ফুটবল খেলার মাঠের মতো জায়গা। ঢাকার মতো জায়গায় এক হাজার টাকা ভাড়া! মেট্রোরেলের স্টাফ হয়তো দেড়শ হতে পারে। দেড়শ লোকের জন্য সাত হাজার ৫৮০ স্কয়ার ফিট এটা তো অস্বাভাবিক বলাওতো ভুল। এটা সুপার অস্বাভাবিক বলা যেতে পারে। এটা কীভাবে সম্ভব। এতো বড় জায়গায় দেওয়া হলো মাত্র এক হাজার টাকায়।
ভাড়ার বিষয়ে ডিএমটিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (স্টোর ও প্রকিউরমেন্ট) মো. নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এটা ওপেন টেন্ডার হয়েছে। টেন্ডারের মাধ্যমে এটা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এই সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
ভাড়ার বিষয়টি অসামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, চার মাস আগের ঘটনা এখন কেন জিজ্ঞাসা করছেন? সাড়ে ৭ হাজার নয়, ক্যান্টিনটি এক হাজার বর্গফুট দাবি করে তিনি বলেন, ডকুমেন্টস না দেখে কথা বলেন কেন!
মেট্রোরেলে ডিপোতে কর্মরত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডিপোতে তিন শিফটে কাজ হয়। গড়ে ১৫০ জনের মতো কর্মকর্তা-কর্মচারী ডিপোতে কাজে থাকেন। এছাড়া ডিপোতে কর্মীদের কর্মদক্ষতা উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মশালারও আয়োজন হয়ে থাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই ক্যান্টিনে খাবারের দাম কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে দেবে এবং ক্যান্টিনে রান্নাবান্নার কাজ করা যাবে না, কেটারিং সার্ভিস দিতে হবে এমন সব শর্তে কোনো ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ক্যান্টিনের দায়িত্ব নিতে আগ্রহী ছিল না। ফলে তৈরি হওয়ার পর দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও ক্যান্টিন চালু করা যায়নি।
মেট্রোরেল ডিপোতে সাড়ে ৭ হাজার বর্গফুট ক্যান্টিনের ভাড়া এক হাজার টাকা!
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২৪
ইএস/এসআইএস