ঢাকা: বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও লক্ষ্মীপুরে দুই শিক্ষার্থীকে হত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পৃথক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বরাবর তাদের বাবা পৃথক অভিযোগ করেন।
কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন জানান, বিগত ৮ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণঅভ্যুত্থানের এক দফা তথা ‘ফ্যাসিবাদি ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ৫৫ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় নাগরিক কমিটি আত্মপ্রকাশ করেছিল। জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রাথমিক কাজ হিসেবে ঘোষিত ৮ দফা কর্মসূচির দ্বিতীয় দফা তথা ‘ছাত্র-জনতার উপর সংঘঠিত নির্মম হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ করা’ এটি বাস্তবায়নে জাতীয় নাগরিক কমিটি ছাত্র- নাগরিকের অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারকে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা প্রদান শুরু করেছে। ছাত্র-নাগরিকের অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া দুইজন শহীদের পরিবার আজ জাতীয় নাগরিক কমিটির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেছেন। আমরা শহীদ পরিবারদের মামলা দায়ের প্রক্রিয়ায় আইনি সহায়তা প্রদান করেছি।
তিনি আরও জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে বিগত ১৮ জুলাই ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি চলাবস্থায় যাত্রাবাড়ি থানাধীন কুতুবখালী কাজলা পেট্রোল পাম্পের পাশের পকেট গেটে ফ্যাসিবাদের দোসরদের গুলিতে হত্যাকাণ্ডের শিকার দনিয়া কলেজের বিএ (পাস) কোর্সের ছাত্র শহীদ সাকিব হাসান ও বিগত ৪ আগস্ট লক্ষ্মীপুর শহরের উত্তর তেমুহনি এলাকায় গুলিতে হত্যাকাণ্ডের শিকার চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র শহীদ ওসমান পাটওয়ারী ওরফে ওসমান গণি হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে আজ জাতীয় নাগরিক কমিটির তত্ত্বাবধানে ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ এর ৩(২)(এ), ৩(২)(গ), ৩(২)(এইচ), ৪(১) এবং ৪(২) ধারা অনুযায়ী গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। শহীদ সাকিব হাসানের বাবা মো. মর্তুজা আলম এবং শহীদ ওসমান গণির বাবা মো. আব্দুর রহমান পৃথক অভিযোগ দুটি দায়ের করেছেন।
আখতার হোসেন আরও জানান, যেসব শহীদের পরিবার এখনো আইনি লড়াইয়ে যুক্ত হয়নি কিংবা বিভিন্ন কারণে মামলা দায়ের করতে পারেনি, তাদেরকে ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করতে আহ্বান জানায় জাতীয় নাগরিক কমিটি। আমরা মামলার তদন্তের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করবো এবং বিচার শুরু হওয়ার পর আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে শহীদ পরিবারকে আইনি প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা অব্যাহত রাখবো। এছাড়াও, এই অভ্যুত্থানে আহতদের পক্ষে মামলা দায়ের, পরিচালনা ও বিচার প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকার মাধ্যমে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করবে জাতীয় নাগরিক কমিটি।
কেবল জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত যোদ্ধাদেরই নয়; বিগত আওয়ামী ফ্যাসিবাদি আমলে নানা সময় যারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ও স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-মাদরাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেসব শিক্ষার্থী অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাদেরকে ন্যায়বিচার প্রাপ্তির লক্ষ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটি ‘প্রো-বোনো সার্ভিস’ তথা বিনামূল্যে আইনি সহায়তা প্রদান করবে। তবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অভ্যুত্থানের শহীদদেরকে প্রাথমিক সার্বিক আইনি সহায়তা প্রদান করবে। সেই লক্ষ্যে সাতজনকে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যভুক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন, মুস্তাফিজুর রহমান মুকুল, জহিরুল ইসলাম মুসা, মনজিলা ঝুমা, হুমায়রা নূর, সাকিল আহমাদ, ফাতিমা আক্তার (তাহসিন) ও প্রিয়াসী চাকমা।
আইনজীবী সাকিল আহমদ জানান, যাত্রাবাড়ীর ঘটনায় ৫ জনের নাম উল্লেখ করে শতাধিক অজ্ঞাত এবং ঘটনায় ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে শতাধিক অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে ভারতে অবস্থান করা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মোট ৩৪টি পৃথক অভিযোগ দায়ের করা হয়। এর মধ্যে ১৬টি চিফ প্রসিকিউটর বরাবর জমা দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলো তদন্ত সংস্থায় দাখিল করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০২৪
ইএস/এফএইচ/এমজে