পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার বলরামপুর তাঁতিপাড়া এলাকার স্কুলছাত্র আসাদুজ্জামান পায়েলকে (১৭) অপহরণের পর হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তিনজন আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে এই হত্যা মামলার রায় দেয় পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এসএম রেজাউল বারী।
এর আগে ২০১৫ সালের ২২ জুন দেবীগঞ্জ থানায় ওই তিনজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন পায়েলের বাবা সুলতান আলী।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের বলরামপুর তাঁতিপাড়া এলাকার মহির উদ্দিনের ছেলে নুরুজ্জামান (৩৮), দুদুমিয়ার ছেলে ফরহাদ হোসেন (৩০) ও রশিদুল ইসলামের ছেলে হাসানুল ইসলাম (৩২)। রায় শুনানির সময় আসামিদের মধ্যে ফরহাদ হোসেন উপস্থিত থাকলেও অন্যরা পলাতক রয়েছেন।
এদিকে মৃত্যুদণ্ডের খবর পেয়ে আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়েন আসামিদের স্বজনেরা। তবে বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এ রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলেও জানান আসামি পক্ষের আইনজীবীরা।
আদালত সূত্রে জানা যায়, তাঁতিপাড়া এলাকার স্কুল পড়ুয়া আসাদুজ্জামান পায়েল ২০১৫ সালের ১৮ জুন সন্ধ্যায় বাড়ির পাশের দেউনিয়া বাজারে হালখাতা খাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায়। পরে তার বাবা সুলতান আলী ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরে ছেলেকে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পরদিন ছেলের মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে তিন দিনের মধ্যে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। এ ঘটনায় ২০ জুন সুলতানের ভাই মহির উদ্দিন দেবীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
পরে ২২ জুন ভোরে সুলতান বাড়ির পাশের একটি পাটক্ষেতে প্রকৃতি ডাক সাড়া দিতে এলে ক্ষেতের আলে বসা ফরহাদ ও রশিদুলকে দেখে তার সন্দেহ হয়। তিনি বিষয়টি স্থানীয়দের জানালে নুরুজ্জামান, ফরহাদ ও রশিদুলকে আটক করে থানা পুলিশকে খবর দেন তারা। এক পর্যায়ে আটকরা হত্যার কথা স্বীকার করে বলেন, পায়েলকে অপহরণ করে দেউনিয়া বাজার থেকে ১ কিলোমিটার পশ্চিমে সোনা মিয়ার পাটক্ষেতে নিয়ে ফরহাদ ও রশিদুলের সহযোগিতায় শ্বাসরোধ করে হত্যার পর আকবর আলী নামের এক ব্যক্তির পুকুরে বস্তাবন্দি করে ফেলে রাখা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্য মতে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
একই দেবীগঞ্জ থানায় আটক তিনজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন পায়েলের বাবা সুলতান আলী। এই মামলায় ২০১৫ সালের ৩১ আগস্ট ওই তিনজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দায়ের করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দেবীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাইদুল ইসলাম। এরপর দীর্ঘ ৯ বছর বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের পর সোমবার আদালত এই দণ্ডাদেশ দেন।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে অপরাধ প্রমাণিত করতে সক্ষম হওয়ায় আদালত ওই তিন আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।
মামলায় বাদী পক্ষের আইনজীবী এবিএম জুলফিকার আলী নয়ন বলেন, আমরা আদালতে চাঞ্চল্যকর পায়েল হত্যার অপরাধ প্রমাণ করতে পেরেছি। আদালতের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।
এদিকে মামলার আসামি পক্ষের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ বলেন, আদালতের এই রায়ে আমরা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করছি। আমরা উচ্চ আদালতে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২৪
এসএম