ঢাকা: তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশের সংবিধানকে পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়েছে। অনির্দিষ্টকাল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য তৎকালীন সরকার ওই সংশোধনী এনেছিল বলে মন্তব্য করেছে রিটকারী পক্ষ।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) দশম দিনের শুনানিতে এমন মন্তব্য করেন রিট আবেদনকারীদের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চে এ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে রুল শুনানি অব্যাহত রয়েছে। আদালত আগামী রোববার শুনানির পরবর্তী দিন রেখেছেন।
আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া।
ইন্টারভেনার (রুল সমর্থন করে সহায়তাকারী) হিসেবে যুক্ত আইনজীবী মোস্তফা আসগর শরিফীও শুনানি করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন ও তানিম খান উপস্থিত ছিলেন।
২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয় এবং রাষ্ট্রপতি ২০১১ সালের ৩ জুলাই তাতে অনুমোদন দেন। ওই সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়; সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল এবং রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয়।
এ সংশোধনী বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি। গত ১৯ আগস্ট হাইকোর্ট রুল জারি করেন। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে। পরে এ রুল সমর্থন করে সহায়তাকারী (ইন্টারভেনার) হিসেবে যুক্ত হন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অনেকে।
বৃহস্পতিবার অন্যতম রিট আবেদনকারী বদিউল আলম মজুমদার শুনানির সময় উপস্থিত ছিলেন।
সমাপনী বক্তব্যে আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীতে একই সঙ্গে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ও ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়টি রাখা হয়েছে; যা পরস্পরবিরোধী ও সাংঘর্ষিক। এ নিয়ে সংবিধানে একটা জগাখিচুড়ি অবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছে। এ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে। পঞ্চদশ সংশোধনী আইনকে সংবিধানের একটি সম্পূর্ণ পুনর্লিখন হিসেবে বিবেচনা করা যায়। যে কারণে পঞ্চদশ সংশোধনীর কিছু অংশ সাংবিধানিক, কিছু অংশ অসাংবিধানিক ঘোষণার সুযোগ নেই। বরং পুরো সংশোধনী আইনটিই বাতিল হওয়া যুক্তিযুক্ত।
বাংলাদেশ সময়: ০১৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০২৪
ইএস/এসআই