ঢাকা: সাতষট্টি বছর পূর্ণ হওয়ায় সংবিধান অনুসারে অবসরে গেছেন আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) আপিল বিভাগের এক নম্বর কোর্টে তাকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেয় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও অ্যাটর্নি জেনারল কার্যালয়।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষে সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং অ্যাটর্নি জেনারল কার্যালয়ের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো.আসাদুজ্জামান তাকে সংবর্ধনা দেন।
এ সময় বক্তব্যে বিচারপতি সৈয়দ জিয়াউল মোহাম্মদ করিম বলেন, বিচার বিভাগের দুর্নীতির কালো মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে--এ অনাকাঙ্ক্ষিত অপপ্রচার আজকাল প্রায়শই আমাদের কানে আসে। বিচার ব্যবস্থায় কারো একক অধিকার নেই এবং কারো প্রয়াস একক প্রয়াসেও তা চলতে পারে না। সমষ্টিগত প্রয়াসের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার একমাত্র পূর্বশত। তাই বিচারক থেকে শুরু করে বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাই একে অপরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত হয়ে কাজ করতে হবে। '
তিনি বলেন, 'সুবিচার বা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে বিচারালয়ের সর্বনিম্ন কর্মকর্তা থেকে সর্বোচ্চ পদধারীকেও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। একজন বিচারক সুচিন্তিত মতামত প্রকাশের জন্য বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হলে তা প্রতিহত করতে এ অঙ্গনে যাদের কল্যাণকর পদচারনা তাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তা মোকাবিলা করতে হবে। '
বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম বলেন, ‘একটি পরিবারের গৃহকর্তা যেমন তার পরিবারের সকলকে একত্র রেখে রক্ষা করেন আবার শাসনও করেন ঠিক সেরকম ভাবে সিনিয়র বিচারকরাও পরিবারের অভিভাবকের মতো জুনিয়র বিচারকদের ভালোবাসবেন, স্নেহ করবেন, দিকনির্দেশনা দেবেন এটাই কাম্য। তাদের আগলে রেখে পথ দেখাতে হবে যাতে তারা সব প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করেন। তা না হলে বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত দু-একজনের পদস্খলনে পুরো বিচার ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। একবার যদি বিচার ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে তাহলে যেকোনো সময় অপশক্তি আমাদের দেশ ও সভ্য সমাজকে গ্রাস করবে। ’
বিচারিক জীবনের শেষ কর্ম দিবসে তিনি বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি আমরা যদি নিজ নিজ অবস্থানে থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করে যাই এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে কাজ করার দৃঢ় মানসিকতায় নিজেই নিজের কাছে শপথ নিই তাহলে আমরা অবশ্যই সুশাসন দ্বারা আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম দেশকে সোনার বাংলা'য় গড়তে পারবো। '
তিনি আরও বলেন, 'আজ বিদায় বেলায় আপনাদের কাছে আমার সর্নিবদ্ধ অনুরোধ, আমরা যেন এমন কিছু না করি যাতে সুবিচারের প্রতীক এই শ্বেত-শুভ্র অট্টালিকার গায়ে বিন্দুমাত্র কালিমা লাগে এবং আমাদের মনে বেজে না ওঠে 'মা, তোর বদনখানি মলিন হলে ওমা আমি নয়ন জলে ভাসি। '
বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম রসায়নে স্নাতক,আইনে এলএলবি ও এলএলএম ডিগ্রি এবং পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি জেলা আদালতে, ১৯৮৮ সালে হাইকোর্ট বিভাগে এবং ১৯৯৬ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ২০০৪ সালের ২৩ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি এবং দুই বছর পরে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।
সর্বশেষ গত ১৩ আগস্ট আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২৪
ইএস/জেএইচ