নাটোরে স্ত্রীর দায়ের করা নারী নির্যাতনের মামলায় সাময়িক বরখাস্তকৃত পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম ফজলুল হকের জামিন আবেদন না নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
তবে এসময় আদালত থেকে কারাগারে নেওয়ার সময় সাংবাদিকরা ভিডিও ধারণ করতে গেলে আসামি ফজলুল হক সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দুপুরে নাটোর আদালত চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।
পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশি পাহারায় তাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে সাময়িক বরখাস্তকৃত এসপি ফজলুল হক নাটোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে জামিনের জন্য আবেদন করেন।
এসময় শুনানি শেষে বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ আব্দুর রহিম তার জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ সময় পুলিশ তাকে আদালত থেকে কোর্ট পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখান থেকে কারাগারে নেওয়ার জন্য আসামিকে বের করা হয়। এ সময় তার ছবি তুলতে গেলে তিনি সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন। এতে এখন টেলিভিশন, সময় টেলিভিশন ও এনটিভির ক্যামেরাপারসন হাতে চট পান। এ সময় ‘সময় টেলিভিশন’র সিনিয়র স্টাফ করেসপন্ডেন্ট আল-মামুন এগিয়ে গেলে তাকেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন আসামি। এসময় কয়েকজন কোর্ট পুলিশ তাকে আটকানোর চেষ্টা করেন।
পরে এনিয়ে উত্তেজনা পরিস্থিতি বিরাজ করতে থাকে। এ অবস্থায় কোর্ট পুলিশ তাৎক্ষণিক ভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং আসামি ফজলুল হককে আদালতের হাজতের ভেতর নিয়ে যায় পুলিশ। এ সময় জেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
এ সময় সাংবাদিকরা অন্য আসামিদের মতো সাবেক এসপি ফজলুল হককে হাতকড়া পড়িয়ে ও মাজায় দরি বেঁধে কারাগারে নিয়ে যেতে হবে এমন দাবি তোলেন। খবর পেয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সেনাবাহিনীর একটি ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এরপর বিকেল ৩টার দিকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় আসামিকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ ব্যাপারে এখন টেলিভিশনের ক্যামেরাপারসন জাহিদুল ইসলাম সুমন জানান, আসামিকে নিয়ে যাওয়ার সময় তারা ভিডিও ধারণ করছিলেন। এ সময় আসামি তাদের ওপর চড়াও হয়ে ক্যামেরা ভাঙার চেষ্টা করেন। এ অবস্থায় ক্যামেরা রক্ষা করতে গিয়ে তাদের হাতে আঘাত লাগে। এসময় ‘সময় টেলিভিশন’র সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট আল-মামুন এগিয়ে গেলে তাকেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন আসামি।
এ ব্যাপারে যমুনা টেলিভিশনের সিনিয়র স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ও নাটোর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান বলেন, একজন আসামির দ্বারা কোর্ট চত্বরে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর চড়াও হওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক এবং অপ্রত্যাশিত। এটা কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক নেতাদের নিয়ে জেলা ও দায়রা জজ, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সুপারকে অবহিত করে আইনি সহায়তা চাওয়া হয়েছে। তারা এ ব্যাপারে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
নাটোরের এসপি মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। এবিষয়ে তদন্ত টিম গঠন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি কোর্ট পুলিশের দায়িত্বে অবহেলা থাকলে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে বাদীপক্ষের আইনজীবী মুশফিক হাসান বাংলানিউজকে জানান, গত ২০২৪ সালের ২৮ অক্টোবর মেহনাজ আক্তার তার স্বামী এসপি ফজলুল হকের বিরুদ্ধে ২০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবি এবং তার ওপর নির্যাতন, পরকীয়াসহ নানা অভিযোগ এনে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন। এরপর এসপি ফজলুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করে ময়মনসিংহ রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে তিনি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। এ সময় বিচারক শুনানি শেষে তার জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
তিনি আরও বলেন, ফজলুল হকের নির্যাতনে দুই কন্যা সন্তান নিয়ে স্ত্রী মেহনাজ অসহায় জীবনযাপন করছেন। ফজলুল হকের বাড়ি নাটোর শহরের মোহনপুর এলাকায় এবং তার স্ত্রী মেহনাজের বাড়ি জেলার লালপুরে। তবে তিনি রাজশাহীতে বোনের বাসায় থাকেন। মেহনাজ পুলিশসহ বিভিন্ন স্থানে আইনি সহায়তা চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়িয়েছেন। পাশাপাশি স্বামীর নির্যাতনের বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন মেহনাজ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২৫
এসআরএস