ঢাকা, সোমবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০০ জিলকদ ১৪৪৬

আইন ও আদালত

মগড়া নদী দখলদারদের তালিকা করে উচ্ছেদের নির্দেশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট       | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ৭:১৫ পিএম, এপ্রিল ২৭, ২০২৫
মগড়া নদী দখলদারদের তালিকা করে উচ্ছেদের নির্দেশ মগড়া নদী: ফাইল ফটো

ঢাকা: নেত্রকোনার মগড়া নদীর মূল প্রবাহ অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণ, দখলদারদের তালিকা প্রস্তুত করে উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক এবং  নেত্রকোনার জেলা প্রশাসককে এ নির্দেশ দেওয়া হয়।

এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে রোববার বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।

আদেশে অনতিবিলম্বে নদীতে পৌরসভা ও গৃহস্থালীর পয়োবর্জ্য ফেলা বন্ধের জন্য নেত্রকোনা পৌরসভার প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে দূষণকারীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করে দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও নেত্রকোনা জেলার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত।

ছয় মাসের মধ্যে আদেশ প্রতিপালন সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিলেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রুলে নেত্রকোণা জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত মগড়া নদী দখল ও দূষণ থেকে রক্ষার ব্যর্থতা সংবিধান ও প্রচলিত আইনের লঙ্ঘন হওয়ায় কেন তা বিধিবহির্ভূত,বেআইনি ও জনস্বার্থবিরোধী ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

এছাড়া নদীর সিএস, আরএস ম্যাপ ও মূল প্রবাহ অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণ; সব দখলদার ও ক্ষতিকর স্থাপনা উচ্ছেদ; দূষণের উৎস চিহ্নিত করে দূষণ নিয়ন্ত্রণের এবং প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা ও সে মোতাবেক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পুনরুদ্ধার, সংরক্ষণ ও রক্ষা করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না- তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব; পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব; ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব; জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান; বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান; পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক;বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক; নেত্রকোনা জেলার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার; নেত্রকোনা পৌরসভার প্রশাসক; নেত্রকোনা সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং নেত্রকোনা জেলার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) জনস্বার্থে এ রিট করে। রিটের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট এস. হাসানুল বান্না।

বেলার পক্ষ থেকে জানানো হয়, নেত্রকোনা জেলার সদর উপজেলার চল্লিশা ইউনিয়নে ধলাই ও কুক্কাখালী নামক দুইটি নদী মিলিত হয়ে মগড়া নদী উৎপন্ন হয়েছে। নদীটি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত চতুর্থ শ্রেণির নৌপথ। একদিকে প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে তলদেশে পলি/বালু জমে নদীটি নাব্যতা হারিয়েছে, অন্যদিকে দখল আর দূষণে এ নদী আজ প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।  

জেলা প্রশাসকের তথ্য অনুযায়ী, নদীতে চিহ্নিত ৩১৬ জন দখলদার নদীর যথেচ্ছা ব্যবহার করে চলেছে। কচুরিপানা, গৃহস্থালি বর্জ্য পৌরসভার ড্রেনেজ আউটলেটের পয়োবর্জের মাধ্যমে নদী প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে এবং নদীর পানি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। নদীর উৎসমুখে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত জলকপাট বা স্লুইচগেট, নদীর ওপর নির্মিত কম উচ্চতার সেতুএবং পূর্বধলা-নেত্রকোনা সড়কের জন্য নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নদীর পানি ব্যবহার করে নদী সংলগ্ন ফসলি জমিতে চাষাবাদ করা হতো কিন্তু দূষণের কারণে বর্তমানে তা ব্যবহারের উপযোগিতা হারিয়েছে। নির্ধারিত নৌপথ হওয়া সত্ত্বেও এ নদীতে বর্তমানে লঞ্চ, মালবাহী বড় লঞ্চ ও ট্রলার চলতে পারে না। এ অবস্থায় মগড়া নদীর দখল ও দূষণরোধ করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে এনে নদী রক্ষায় বেলা উল্লেখিত জনস্বার্থমূলক মামলাটি করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২৫
ইএস/জেএইচ
 

বাংলাদেশ সময়: ৭:১৫ পিএম, এপ্রিল ২৭, ২০২৫ /

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।