বিচারকাজের বাইরে থাকা হাইকোর্ট বিভাগের দুই বিচারপতির বিষয়ে সবশেষ তথ্য জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। এ দুই বিচারপতি হলেন—বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামান।
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন জানায়, সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলে মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক মো. আখতারুজ্জামানের বিষয়ে চূড়ান্ত শুনানি সম্পন্ন হয়েছে এবং আগামী ২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বিষয়ে চূড়ান্ত শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
‘দলবাজ, দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিস্টের দোসর’ বিচারকদের পদত্যাগের দাবিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের প্রেক্ষপটে গত বছরের অক্টোবরে ১২ বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠিয়েছিলো সুপ্রিম কোর্ট। ছুটিতে পাঠানো সেই ১২ বিচারপতির মধ্যে এ দুজনও রয়েছেন।
এর মধ্যে ৭ জনের পদত্যাগ, অপসারণ ও অবসরের পর এখনো ৫ বিচারপতির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। সুপ্রিম কোর্ট এই ৫ জনের বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে।
যেভাবে ১২ বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা হয়
গত বছরের ১৫ অক্টোবর রাতে ‘দলবাজ, দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিস্টের দোসর’ বিচারকদের পদত্যাগের দাবিতে হাইকোর্ট ঘেরাও করতে ফেসবুকে ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম।
১৬ অক্টোবর দুপুরে মিছিল নিয়ে হাইকোর্ট চত্বরে আসেন শিক্ষার্থীরা। সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহর নেতৃত্বে দক্ষিণ গেট দিয়ে ঢুকে তারা হাইকোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে অবস্থান নেন। সঙ্গে ছিলেন আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম।
আদালত প্রাঙ্গণে হাসনাত-সারজিসসহ অন্য শিক্ষার্থীদের নানা স্লোগান দিতে শোনা যায়। আগে থেকেই সেখানে অবস্থান করে শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ। এর সঙ্গে হাইকোর্ট বিভাগের ‘দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ’ বিচারপতিদের পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকে বৈষম্যবিরোধী আইনজীবী সমাজ।
এই কর্মসূচি চলার মধ্যে বেশ কিছু বিচারপতি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
পরে আলোচনার পর ছাত্রদের সামনে এসে বক্তব্য দেন ১৬ অক্টোবর বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা। বিচারপতি অপসারণের বিষয়ে রেজিস্ট্রার জেনারেল বলেন, বিচারপতিদের পদত্যাগে আপনাদের যে দাবি, আসলে বিচারপতিদের নিয়োগকর্তা হচ্ছেন রাষ্ট্রপতি। পদত্যাগ বা অপসারণ; সেই উদ্যোগও রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে হয়ে থাকে। এখানে প্রধান বিচারপতির যেটা করণীয় তিনি সেটা করেছেন। আপাতত ১২ জন বিচারপতিকে প্রাথমিকভাবে কোনো বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না। বেঞ্চ না দেওয়ার অর্থ হলো, আগামী ২০ (অক্টোবর) তারিখ যে কোর্ট খুলবে, তারা বিচারকাজে অংশ নিতে পারবেন না।
বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠন
বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় বহালের পর সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল পুনরুজ্জীবিত হয়। এরপর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল কার্যক্রম শুরু করে। অপর দুই জন হলেন, বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী।
কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে এই কাউন্সিল যাচাই-বাছাই করে রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ পাঠায়। সংবিধান অনুসারে, প্রধান বিচারপতি ও জ্যেষ্ঠ দুইজন বিচারপতির সমন্বয়ে এ কাউন্সিল গঠিত হয়। এরপর কয়েকজন বিচারপতির আচরণের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে কাউন্সিল।
১২ বিচারপতির সবশেষ তথ্য
৩০ জানুয়ারি বিচারপতি সাহেদ নূরউদ্দিন পদত্যাগ করেন। এ ছাড়া, দুইজন বিচারপতি হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারক হিসেবে নিয়োগ পাননি। তারা হলেন, বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলন। অপর দুইজন বিচারপতি ইতোমধ্যে অবসরগ্রহণ করেছেন। তারা হলেন, বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খান ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাস।
আর সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পর দুই বিচারপতিকে অপসারণ করেন রাষ্ট্রপতি। তারা হলেন, বিচারপতি খিজির হায়াত ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান। বাকি ৫ জনের বিষয়ে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলে তদন্ত চলমান রয়েছে।
ইএস/এমজেএফ