নারীর প্রতি সহিংসতা যেনো একটি নিয়মিত ঘটনা। গণমাধ্যমে চোখ রাখলেই দেখা যায় দেশের কোথাও না কোথাও নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে।
এসব ঘটনার অধিকাংশই ধামাচাপা পড়ে যায়। মামলা মোকদ্দমা না করে লোকলজ্জার ভয়ে গোপন রাখা হয় অনেক ঘটনাই।
ফলে এসব নির্যাতনের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা যায়না। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে না পারলে সমাজে নারী নির্যাতন বেড়ে যায়।
বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও সামাজিক মূল্যবোধ ও মানবিকতার অবক্ষয়ের কারণে নারী নির্যাতনসহ সব ধরনের মানবিধকার লংঘনের ঘটনা ঘটে। আর বিচারহীনতা বা ন্যায়বিচারের অভাবে একটি সমাজ ধীরে ধীরে অপরাধ প্রবণ হয়ে ওঠে। এ প্রবণতা দূর করতে হলে সর্বাগ্রে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। সেই সাথে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
শুধু আইন থাকলেই নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করা যায়না। আইনের প্রয়োগ জরুরি। সেই সাথে নারীর শিক্ষা ও ক্ষমতায়নও জরুরি। সামাজিক সচেতনতাতো লাগবেই।
আর্থ-সামাজিক সূচকে আমাদের যতো অর্জন তার পেছনে দেশের নারী সমাজের অসমান্য অবদান আছে। কিন্তু দেশের অর্থনীতি তথা সামাজিক উন্নয়ন হলেও নারীর অবস্থার তেমন উন্নয়ন হয়নি। বিশেষ করে ক্ষমতায়নের প্রশ্নে নারীরা এখনো অনেক পেছনে পড়ে আছে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। সব শ্রেণি-পেশার নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য রাষ্ট্রকে সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
এক সময় নারীরা দিনের পর দিন নির্যাতন সহ্য করে যেতেন। এখনও সে অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। তবে কিছু কিছু ঘটনা যা আমরা জানছি তা নারীর প্রতিবাদেরই ফল। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে দেশে ও আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে কাজ হচ্ছে। আর্ন্তজাতিক আইন ও নীতিমালার আলোকে এখানে আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। সংবিধানেও নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু আইনের কার্যকর প্রয়োগে ঘাটতি রয়েছে। দুর্বল আইনের শাসন দিয়ে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করা যাবেনা। আইনের কঠোর প্রয়োগ লাগবে।
তবে, নারী নির্যাতনের এমন চিত্র শুধু আমাদের দেশেই নয়, উন্নত দেশগুলোতেই বিদ্যমান। উন্নত বিশ্বের নারীরাও পারিবারিক নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। ইউরোপে প্রতি চারজন নারীর মধ্যে একজন জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হন।
বছর তিনেক আগেও ভারতে ৪৪ শতাংশ নারী স্বামী বা আত্মীয়স্বজনের মধ্যমে নির্যাতনের শিকার হতেন। অবস্থার এখনো খুব একটা পরিবর্তন হয়নি।
আমাদের দেশেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। সময়ের সাথে সাথে হয়তো নির্যাতনের রকমফের হয়েছে। মাত্রায় ভিন্নতা আসছে। শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি মানসিক নির্যাতন যোগ হয়েছে। যৌতুকের মতো সামাজিক ব্যাধি এখন ছড়িয়ে পড়ছে।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর আরো অংশগ্রহণ জরুরি। শিক্ষায় অগ্রগতি হলেও ঝড়ে পড়ার হার হ্রাস করতে হবে। উচ্চশিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ আরো বাড়াতে হবে। সেই সাথে সামগ্রিকভাবে নারীর ক্ষমতায়নের প্রশ্নটিতো আছেই।
নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন প্রতিরোধে আইনের প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরি। এক্ষেত্রে জাতীয় কর্মপরিকল্পনার প্রত্যাশিত বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৫