মহাসড়কে যানজট একটি প্রতিদিনের ঘটনা। দেশের প্রায় প্রতিটি মহাসড়কেই এরকম যানজট দেখা যায়।
এসব মহাসড়কের অধিকাংশ যায়গাই যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী। কোথাও কোথাও সড়কের প্রায় অর্ধেক অংশই বেদখল হয়ে গেছে। ফুটপাতে দোকান, সড়কে বাজার আমাদের মহাসড়কের একটি সাধারণ চিত্র।
সড়ক-মহাসড়কের ফুটপাত দখল করে অবৈধ দোকান তৈরি করে ব্যবসা বাণিজ্য চলছে। কোথাও কোথাও মহাসড়কে ফসলাদি মাড়াই করা ও শুকানোর চিত্রও চোখে পড়ে।
সেই সাথে একই সড়কে বিভিন্ন গতির যানবাহন চলাচলের ফলে ঘটে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। আর যানজটতো লেগেই থাকে।
তাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধ ও যানজট নিরসনে মহাসড়কের পাশে গড়ে ওঠা সকল অবৈধ ও অনাকাঙ্ক্ষিত স্থাপনা অপসারণ করা অত্যন্ত জরুরি।
এ বিষয়ে গনমাধ্যমে আলোচনা হলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। কোনো কোনো যায়গায় স্থানীয় প্রশাসন পদক্ষেপ নিলেও তা স্থায়ীত্ব লাভ করেনি।
তাই দুর্ঘটনা রোধে মহাসড়কের দু’পাশে অননুমোদিত সকল স্থাপনা অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আশা করা যায়, এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা গেলে মহাসড়কে যানজট অনেকাংশে কমে যাবে। সেই সাথে সড়ক দুর্ঘটনাও অনেকাংশে রোধ হবে।
সড়ক দুর্ঘটনার আরেকটি বড় কারণ, অদক্ষ চালকদের গাড়ি চালনা। দেশের অধিকাংশ চালকেরই কোনো আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেই। ফলে, তারা গাড়ি চালাতে পারলেও সড়ক বা মহাসড়কে চলার জন্য প্রয়োজনীয় খুটিনাটি অনেক বিষয়েই অজ্ঞ।
নামে মাত্র প্রশিক্ষণ নিয়েই চালকরা গাড়ি নিয়ে সড়ক বা মহাসড়কে নেমে পড়েন। আর হুমকির মধ্যে ফেলে দেন অসংখ্য মানুষকে।
চালকদের অদক্ষতা ও অজ্ঞতার কারণে প্রতি বছর প্রাণ হারায় অসংখ্য মানুষ। গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের অনেক সাধারণ বিষয় তাদের জানা নেই। স্থান বিশেষে গাড়ির গতি কত হতে পারে সে বিষয়ে তাদের ধারণা নেই। এদের নেই কোনো সাধারণ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও।
হাইকোর্ট বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে, চালকদের লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি নির্ধারণ করতে সরকারকে আদেশ দিয়েছে। যদিও বাস্তবতা বিবেচনায় বিষয়টি পাঁচ বছর পর কার্যকর করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে।
একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে এ রায় ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি আইন আছে। ১৯২৫ সালে আইনটি প্রণয়ন করা হয়। এটি অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত একটি আইন। মহাসড়কের নিরাপত্তা ও শৃংখলার জন্য অপরিহার্য অনেক বিষয় এখানে উল্লেখ নেই। ফলে সময়োপযুগি একটি আইন প্রণয়ন করা অত্যক্ত জরুরি। তদুপরি এ আইনে যেসব বিধান আছে তাও কার্যকর হচ্ছে না। ফলে, অপরাধীরা ধরা ছোয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।
এছাড়া কোনো সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে আমাদের মাঝে আইন হাতে তুলে নেওয়া প্রবণতা ব্যাপক। ফলে, দোষ যারই হোক প্রথমেই চালকে গণধোলাই দেওয়া হয়। মহাসড়কে দুর্ঘটনা অনেক ক্ষেত্রেই পথচারীদের জন্য হয়ে থাকে। সচেতনতা না থাকার ফলে যত্রতত্র রাস্তা পার হওয়ায় এ রকম দুর্ঘটনা ঘটে। আর চালকের অদক্ষতাতো আছেই।
আইনের ৫ ধারায় কেউ আইন অমান্য করলে দায়ীদের শাস্তির বিধানও রাখা হয়েছে ১৯২৫ সালের আইনে। এক্ষেত্রে আইন লংঘনকারী অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অব্যাহত লংঘনের জন্য ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করবে।
এছাড়া আইনের লংঘন অব্যাহত থাকাকালে প্রতিদিনের জন্য অতিরিক্ত অনধিক ১০০ টাকা করে জরিমানা দেবে।
ট্রাফিক আইন লংঘন করে গাড়ি চালানোই যেন এখানে রীতি। লালবাতি বলছে গাড়ি থামাতে আর ট্রাফিক পুলিশ বলছে এগিয়ে চলতে। রাস্তায় এরকম বৈপরিত্য প্রায়ই চোখে পড়ে।
ভারত সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কঠোর আইন প্রণয়ন করেছে। এখানে কোনও চালকের ঘটানো দুর্ঘটনায় কোনও শিশুর মৃত্যু হলে সাত বছরের জেল ও তিন লক্ষ টাকা জরিমানার বিধান করা হয়েছে।
আমাদের দেশে মহাসড়ক দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ হলো চালকদের অবহেলা, পথ নিরাপত্তা সম্বন্ধে অজ্ঞতা, গাড়ির যান্ত্রিক ত্রুটি ও সড়কের বেহাল দশা ইত্যাদি।
কিন্তু আইন থাকলেই হবেনা। আইনের প্রয়োগ জরুরি। সচেতনতা আরো বেশি জরুরি। কঠোর আইন থাকার পরও এর প্রয়োগ না হলে দুর্ঘটনা হ্রাস ও রোধ করা যাবেনা। যেটা দরকার তা হল আইনের যথাযথ প্রয়োগ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৫