বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধ ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে একটি আইনগত চুক্তি জরুরি ছিল। উন্নয়নশীল দেশগুলো বহুদিন ধরে এরকম একটি চুক্তির জন্য বিভিন্ন ফোরামে দাবী করে আসছিল।
অনেক টানাপোড়েন শেষে একটি আইনগত বাধ্যবাধকতা নিয়ে চুক্তি সই হয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধই এই চুক্তির মূল বিষয়। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে একটি সাধারণ প্লাটফর্মে নিয়ে আসাই এই চুক্তির প্রধান চ্যালেঞ্জ ও অর্জন।
কার্বন নি:সরণের একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারনের জন্য বৈশ্বিক চুক্তি সম্পাদনের জন্য দেন দরবার কম হয়নি। এ চুক্তি সম্পাদনের পর যেসব দেশ তাদের লক্ষ্য পূরণ না করতে পারবে তাদেরকে একটি জবাবদিহিতার মধ্যে আনা গেছে।
যদি বিশ্ব উষ্ণতা রোধে পদক্ষেপ না নেয়, তবে এ শতাব্দীর শেষ নাগাদ বিশ্বের উষ্ণতা ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে পৌঁছাবে আমাদের ভবিষ্যত জীবনপ্রবাহের ওপর মারাত্নক প্রভাব ফেলবে। বিদ্যমান নীতি চুক্তি অনুযায়ী হয়তো এর মাত্রা দাড়াবে ৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। এ মাত্রাও জলবায়ুর উষ্ণতা রোধে কোনো কার্যকর প্রভাব ফেলতে পারবেনা। তাই প্রয়োজন একটি অধিকতর উচ্চাভিলাসী চুক্তি যার মাধ্যমে উদগীরনের মাত্রাকে আরো সংকীর্ণ করা যেতে পারে।
প্যারিস চুক্তি সেই লক্ষ্যে একটি অগ্রযাত্রা। এর মাধ্যমে ২১০০ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে রাখা যাবে। প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির মাত্রা ২ সেলসিয়াসের নিচে ধরে রাখার লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে। অংশগ্রহণকারী সব দেশের সম্মতিতেই এ চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে।
জলবায়ু ইস্যু নিয়ে দুই মেরুতে অবস্থানকারী দেশগুলোও এই চুক্তিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে। এই চুক্তিকে সাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারতসহ অপরাপর দেশগুলো।
তবে এদেশগুলোও চুক্তিটিক অসম্পূর্ণ বলেছে। ফলে ভবিষ্যত কার্যক্রম নির্ধারনে এ চুক্তির ওপর ভিত্তি করে অনেক কাজ করতে হবে। তবে, নিশ্চিতভাবে একটি ভবিষ্যত কার্যক্রম পরিচালনা করা বা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের জন্য একটি প্লাটফরম তৈরি হয়েছে।
চুক্তির সব শর্তই যে বাধ্যতামূলক তা নয়। এর অনেক শর্তই স্বেচ্ছাপ্রনোদিত। ফলে, দেশগুলো ইতিবাচক ভূমিকা এখানে একটি বড় নিয়ামক।
তবে, বিতর্ক আছে এর সাফল্য নিয়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এখানে ঝুকিপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোর অধিকার উপেক্ষিত হয়েছে। ফলে, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য নিরাপদ আবাস গড়তে এ চুক্তির অবদান কী হবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
এখানে কেবল নি:সরণ হ্রাসের বিষয়ে রাষ্ট্রগুলো একটি আইনী বাধ্যবাধকতা আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কোনো বাধ্যবাধকতার উপস্থিতি নেই এ চুক্তিতে।
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৫