সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) বাস্তবায়ন নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সর্বশেষ প্রতিবেদনে (২০১৫) বলা হয়েছে, দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছে। নির্ধারিত সময়ের তিন বছর আগেই এ লক্ষ্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
২৯ শতাংশের বিপরীতে এমডিজির মেয়াদের শেষ বছর ২০১৫ সালে এসে দেশের দারিদ্র্য হার কমে দাঁড়িয়েছে ২৪.৮ শতাংশে। তবে এখনো ৩ কোটি ৯২ লাখ মানুষ উচ্চ দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস করে। আর এদের মধ্যে নিম্ন দারিদ্র্যরেখার নীচে বসবাস করে ২ কোটি ৪ লাখ মানুষ।
দারিদ্র্য বিমোচনে এখনো বাংলাদেশের সামনে তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এ চ্যালেঞ্জগুলো হলো প্রত্যন্ত ও চরাঞ্চলে বিদ্যমান দারিদ্র্য পকেট; আয় বৈষম্য
এবং নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে তুলনামূলক কম অংশগ্রহণ। শিশুমৃত্যুর হার, মাতৃমৃত্যুর হার, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের অর্জন
বেশ ভালো। মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়নের জন্য এমডিজিতে যে লক্ষ্য রয়েছে তাতেও বাংলাদেশ সফল হয়েছে। সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষায় বাংলাদেশ যথেষ্ট উন্নতি করেছে। ভালো করেছে লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নে। বেড়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা পর্যায়ে মেয়েদের অংশগ্রহণ।
ধারাবাহিকভাবে গত কয়েক বছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বেশি হওয়ায় তা দারিদ্র্য বিমোচনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। এমডিজিতে বার্ষিক দারিদ্র্য বিমোচনের হার ১.২০% মানে রাখার লক্ষ্য ছিল। বাংলাদেশে ২০০০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে বছরে গড়ে ১.৭৪%
মানে দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এমডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তিনটি ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। ক্ষেত্র তিনটি হলো কর্মসংস্থান, পুষ্টি এবং পরিবেশ। এমডিজিতে তরুণদের শতভাগ বেকারত্ব নিরসনের লক্ষ্য থাকলেও ১৫-২৪ বছর বয়সী তরুণ প্রজন্মের ৫৭.১% এখনও বেকার। ১৯৯০-৯১ সালে বেকারত্বের এই হার ছিল ৪৮.৫%। টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৩.৪০ শতাংশ বনভূমি বা বৃক্ষরাজিতে ভরপুর। ২০১৫ সালের মধ্যে ২০ শতাংশ বনভূমি বা বৃক্ষরাজিতে পরিপূর্ণ থাকার লক্ষ্য ছিল।
এসডিজি: বিশ্ব রূপান্তরের নতুন এজেন্ডা
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৯৩টি দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানেরা ‘ট্রান্সফরমিং আওয়ার ওয়ার্ল্ড: দ্যা ২০৩০ এজেন্ডা ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’ শিরোনামের একটি কর্মসূচি অনুমোদন করে, যা সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস (এসডিজি) নামে পরিচিত। বিশ্বমানবতার সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে এটি একটি কর্মপরিকল্পনা, যা বিশ্বব্যাপী শান্তি, স্বাধীনতা ও কার্যকর অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত করবে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রত্যাশা, ২০৩০ এজেন্ডা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাবে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ এবং অর্জিত হবে পরিবেশের ভারসাম্য।
এসডিজি গোলে বিস্তারিত, সুদূরপ্রসারী ও গণকেন্দ্রিক, বিশ্বজনীন রূপান্তর সৃষ্টিকারী ১৭টি লক্ষ্য এবং ১৬৯টি টার্গেট অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। লক্ষ্যগুলো হলো: (১) সব ধরনের দারিদ্র্য দূর করা; (২) ক্ষুধা দূর করা; (৩) সবার জন্য স্বাস্থ্যকর জীবন ও কল্যাণ নিশ্চিত করা; (৪) সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানসম্মত এবং জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা; (৫) নারীদের সম-অধিকার এবং তাদের ও কন্যাশিশুদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা; (৬) সবার জন্য টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা ও পয়:নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা; (৭) সবার জন্য সুলভ, নির্ভরযোগ্য, টেকসই ও আধুনিক জ্বালানি নিশ্চিত করা; (৮) সবার জন্য স্থায়ী, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনৈতিক কার্যক্রম উৎসাহিত, পরিপূর্ণ ও উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান এবং উপযুক্ত কর্মের নিশ্চয়তা প্রদান করা; (৯) স্থিতিশীল অবকাঠামো তৈরি, অন্তভুর্ক্তিমূলক এবং টেকসই শিল্পায়ন ও উদ্ভাবন উৎসাহিত করা; (১০) অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বৈষম্য কমিয়ে আনা; (১১) নগর ও জনবসতিগুলো অন্তর্ভুক্তিমূলক, নিরাপদ, স্থিতিশীল ও টেকসই করা; (১২) টেকসই উৎপাদন ও ভোগ নিশ্চিত করা; (১৩) জলবায়ু পরিবর্তন এবং তার বিরুপ প্রভাবের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা; (১৪) পরিবেশ উন্নয়নে সাগর, মহাসাগর ও সামুদ্রিক সম্পদের সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করা; (১৫) স্থলজ বাস্তুতন্ত্রের সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন ও টেকসই ব্যবহার উৎসাহিত, বনজ সম্পদের টেকসই ব্যবহার, মরুকরণ প্রতিহত এবং ভূমির মানে অবনতি রোধ ও জীববৈচিত্র্যের রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা; (১৬) টেকসই উন্নয়নে শান্তিপূর্ণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ তৈরি, সবার জন্য ন্যায়বিচারের সুযোগ এবং সর্বস্তরে কার্যকর, দায়বদ্ধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা; (১৭) টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য বাস্তবায়নের পদ্ধতিগুলো শক্তিশালী এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব জোরদার করা।
যদিও এসডিজি, এমডিজি’র অভিজ্ঞতার আলোকে প্রণীত হয়েছে, কিন্তু এটির গুরুত্ব হলো যে, এটির পরিধি এমডিজি থেকে অনেক বিস্তৃত এবং এমডিজি’র সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করা এর লক্ষ্য। দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা,স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টিসহ উন্নয়নের গতানুগতিক কর্মসূচির বাইরে এতে আরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশ সংক্রান্ত বিভিন্ন লক্ষ্য। এসডিজি’র লক্ষ্য ও টার্গেটগুলোর গভীর আন্তঃসংযোগ ও পারস্পরিক যোগসূত্র নতুন এজেন্ডায় সুস্পষ্টভাবে স্বীকৃত।
এসডিজি নির্ধারণ করা হয়েছে পৃথিবী থেকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য পুরোপুরি সম্পন্ন করার জন্য। এসডিজি’র লক্ষ্যগুলো ধনী-দরিদ্র প্রত্যেক দেশের জন্য প্রযোজ্য। এসডিজি করা হয়েছে ব্যাপকভাবে সমন্বিত অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতিতে এবং এতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ার ওপর, যা মানুষের
ন্যায়বিচার পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেবে। এসডিজিতে মানবীয় বিশ্ব গড়তে গুণগত শিক্ষার অর্জনের কথা বলা হয়েছে, যে শিক্ষা হবে স্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যে। এসডিজিতে সর্বস্তরে পরিবীক্ষেণে কথা বলা হয়েছে। এমডিজি’র অর্থায়ন মূলত ছিল সাহায্য নির্ভর। অন্যদিকে স্থায়ী এবং সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনাকে এসডিজি মূল কৌশল হিসেবে নিয়েছে।
সুশাসনের বিষয়টি এমডিজিতে উপেক্ষিত ছিল। তাই সামনের দিনগুলোতে এসডিজিতে এর ১৬তম লক্ষ্যকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, যে লক্ষ্যে টেকসই উন্নয়নে শান্তিপূর্ণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণের কথা বলা হয়েছে। সবার জন্য ন্যায়বিচারের সুযোগ সৃষ্টির অঙ্গীকার এতে প্রদান করা হয়েছে। অঙ্গীকার করা হয়েছে সর্বস্তরে কার্যকর, দায়বদ্ধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠার এবং অংশগ্রহণমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণের।
এসডিজি অর্জন: নেতৃত্ব দিবে সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ তরুণ প্রজন্ম
এসডিজিতে তরুণদের নিয়ে ব্যাপক আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। এতে সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানসম্মত এবং জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা এবং কন্যাশিশুদের ক্ষমতায়ন করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া সবার জন্য স্থায়ী, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনৈতিক কার্যক্রম উৎসাহিত, পরিপূর্ণ ও উৎপাদনশীল কর্মসংসংস্থান এবং উপযুক্ত কর্মের নিশ্চয়তার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
জাতিগতভাবে আমরা যতবার সফল হয়েছি এবং বিজয়ের মুখ দেখেছি প্রতিটি ক্ষেত্রেই তরুণদের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। কারণ তারা স্বপ্ন দেখে সুন্দর এক ভবিষ্যতের, তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপায়িত করতে এবং নিজেদের প্রতিষ্ঠায় তারা সংগ্রাম করে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে। তারা বিশ্বাস করে ক্ষুধা এবং দারিদ্র্য নির্মূলে তারাই সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তারুণ্য মানে জীবনের প্রস্ফুটিত ফুল, যখন শরীর ও মনের শক্তি থাকে সর্বোচ্চ। আর এ তারুণ্যই তখন হয়ে ওঠে শুদ্ধতার মূর্ত প্রতীক।
বর্তমানে বাংলাদেশে কর্মক্ষম বা তরুণদের সংখ্যা যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি এবং আগামী ২০৩১ পর্যন্ত মানব সম্পদ বিনিয়োগ এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের সর্বোত্তম সময়। তাই আমাদের তরুণ জনগোষ্ঠীকে সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে জাতি হিসেবে আমরা উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছাতে পারি যদিও এটি কোনো স্বয়ংক্রিয় বিষয় নয়। এর সঠিক ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত নীতি ও উন্নয়ন কৌশল। এই কৌশলের অংশ হিসেবে স্থানীয় উন্নয়নে স্বেচ্ছাব্রতী মানসিকতা সৃষ্টি করে তরুণদের সম্পৃক্ত করার কোনো বিকল্প নেই। জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) এর বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীর সংখ্যা ৪ কোটি ৭৬ লাখ। তারা মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশের মতো। এদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে গঠনমূলক কাজে নিয়মিত অংশগ্রহণের জন্য উজ্জীবিত করা গেলে সারাদেশে একটি বিরাট কর্মযজ্ঞ সৃষ্টি হতে পারে। আর এ ধরনের কর্মযজ্ঞ বাংলাদেশের জন্য একটি অমিত সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে।
আশার কথা, আমাদের তরুণেরা এরই মধ্যে আগুয়ান হয়েছে। বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন ভবিষ্যত তৈরিতে তরা কাজ শুরু করে দিয়েছে। উদাহরণস্বরুপ, ছাত্র-তরুণদের নেতৃত্বে পরিচালিত ‘ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গার-বাংলাদেশ-এর সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ লক্ষাধিক সদস্য তৃণমূল পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সংগঠিত করে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে নানামুখী উন্নয়ন, দক্ষতা ও সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর অংশ হিসেবে ‘বিশ্বব্যাপী সংযুক্ত, স্থানীয়ভাবে সম্পৃক্ত’এই প্রতিপাদ্যকে উপজীব্য করে ব্রিটিশ কাউন্সিল ও দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ২০০৯ সাল থেকে ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গার যুক্ত হয়েছে অ্যাকটিভ সিটিজেনস কর্মসূচিতে। প্রশিক্ষিত এ তরুণরা প্রতিনিয়ত হাতে নিচ্ছে নানামুখী উন্নয়নমূলক সামাজিক উদ্যোগ।
তৃণমূলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার চর্চায় ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগী হয়েছে :
ইউনিয়ন পরিষদে সাধারণ মানুষের জন্য যে সকল সেবা, সুযোগ-সুবিধা রয়েছে সেগুলো মানুষ যাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সাথে পেতে পারে সেজন্য জনগণকে সম্পৃক্ত করে পরিষদের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা-সহ অন্যান্য পরিকল্পনা প্রণয়ন হওয়া প্রয়োজন। পরিষদের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গারের তরুণরা পরিষদের সহযোগী হয়ে ইউনিয়নবাসীর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত ও মতামত সংগ্রহ করছে। সেগুলো সন্নিবেশিত করে পরিষদকে জনমুখী পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করছে।
ওয়ার্ডসভায় যাতে সর্বস্তরের জনগণ অংশ নেয় সেজন্য তরুণরা জনগণকে সচেতন করে এবং ওয়ার্ডসভার সপক্ষে প্রচারণামূলক কার্যক্রম চালায়। গ্রামের সাধারণ মানুষ বিশেষত নারী এবং তরুণরা যাতে তাদের সমস্যা এবং চাহিদাসমূহ ওয়ার্ডসভায় উত্থাপন করতে পারে সেজন্য সহায়তা করে। মানুষের উত্থাপিত চাহিদা এবং সমস্যাগুলো সন্নিবেশিত করে পরিষদের তথ্যায়ন এবং ডিসপ্লে’র কাজে সহায়ত করে। পরিষদের উন্মুক্ত বাজেট অধিবেশনে তরুণরা ব্যাপকহারে অংশ নেয় এবং নিজেদের এলাকার উন্নয়নের ইস্যুসমূহ উত্থাপন করে জনগণ এবং জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে কার্যকর সংযোগ স্থাপন করে।
সমাজ সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম এবং প্রচারাভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছে
তরুণরা নারী এবং সুবিধা ও অধিকারবঞ্চিত মানুষের সার্বিক জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে বাল্যবিবাহ ও যৌতুক প্রতিরোধে উদ্যোগী ভূমিকা নিচ্ছে। মাদকের সর্বনাশা ছোবল থেকে সমাজকে মুক্ত রাখার লক্ষ্যে তরুণ সমাজকে সচেতন ও সংগঠিত করে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলছে। একটি সুস্থ্য, সুন্দর, উদার ও বহুত্ববাদী সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় নিয়মিত কর্মশালা, উঠান বৈঠক করছে। অস্বচ্ছল পরিবারের শিশু-কিশোরদের পড়াশুনায় সহায়তা দিচ্ছে এবং বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দুর্নীতি এবং দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। ইউনিয়ন পরিষদ এবং তরুণদের যৌথ অংশীদারিত্বে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পরিচালনা করছে। এর ফলে একদিকে পরিবেশের উন্নয়ন হচ্ছে, অন্যদিকে তরুণরা তাদের পড়াশুনার ব্যয় নির্বাহের জন্য আয়ের সংস্থান করতে পারছে। সুশাসন ও বিভিন্ন সামাজিক বিষয় সম্পর্কে প্রচারাভিযান পরিচালনার মধ্য দিয়ে তরুণ প্রজন্ম জনগণকে এবং সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে সচেতন করছে।
তরুণ প্রজন্ম আলোকিত প্রজন্ম হিসেবে গড়ে উঠতে সচেষ্ট:
তরুণ প্রজন্ম যাতে কুসংস্কার ও পশ্চাৎপদতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে; সহিংস চরমপস্থা প্রতিরোধ করতে পারে; বিজ্ঞানমনস্ক এবং যুক্তিবাদী হিসেবে গড়ে উঠতে পারে সে লক্ষ্যে দেশের শতাধিক ইউনিয়নে বিজ্ঞান ক্লাব গড়ে তুলছে। বিজ্ঞান ক্লাব হবে স্টাডি সার্কেলের মাধ্যমে নিজেদেরকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার চর্চা কেন্দ্র।
উপসংহার:
এসডিজি’র লক্ষ্য ও টার্গেটের অবিভাজ্যতা, পারস্পরিক সম্পৃক্ততা ও সংযুক্ততার গুরুত্ব সুদূরপ্রসারী ও তাৎপর্য্যপূর্ণ, বিশেষত এর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে। অর্থাৎ এগুলো আংশিক বা বিচ্ছিন্নভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। শুধু শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রভৃতির ওপর প্রকল্প বাস্তবায়ন করে এসডিজি অর্জন করা যাবে না, এর জন্য আরও প্রয়োজন হবে শান্তি প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্র গঠন, মানবাধিকার বাস্তবায়ন ও সুশাসন কায়েম করার মতো ইস্যুগুলো সমন্বিতভাবে সমাধানের প্রয়াস। এসডিজি’র স্থানীয়করণে প্রয়োজন হবে এক ধরনের সমষ্টিগত, উর্ধ্বমুখী ও সু-সংহত ‘কমিউনিটি-লেড ডেভেলপমেন্ট’ এপ্রোচ, যার উদ্দেশ্য হবে পুরো সমাজের
পরিবর্তন, এর অনুন্নয়নের আংশিক প্রতিকার নয়। তৃণমূলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার চর্চা নিশ্চিত করা এবং সমাজ সচেতনতা সৃষ্টিতে তরুণ প্রজন্মকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। আশার দিক হলোÑ আমাদের তরুণেরা বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে এবং তারা সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে উৎসুক। তাই তাদের ক্ষমতায়িত করা গেলে জাতি হিসেবে সম্ভাবনার পথে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো।
সাইফ উদ্দিন আহমেদ, সিনিয়র প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর (গভর্নেন্স),দি হাঙ্গার প্রজেক্ট
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৫