সমাজের নানা ক্ষেত্রে নারীরা আজও পিছিয়ে রয়েছে। যেকোনো সমাজে নারী ও শিশুরাই সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়।
একের পর এক শিশু নির্যাতনের ঘটনায় দেশের সামগ্রিক শিশু অধিকার আজ প্রশ্নবিদ্ধ। সমাজের অনগ্রসর শ্রেণি বিশেষ করে নারী তথা অন্যান্য শ্রেণি-পেশার জনগোষ্ঠীকে নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। কিন্তু শিশু অধিকার নিয়ে তেমন কোনো কার্যক্রম আমরা দেখিনা। সমাজের শিশুরা যেন অভিভাবহীন।
জাতি গঠনে শিশু অধিকার সুরক্ষা ও শিশু কল্যাণ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। গত এক বছরে শিশু নির্যাতনের কয়েকটি ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ফলে, সাধারণ মানুষ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। ফল হিসেবে আমরা একজন অপরাধীর দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে দেখেছি।
আসলে আইন থাকলেই হবেনা। আইনের প্রয়োগ ছাড়া কোনো আইনই কাজে আসে না। শিশু আইনের বাস্তবায়ন ছাড়া শিশু অধিকার রক্ষা করা যাবে না।
দেশে শিশু আইন আছে। ১৯৭৪ সাল থেকেই দেশে শিশু আইন বিদ্যমান ছিল। এখনো আছে। কিন্তু শিশু নির্যাতনের বন্ধ হয়নি। কারণ আইনের প্রয়োগ না হলে তা কাগুজে বাঘই রয়ে যায়। আর শিশু নির্যাতনের বিচার করা আরো কঠিন। কারণ শিশুরা ভয়ে নির্যাতনের কথা গোপন রাখে। তাদেরকে নানাভাবে ভয়-ভীতি দেখানো হয়। প্রলুব্ধ করা হয়। সেই সাথে অনেক নির্যাতনের কোনো সাক্ষী থাকেনা। শিশু নির্যাতনের মতো পৈশাচিক ঘটনার সাথে যেসব অপরাধীরা জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা আইনগত ও সামাজিক দায়িত্ব। দোষীরা আইনের ফাক-ফোকর দিয়ে বের হয়ে গেলে তা অত্যন্ত দু:খজনক।
অন্যদিকে শিশু অধিকার বিষয়ক যে পুরনো আইনটি আমাদের ছিল তা সময়ের চাহিদা পূরণে যথার্থ ছিল না। তাই ১৯৭৪ সালের আইনটি বাতিল করে ২০১৩ (সংশোধিত)সালে প্রণীত হয় নতুন একটি আইন।
আন্তর্জাতিক আইনের আলোকেই আমাদের শিশু আইনটি প্রণয়ন করা হয়। জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদে শিশুদের বিশেষ অধিকারের কথা বলা আছে। এ বিশেষ অধিকারগুলো শিশুর বেড়ে ওঠা ও নিরাপদ শৈশবের জন্য অপরিহার্য। আন্তর্জাতিক আইনের এ বিধানগুলো আমাদের আইনেও স্থান পেয়েছে।
আইন বলছে, শিশুদের জন্য সব ধরনের জবরদস্তিমূলক ও ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম নিষিদ্ধ হবে। কাজেই এ ধরনের শ্রম বন্ধ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু গৃহকর্মে নিয়োজিত অধিকাংশ শিশুই জবরদস্তিমূলক কাজে নিয়োজিত। ছোট্ট শিশু। কিন্তু তাকে বাসা-বাড়ির সব কাজই করতে হয়।
দেশের অনেক শিশুই নানা ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত আছে। এসব দেখার কেউ নেই।
নারী ও শিশু নির্যাতনমূলক অপরাধগুলো কঠোরভাবে দমনের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ নামে এই আইন প্রণয়ন করা হয়। ২০০৩ সালে আইনটি সংশোধন হয়।
এ আইনের আওতায় নারী বা শিশু পাচার, শিশু অপহরণ, ধর্ষণ, ধর্ষণজনিত মৃত্যু, আত্মহত্যায় প্ররোচনা, যৌন পীড়ন, ভিক্ষাবৃত্তিসহ সব ধরনের অপরাধেরই বিচার করা যায়। আইনে আছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি পুলিশ বা অন্য কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে অপরাধ সংগঠনের সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে তাহলে ধরা পড়ার ১৫ দিনের মধ্যে অপরাধ তদন্ত শেষ করতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ সময়েই আমরা ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন হতে দেখিনা।
তদন্ত কাজে দীঘসূত্রীতার ফলে বিচারকাজও মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। যদি অপরাধি হাতেনাতে ধরা না পড়ে তবে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করার কথা বলা আছে। ৬০ দিনের জায়গায় ৬ মাসেও অনেক তদন্ত কাজ শেষ হয়না।
কাজেই যথাশীঘ্র সম্ভব তদন্ত শেষ করে সব শিশু নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে কার্যকর অবস্থান নিতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৬