দেশে শিক্ষার মান ও হার বৃদ্ধিতে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। উন্নত দেশগুলো শিক্ষার ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে।
মূলত উন্নয়নশীল দেশের আর্থ-সামাজিক পেক্ষাপটের আলোকেই শিক্ষার এই ধারাটির উৎপত্তি। সাধারণত আনুষ্ঠানিক শিক্ষা পদ্ধতি বা প্রতিষ্ঠানের বাইরে এ শিক্ষা প্রদান করা হয়। আনুষ্ঠানিক শিক্ষা বঞ্চিত দেশের একটি বড় জনগোষ্ঠী এ শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে। এখানে সাধারণত বিশেষ শিক্ষা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এটি আনুষ্ঠানিক শিক্ষা পদ্ধতি ও পাঠ্যক্রম থেকে ভিন্ন।
আমাদের দেশ উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার ধারণা নতুন কিছু নয়। নব্বই দশক থেকে এর গুরুত্ব ও জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। বিভিন্ন কারণে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা বঞ্চিত হয় দেশের বিরাট এক জনগোষ্ঠী। প্রাথমিকের গণ্ডি পার হতে পারেনা দেশের অনেক শিশু। মাধ্যমিকে এই হার আরো কম। শিক্ষায় ঝড়ে পড়ার হার আমাদের অনেক বেশি। দক্ষিণ এশিয়া বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি। তাই সরকার উপানুষ্ঠানিক শিক্ষায় গুরুত্ব আরোপ করেছে।
ঝড়ে পড়া এ শিক্ষার্থীদের আবার নতুন করে শিক্ষিত করে তুলতে এ প্রকল্পের সূচনা। নিরক্ষরতার হার হ্রাসে এর রয়েছে ইতিবাচক ভূমিকা।
দেশের বিশাল নিরক্ষর জনগোষ্ঠীর অসুবিধাগ্রস্থ ছেলে-মেয়ে, কিশোর-কিশোরী এবং বয়স্ক লোকদের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার দ্বিতীয় সুযোগ হিসেবে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদান করা হয়। একটি সুশৃঙ্খল নিয়ম-কানুন ও পদ্ধতিতে পরিচালিত হয় এ শিক্ষা কার্যক্রম।
এটি একটি উন্মুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা। সমাজের যেকোনো শ্রেণি-পেশার লোকই এতে শামিল হতে পারেন। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই এর অর্ন্তভূক্ত। এতে সাধারণত কোনো নির্দিষ্ট শিক্ষাক্রম থাকেনা। আর থাকলেও তা অত্যন্ত শিথিলযোগ্য। এটি কোনো সনদভিত্তিক শিক্ষাও না। পেশাগত কাজে দক্ষতা অর্জনই এর মূল লক্ষ্য। সেই সাথে ব্যবহারিক শিক্ষায় গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে পরিচালিত হয় এ শিক্ষা, তাই কোনো নির্দিষ্ট স্থান কালে এটি সীমাবদ্ধ না।
শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত জনগোষ্ঠিকে সাক্ষরজ্ঞানদান, জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশের মানুষকে শিক্ষিত করা জন্য আইনও প্রণয়ন করা হয়েছে। দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি করাই এ আইনের মূল লক্ষ্য।
২০১৪ সালে এ আইনটি করা হয়। আইনানুযায়ী সাধারণত দুই ধরণের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা পদ্ধতি আছে- উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা; এবং উপানুষ্ঠানিক বয়স্ক ও জীবনব্যাপী শিক্ষা।
উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষার বয়সসীমা হচ্ছে ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সের শিশু। সেই সাথে যারা কখনও স্কুলে যায়নি বা প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার আগেই স্কুল থেকে ঝড়ে পরেছে তারাও এর আওতাভূক্ত। আর উপানুষ্ঠানিক বয়স্ক ও জীবনব্যাপী শিক্ষার বয়সসীমা হচ্ছে ১৫ ও তদূর্ধ্ব বয়সের নারী-পুরুষ- যারা কখনও স্কুলে যায়নি বা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝর পরেছে বা নব্য-সাক্ষর হয়েছে বা চাহিদাভিত্তিক জীবন-দক্ষতা ও জীবিকায়ন-দক্ষতা অর্জন অব্যাহত রাখতে চায়।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার আওতাভুক্ত বিষয়গুলো হচ্ছে, সাক্ষরতা, মৌলিক শিক্ষা বা অষ্টম শ্রেণী সমমানের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ও জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কাঠামোর প্রি-ভোকেশনাল-২ স্তর পর্যন্ত ভোকেশনাল শিক্ষা। সেই সাথে অর্জিত সাক্ষরতা, জীবিকায়ন, দক্ষতা ও মৌলিক শিক্ষাকে শাণিত, পরিমার্জন ও পরিবর্ধনও এই শিক্ষার আওতাভুক্ত।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম, তথ্য প্রযুক্তি, কৃষি, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, পরিবার পরিকল্পনা, বন ও পরিবেশ, মৎস্য ও পশু পালন, কুটির শিল্প, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, সড়ক ব্যবহার/সড়ক নিরাপত্তা জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জেন্ডার, গণতন্ত্র, মূল্যবোধ, প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা, এইচআইভি-এইডস বা অন্য কোন জীবনঘনিষ্ট বিষয় ও প্রতিবন্ধিতা ও অটিজমসহ আরো নানা বিষয় এ শিক্ষা কার্যক্রমের অর্ন্তভুক্ত।
আইনানুযায়ী একটি উপানুষ্ঠনিক শিক্ষা বোর্ড রয়েছে। কেউ যদি এ আইনের লংঘন করে বা এ আইনের অধীন দায়িত্বপালনকারী কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে তার দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান করেন, তাহলে তিনি অনধিক ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা সর্ব্বোচ্চ পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৬