সব আইনরেই মূল কথা মানুষের অধিকারের বাস্তবায়ন। আন্তর্জাতিক আইন, রাষ্ট্রীয় আইন, সাংবিধানিক আইন, বিধিবদ্ধ আইন-সব আইনই নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলেছে।
পরিবার থেকে শুরু করে সর্বত্র নারীর অংশগ্রহণ এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। নারী রয়ে গেছে অবহেলিত ও নির্যাতিত। সমাজে এখনও তারা বঞ্চনার শিকার।
বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করে বিশ্ব এগিয়ে এসেছে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ও নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ করতে রয়েছে আন্তর্জাতিক সনদ। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এই সনদে স্বাক্ষর করেছে। পৃথিবীর অধিকাংশ রাষ্ট্রই এই সনদের অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আইনের আলোকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আইন ও বিধি প্রণয়ন করছে। প্রণীত হয়েছে নারী উন্নয়ন নীতিমালা ও নির্যাতন বিরোধী আইন। আমাদের সংবিধানেও নারীর অংশগ্রহণ ও অধিকারের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। যেকোনো সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য আইন প্রণয়ন করা হয়। এ আইনকে অনেক সময় বৈষম্যমূলক আইন হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু এ বৈষম্য সাধারণত ইতিবাচক বৈষম্যই (Positive Discrimination)। সমাজে ও রাষ্ট্রে নারীকে মানুষ হিসেবে এগিয়ে যাওয়ার জন্যই এসব আইন করা হয়। এগিয়ে যাওয়াটাই মূল কথা। তাই নারীদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য বিশেষ আইন প্রণয়নের বিধানও আমাদের সংবিধানে আছে।
পারিবারিক ক্ষেত্রে নারীর অধিকার রক্ষায় পৃথক পৃথক ধর্মাবলম্বীদের জন্য রয়েছে পৃথক পৃথক পারিবারিক আইন, যাতে মূলত বিয়ে, দেনমোহর, তালাক, ভরণপোষণ ও সন্তানের অভিভাবকত্ব সংক্রান্ত আইনগুলো সন্নিবেশিত হয়েছে। আইনানুযায়ী আমাদের দেশে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আছে পৃথক আদালত। নির্যাতন বিরোধী বিশেষ আইনতো আছেই। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, এসিড সন্ত্রাস দমন আইন, যৌতুক নিষিদ্ধকরণ আইনসহ আরো অনেক আইন আছে।
কিন্তু আইন-আদালত দিয়েতো আর অধিকার বাস্তবায়ন হয়না। অধিকার বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন সমাজের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। আইনের উদ্দেশ্য অধিকার আর ধর্মের লক্ষ্য শান্তি। সব ধর্মই শান্তির কথা বলে, মানুষের অধিকারের কথা বলে।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, ‘পুরুষ অথবা নারীর মধ্যে কেউ সৎ কাজ করলে ও মুমিন হলে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি অণু পরিমাণও জুলুম করা হবে না (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১২৪)। ’ ইসলাম নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে এসেছে। অন্ধকার যুগের অধিকারহীন নারীকে আলোর পথ দেখিয়েছি ইসলাম। সম্পত্তিতে নারীর অধিকার দিয়েছে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীর অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। নারী শিক্ষায়ও ইসলাম প্রেরণা দিয়েছে। নবী হযরত মুহম্মদ (স.) বলেন, ‘প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য জ্ঞানার্জন করা ফরজ (ইবনে মাজা)’। এভাবে সব ধর্মই নারীকে গুরুত্ব দিয়েছে, তার অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু, ধর্ম, আইন আর আদালত দিয়ে শুধু নারী অধিকার কেন কারো অধিকারই প্রতিষ্ঠা করা যায়না। অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন সমাজের মানুষের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি।
রাষ্ট্রে সব নাগরিকের সমান অধিকারের কথা বলা আছে। আইনের কাছে সব নাগরিকই সমান। আইনের কাছে নারী-পুরুষ কোনো ভেদাভেদ নেই। আমাদের শুধু আইন নয়, আছে নারীনীতও। প্রথম নারী নীতি প্রণয়ন করা হয় ১৯৯৭ সালে। সর্বশেষ ২০১১ সালের নারীনীতি এখনও কাযকর। কাগজে কলমে নারী নীতি থাকলেও নারীর প্রতি সমাজ ও রাষ্ট্রের নীতি যতদিন বদল না হবে ততদিন নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব না। সমাজের সব শ্রেণি-পেশার জনগোষ্ঠীর জন্যই একথা প্রযোজ্য।
তাই নারী অধিকার বাস্তবায়নে বিদ্যমান আইনের বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি। সেই সাথে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নারীর পথ চলাকে সহজ করবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৬