ব্যবসা-বাণিজ্য বা সম্পত্তি লেনদেনসহ বিভিন্ন কারণে প্রতিদিন অনেক দলিল সম্পাদিত হয়ে থাকে। অনেকে এসব দলিল রেজিস্ট্রি করেন আবার অনেকে করেন না।
কিন্তু অনেকেই দলিল নিবন্ধন করেন না। তারা দলিল নিবন্ধনকে এক ধরনের ঝামেলা মনে করেন। ঝামেলা হলেও ভবিষ্যতে লেনদেন ও বোঝাপড়াসহ অনেক ঝামেলা বা মতবিরোধ থেকে বাঁচা যায়। আইন অনুযায়ী দলিল নিবন্ধন করা হলে ভবিষ্যতে মালিকানা নিয়ে সাধারণত কোনো বিরোধ থাকেনা। একজনের সম্পত্তি আরেকজন দখল করা একটি নিত্যনৈমিত্যিক ঘটনা। অন্যের সম্পত্তি জবর দখল করে আসল মালিককে দখলচ্যূত করা হয়। এসব ক্ষেত্রে অনেক সময়ই বৈধ কাগজপত্র বা দলিল থাকেনা।
দলিল নিবন্ধন করা থাকলে এসব অবৈধ দখল রোধ করা যায়। কেউ অবৈধভাবে দখল করতে চাইলেও বিরোধ এড়ানো যায়। শুধু তাই নয়, সম্পত্তি ভবিষ্যতে আইনানুযায়ী হস্তান্তর করতে চাইলে অবশ্যই নিবন্ধন করতে হবে। কেউ যদি তার সম্পত্তি বিক্রি, দান, উইল করতে চান তবে দলিল করা না থাকলে অনেক সমস্যা দেখা যায়। দলিল করা থাকলে এসব হস্তান্তর সহজ হয়।
যদি সম্পত্তি বা জমি-জমা ক্রয়-বিক্রয় করা হয়, তবে আইনানুযায়ী অবশ্যই রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। আইনানুযায়ী জমি বিক্রয় দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রি করতে হবে। অনেক সময় জমি কেনার আগে বায়না করা হয়। এক্ষেত্রে জমি কেনার আগে বায়না করা হলে তা ৩০ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশনের জন্য জমা দিতে হয়।
যদি কোনো কারণে বায়না দলিল নিবন্ধন করা না হয়, তবে তার কোনো আইনগত ভিত্তি বা গ্রহণযোগ্যতা নেই। আবার বায়না করে তা চিরদিনের জন্য ফেলে রাখলেও চলবেনা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমির আসল বিক্রয় দলিল নিবন্ধনের জন্য জমা দিতে হবে।
শুধু জমির ক্রয়-বিক্রয় না, অন্যান্য ধরনের হস্তান্তরের ক্ষেত্রেও দলিল নিবন্ধন করতে হয়। জমি বন্ধক দেয়ার রেওয়াজ আমাদের দেশে প্রচলিত। বন্ধককৃত জমির দলিলও আইনানুযায়ী নিবন্ধন করতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে অধিকাংশ বন্ধককৃত সম্পত্তির দলিল নিবন্ধন করা হয়না। এতে বিভিন্ন ধরনের আইনগত জটিলতার সৃষ্টি হয়।
আদালতে দেওয়ানি মামলার অধিকাংশই জমি-জমা সংক্রান্ত। দলিল নিবন্ধন করা থাকলে এসব মামলা অনেক সময়ই এড়িয়ে চলা যায়। সম্পত্তি বন্ধকের ক্ষেত্রেও রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। বন্ধকি সম্পত্তি নিবন্ধন করা হলে তা বন্ধকগ্রহীতা অপরের কাছে বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারেনা। ফলে, প্রকৃত মালিক হয়রানির শিকার হননা।
উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বেশির ভাগ সময়ই জমি-জমার অংশীদারিত্ব নিয়ে ঝামেলা হয়। এর অন্যতম কারণ উত্তরাধিকারী আইন মেনে না চলা। উত্তরাধিকারী আইন অনুসরণ করলে এসব ঝামেলার উদ্ভব হয়না। সেই সাথে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পত্তির বাটোয়ারা দলিল অনেক সময়ই নিবন্ধন করা হয়না। ফলে বিভিন্ন আইনগত জটিলতার সৃষ্টি হয়।
আদালতের মাধ্যমে প্রাপ্ত অগ্র ক্রয় দলিলও রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তিও রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। কিন্তু আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব দলিল নিবন্ধন করিনা।
আইনানুযায়ী দলিল তৈরী হওয়ার তিন মাসের মধ্যে তা নিবন্ধন করতে হয়। মুসলিম আইন অনুযায়ী স্থাবর (Immovable) সম্পত্তি হস্তান্তর করা হলে বা এমনকি দান বা হেবা করা হলেও এ দলিল নিবন্ধন করতে হয়।
নিবন্ধন করবেন কীভাবে
- জমি নিবন্ধন করতে হলে জমির পূর্ণ বিবরণ থাকতে হবে
- দলিল দাতা ও দলিল গ্রহীতার নাম, বাবা-মার নাম, ঠিকানা, ছবি, ইত্যাদি থাকতে হবে
- বিক্রেতার নামে নামজারি বা মিউটেশন থাকতে হবে
- সম্পত্তির মালিকানার বিবরণ থাকতে হবে
- জমির মূল্য, বিবরণ, চৌহদ্দির বর্ণনা থাকতে হবে
- অন্যান্য খতিয়ান বা কাগজপত্র থাকতে হবে
এসব বিষয়ে যথাসম্ভব জমিজমা সংক্রান্ত একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ গ্রহণ করা ভালো।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৬