ঢাকা: ইচ্ছা পোষণ করে সভাপতি হওয়ার বিধান বাতিল করে সংসদ সদস্যরা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি থাকতে পারবেন না রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
রোববার (৩১ জুলাই) এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি হাতে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন রিট আবেদনকারী আইনজীবী ড. ইউনুচ আলী আকন্দ।
পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন রায় প্রদানকারী বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
একটি রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ০১ জুন বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা ২০০৯ এর ৫ (২) এবং ৫০ ধারাকে বাতিল করে সংক্ষিপ্ত ওই রায় দেন একই হাইকোর্ট বেঞ্চ। এর মধ্যে ৫ ধারা হচ্ছে এমপিদের সভাপতি পদ ও ৫০ ধারা হচ্ছে বিশেষ কমিটি গঠন নিয়ে। আদালত দু’টি ধারাই বাতিল ও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করেছেন।
ভিকারুন নিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিচালনায় পরিচালনায় বিশেষ কমিটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ ও রাশেদ খান মেনন এমপি পরিচালনা কমিটির সভাপতি হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের প্রবিধানমালা ২০০৯-এর ৫ ও ৫০ ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদনটি করেন আইনজীবী ড. ইউনুচ আলী আকন্দ ।
রায়ে বলা হয়েছে, ইচ্ছা পোষণ করে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব পালন এবং গভর্নিং বডির বিশেষ কমিটির বিধান অবৈধ। এর ফলে সংসদ সদস্যরা স্কুল-কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি থাকতে বা হতে পারবেন না।
এর আগে গত ১৩ এপ্রিল ওই রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব পালন এবং নির্বাচন ছাড়া কমিটি গঠন কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
রিট আবেদনকারী আইনজীবী ড. ইউনুচ আলী আকন্দ জানান, পূর্ণাঙ্গ রায়ে ধারাগুলো ৬০ দিনের মধ্যে বাতিল করতে শিক্ষা সচিব ও আইন সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমপিরা সভাপতি পদে আছেন, সেখানে ৩০ দিনের মধ্যে নির্বাচন এবং যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ কমিটি আছে, সেখানে ৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধ্যাদেশের (১৯৬১) আওতায় ‘মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা-২০০৯ এর ৫ ধারা (গভর্নিং বডির সভাপতি মনোনয়ন) এর (১) উপ-বিধিতে বলা হয়েছে, ‘কোনো স্থানীয় নির্বাচিত সংসদ সদস্য তার নির্বাচনী এলাকায় অবস্থিত বোর্ড কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এমন সংখ্যক উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতির দ্বায়িত্ব গ্রহণ করতে পারবেন’।
‘(২) উপ-বিধান ১ এর অধীন সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের জন্য স্থানীয় নির্বাচিত সংসদ সদস্য, তার নির্বাচনী এলাকায় অবস্থিত যেসব উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব গ্রহণ করতে ইচ্ছুক তার উল্লেখসহ লিখিতভাবে এ প্রবিধানমালার অধীন বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে তার অভিপ্রায় ব্যক্ত করবেন এবং এ অভিপ্রায়পত্র সংশ্লিষ্ট বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানগুলোর সভাপতি হিসেবে তার মনোনয়ন হিসেবে গণ্য হবে’।
৫০ ধারায় বলা হয়েছে, ‘বিশেষ ধরনের গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটি- বিশেষ পরিস্থিতিতে বোর্ড এবং সরকারের পূর্বানুমোদক্রমে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের কোনো বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষ ধরনের গভর্নিং বডি বা ক্ষেত্রমতে ম্যানেজিং কমিটি করা যাবে’।
গত ১২ জুন হাইকোর্টের দেওয়া রায়টি বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
হাইকোর্টের রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে গত ৮ জুন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন রাষ্ট্রপক্ষ। ওইদিন স্থগিতাদেশ না দিয়ে আবেদনটি ১২ জুন শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন চেম্বার বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
আবেদনের শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সর্বোচ্চ আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের বিষয়ে নো অর্ডার দিয়ে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকবে বলে উল্লেখ করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। রিট আবেদনকারী আইনজীবী ড. ইউনুচ আলী আকন্দ নিজেই শুনানি করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২১২ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৬
ইএস/এএসআর