ঢাকা: ‘মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার মামলায় রিভিউ আবেদন দাখিলের একদিন, মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের মামলায় ৩১ দিন, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলায় ৩৪ দিন এবং মতিউর রহমান নিজামীর মামলায় ৩৭ দিনের মাথায় শুনানি হয়েছে। কিন্তু মীর কাসেম আলীর মামলায় রিভিউ আবেদন দায়ের হয়েছে গত ১৯ জুন, আজ (বুধবার) পর্যন্ত ৬৬ দিন চলে গেছে’।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য মীর কাসেমের রিভিউ আবেদনের শুনানি শুরু হয়ে মুলতবি হওয়ার পর বুধবার (২৪ আগস্ট) বিফ্রিংয়ে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
সকাল পৌনে দশটায় রিভিউ আবেদনের শুনানি শুরু হওয়ার পর দুই মিনিট শুনানি করেন মীর কাসেমের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। পরে তার আবেদনে আগামী রোববার (২৮ আগস্ট) পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেছেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চে শুনানি চলছে। অন্য বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও মোহাম্মদ বজলুর রহমান।
মাহবুবে আলম বলেন, ‘এ পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধের মামলায় কাদের মোল্লার রিভিউ আবেদন যেদিন দায়ের করা হয়েছে, তার পরদিনই শুনানি হয়েছে। কামারুজ্জামানের মামলায় রিভিউ দায়েরের ৩১ দিনের মাথায় শুনানি হয়েছে। মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদেরের মামলায় ৩৪ দিন, নিজামীর মামলায় ৩৭ দিনের মাথায় রিভিউ শুনানি হয়েছে। মীর কাসেমের মামলায় রিভিউ দায়ের হয়েছে গত ১৯ জুন, আজ পর্যন্ত ৬৬ দিন চলে গেছে’।
তিনি বলেন, ‘নানা অজুহাতে তারা (আসামিপক্ষের আইনজীবীরা) বলেছেন, মীর কাসেমের ছেলেকে পাওয়া যাচ্ছে না। সেজন্য আইনজীবী সময় চেয়েছেন। আপিল বিভাগ তাদের এ বক্তব্য গ্রহণ করেননি। আপিল বিভাগ শুনানি শুরু করতে বলেছেন। আগামী রোববার (২৮ আগস্ট) বাকি শুনানিতে অংশগ্রহণ করবেন বলে কথা দিয়েছেন, ওইদিন শুনানি শেষ হবে বলে আমরা আশা করি’।
অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, আদালত বলেছেন, আইনে রিভিউ আবেদনের কোনো বিধান নাই। রিভিউ যে নেই- সে বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জোরালো যুক্তি তুলে ধরা হয়েছিলো। তবে ন্যায়বিচারের স্বার্থে আপিল বিভাগ তার সহজাত ক্ষমতায় তা দিয়েছেন।
মাহবুবে আলম বলেন, ‘সবগুলো রিভিউ গড়ে ৩০-৩৫ দিনের মাথায় নিষ্পত্তি করা হয়েছে। মীর কাসেম আলীর আজ ৬৬ দিন পার হয়ে গেছে। এ অবস্থায় তারা আরও একমাস মুলতবির আবেদন জানালেও আদালত তা গ্রহণ করেননি। এটাতো নিশ্চয়ই এই যে, সব প্রার্থনা করা হচ্ছে যেন, মীর কাসেমের ছেলে না থাকলে মামলার শুনানি হবে না’।
‘এটাতো কোনো রকম যৌক্তিক কথা বলে আমি মনে করি না। প্রধান বিচারপতি সঠিকভাবেই আজকে আসামিপক্ষের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন এবং তাদের আইনজীবীকে বক্তব্য উপস্থাপন করতে বলেছেন’।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে গত ০৮ মার্চ মীর কাসেম আলীর মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার সংক্ষিপ্ত আকারে চূড়ান্ত রায় দেন সর্বোচ্চ আদালত। রায়ে শহীদ কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিনসহ ছয়জনকে হত্যা-গণহত্যার দায়ে ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম অঞ্চলে মানবতাবিরোধী অপরাধের মূল হোতা মীর কাসেম আলীর।
গত ০৬ জুন ২৪৪ পৃষ্ঠার পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন আপিল বিভাগ।
এরপর গত ১৯ জুন ৬৮ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদন করেন মীর কাসেম আলী। এতে ফাঁসির রায় বাতিল করে খালাস ও অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আরজি জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে আলবদর বাহিনীর তৃতীয় এই শীর্ষনেতা।
রিভিউ আবেদনে সর্বোচ্চ সাজার বিরুদ্ধে মোট ১৪টি যুক্তি দেখানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৬
ইএস/এএসআর