ঢাকা: মিরপুরের আগারগাঁওয়ে খাল দখল করে মমতা কো-অপারেটিভ সোসাইটির ১৭তলা মার্কেট নির্মাণ কাজ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
জনস্বার্থে দায়ের করা রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার (৩০ নভেম্বর) এ আদেশ দেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
‘ঢাকার আরেকটি খাল মৃত্যুমুখে’ শীর্ষক শিরোনামে ২ নভেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে রিট করা হয়।
পরে মনজিল মোরসেদ জানান, আদালত এ আদেশ ছাড়া রুল জারি করেন।
রুলে খাল দখল করে ভবন নির্মাণে ব্যবস্থা নিতে বিবাদী নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, নিজ খরচে মমতা হাউজিং সোসাইটির মাটি ভরাট অপসারণে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং সিএস ও আরএস অনুসারে খালটি সংরক্ষণে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন।
চার সপ্তাহের মধ্যে পরিবেশ সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী, ঢাকা জেলা প্রশাসক, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার, মিরপুরের এসি ল্যান্ড, মমতা হাউজিং সোসাইটিসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আগারগাঁও-শ্যামলী লিংক রোডের বাংলাদেশ বেতারের পাশ দিয়ে মিরপুরের দিকে চলে গেছে ৬০ ফুট প্রশস্ত সড়ক। এ সড়ক ধরে তিনশ' ফুট এগোলেই তিতাস গ্যাসের প্রধান কার্যালয়ের নবনির্মিত বহুতল ভবন। এর আগেই রাস্তার পশ্চিম পাশ দিয়ে চলে গেছে খালটি। কিছু দূর এগিয়ে বাঁয়ে বাঁক নিয়ে খালটি অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। সেখানে একপাশে তৈরি হচ্ছে ১৭তলাবিশিষ্ট মমতা বহুমুখী সমবায় সমিতি শপিং কমপ্লেক্স’।
‘মমতা বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী বেলায়েত হোসেন নকশায় ৩০ ফুট খাল থাকার কথা স্বীকার করেন। তবে তারা কোনো খাল ভরাট বা দখল করেননি বলে দাবি করেন। ১৯৯৬ সালের দিকে তারা পূর্ত বিভাগ থেকে এক একর জমি বরাদ্দ নেন। এরও ২০ শতাংশ ছেড়ে তারা মার্কেটের নকশা করেছেন। তিনি বলেন, খাল দখলের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। দখল করেছে তাদের বিপরীত পাশের প্লটের মালিক। ’
‘এ বিষয়ে পূর্ত বিভাগের ওই এলাকার দায়িত্ব পালনকারী শেরে-বাংলা নগর গণপূর্ত বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আতাউর রহমানও ৩০ ফুট খালের কথা স্বীকার করেন। তিনি জানান, খালের কিছু জমি মমতা বহুমুখী সমবায় সমিতি শপিং কমপ্লেক্সের ভেতরে পড়েছে। সেটা ১০ ফুট হতে পারে। এটা ছেড়ে দেওয়া কোনো ব্যাপার নয়। ওই স্থানের বস্তিগুলো উচ্ছেদ করার জন্যই এটা করা হয়েছে। ওয়াসা খাল খনন করতে চাইলে খালের জমি ছেড়ে দেওয়া হবে। খালটি বেঁচে থাক, এটা তিনিও চান। কারণ খাল রক্ষার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। ’
সরেজমিনে দেখা যায়, খাল ভরাট করে সীমানাপ্রাচীর দেওয়া ওই জায়গায় ক্রেন দিয়ে একেকটি বড় বড় পিলার পাইলিংয়ের মেশিনে দেওয়া হচ্ছে। পাশেই দেখা যায়, সীমানা নির্দেশকের মতো কয়েকটি ছোট খুঁটি। স্থানীয়রা জানান, সমিতির বরাদ্দ নেওয়া জমির সীমানা ওই খুঁটি পর্যন্ত। এরপর বাকিটা খালের জায়গা। কিন্তু দেখা যায়, সেই খুঁটি থেকে আরও অন্তত ২০ ফুট সরে টিনের বেড়া দিয়ে নির্মাণ কাজ চলছে।
নির্মাণ কাজের সঙ্গে যুক্ত একজন জানান, ৫৩ কোটি টাকায় তারা শপিং কমপ্লেক্সের চারতলা পর্যন্ত নির্মাণ করে দেবেন। পুরো ভবনটি হবে ১৭ তলা। নিচে থাকবে গাড়ি পার্কিংয়ের দু’টি বেজমেন্ট। চারতলা পর্যন্ত হবে মার্কেট। ওপরে থাকবে ব্যাংক-বিমা বা অন্যান্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশ সময়:১৩২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০,২০১৬
ইএস/জেডএস