ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

যে বিধান পালন করেননি কেউ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৬
যে বিধান পালন করেননি কেউ

১৮০ দিন বা ছয়মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে না পারলে সুপ্রিম কোর্ট ও সরকারকে তার কারণ জানিয়ে প্রতিবেদন দিতে হবে। ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন- ২০০০’ এর এ বিধানটি এখন পর্যন্ত পালন করেননি কেউ।

ঢাকা: ১৮০ দিন বা ছয়মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে না পারলে সুপ্রিম কোর্ট ও সরকারকে তার কারণ জানিয়ে প্রতিবেদন দিতে হবে। ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন- ২০০০’ এর এ বিধানটি এখন পর্যন্ত পালন করেননি কেউ।

 

এ বিষয়ে সোমবার (০৫ ডিসেম্বর) হাইকোর্টে আইন সচিব ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের দেওয়া এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানা গেছে।
   
আইনের ২০ (৩) ধারা মতে, ‘বিচারের জন্য মামলা প্রাপ্তির তারিখ হইতে একশত আশি দিনের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল বিচারকার্য সমাপ্ত করিবে’৷
 
৩১ক (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোন মামলা ধারা ২০ এর উপ-ধারা (৩) এ উল্লিখিত সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি না হইবার ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালকে উহার কারণ লিপিবদ্ধ করিয়া একটি প্রতিবেদন ত্রিশ দিনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের নিকট দাখিল করিতে হইবে, যাহার একটি অনুলিপি সরকারের নিকট প্রেরণ করিতে হইবে’৷
 
‘(২) অনুরূপ ক্ষেত্রে পাবলিক প্রসিকিউটর ও সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাকেও উহার কারণ লিপিবদ্ধ করিয়া একটি প্রতিবেদন ত্রিশ দিনের মধ্যে সরকারের নিকট দাখিল করিতে হইবে, যাহার একটি অনুলিপি সুপ্রীম কোর্টে প্রেরণ করিতে হইবে’৷
 
‘(৩) উপ-ধারা (১) বা (২) এর অধীন পেশকৃত প্রতিবেদন পর্যালোচনার পর যথাযথ কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ার জন্য দায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন’৷
 
স্ত্রীকে হত্যার দায়ে মিলাদ হোসেন নামের নামের এক ব্যক্তির জামিনের আবেদনের শুনানি কালে আইন অনুসারে মামলাটি ১৮০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি না হওয়ায় বিষয়টি তার আইনজীবী কুমার দেবলু দে আদালতের নজরে আনেন। পরে হাইকোর্ট গত ০১ নভেম্বর আইনের ৩১ক ধারার কোনো প্রয়োগ আছে কি-না এবং সুপ্রিম কোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ অতীতে নিয়েছেন কি-না, তা জানতে চান।
 
আদালতের এ আদেশের প্রেক্ষিতে আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম হাইকোর্টে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
 
আইন সচিবের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৮০ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ার বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল, পিপি এবং পুলিশ কর্মকর্তাও কোনো প্রতিবেদন সুপ্রিম কোর্ট ও সরকারের কাছে দাখিল করেননি। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগও উত্থাপিত হয়নি। যার কারণে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। তা সত্ত্বেও আইনের সংশ্লিষ্ট ধারাটি প্রতিপালনে দেশের সকল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের দায়িত্বে নিয়োজিত পিপিদেরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
রেজিস্ট্রার জেনারেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারাদেশে ৫৪টি পূর্ণাঙ্গ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল রয়েছেন। এছাড়া ১৮টি জেলার জেলা ও দায়রা জজ অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারকের দায়িত্ব পালন করছেন। আইনের ৩১ক ধারা অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেন না। অথবা সরকারের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয় না।
 
হাইকোর্টের আদেশ পাওয়ার পরই সুপ্রিম কোর্ট এ সংক্রান্ত বিধান আবশ্যিকভাবে পালন করতে ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের প্রতি সার্কুলার জারি করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিবেদন প্রাপ্তির বিষয়ে নিয়মিতভাবে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে সকল তথ্য-উপাত্তসহ নথিও উপস্থাপনের জন্য হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এরপর আদালত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের বিধান পালনের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি বিধান পালন না করলে দায়িত্বে গাফিলতির কারণে পিপি ও তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা প্রতিবেদন আকারে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে দাখিলের জন্য আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন।

আইনজীবী কুমার দেবুল দে বলেন, ‘দীর্ঘ ১৬ বছরের গাফলতির বিষয়ে আদালতে বলেছিলাম। আদালত বলেছেন, ভবিষ্যতে যেন এ রকম না হয়, সে বিষয়ে আদেশ দেওয়া হয়েছে’।    

** ছয়মাসে নারী-শিশু মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ

বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৬
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।