ঢাকা: ‘অবশ্যই মামলাজটের দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে হবে। এ জন্য আমাদের পরিহার করতে হবে অপ্রয়োজনীয় সময়দানের সংস্কৃতি।
রোববার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় কর্ম অধিবেশনের শুরুতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।
সম্মেলনের সমাপণী দিনে জেলা জজ, অতিরিক্ত জেলা জজ ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং সমপর্যায়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘মানসম্মত সুবিচার প্রাপ্তির ক্রমবর্ধমান জন-আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে অবকাঠামোগত ঘাটতিসহ বহুবিধ সীমাবদ্ধতার মধ্যে আপনাদের কাজ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে বিনা বিলম্বে, স্বল্পব্যয়ে ও প্রকাশ্যে বিচারের মাধ্যমে আইনসম্মত সুবিচার প্রাপ্তি প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। আমরা নাগরিকদের মানসম্মত সুবিচার নিশ্চিতকরণে অঙ্গীকারবদ্ধ। এ ক্ষেত্রে কোনো সীমাবদ্ধতাই অজুহাত হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। ’
তিনি বলেন, ‘জেলা জজ জেলার জ্যেষ্ঠ বিচারক এবং জেলা পর্যায়ের বিচার প্রশাসনের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও বটে। অধীনস্থ বিচারক ও আদালত কর্মকর্তা/কর্মচারীরদের কার্যক্রম তত্ত্বাবধায়ন এবং জেলার বিচার ব্যবস্থায় সামগ্রিক মানোন্নয়নের দায়িত্ব জেলা জজের। এটা জেনে আমি ব্যথিত হয়েছি যে, কোনো জেলার জেলা জজ ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সম্পূর্ণ ব্যক্তিগতকারণে অনাকাঙ্খিত বিবাদে জড়িয়ে পড়ছেন। এটি জেলার সামগ্রিক বিচারব্যবস্থার ওপর অত্যন্ত বিরুপ প্রভাব ফেলছে। জ্যেষ্ঠ ও দায়িত্ববান কর্মকর্তা হওয়ার কারণে সংশ্লিষ্ট জেলা জজ তার প্রজ্ঞা ও সুবিবেচনার মাধ্যমে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাবেন এটাই আমার প্রত্যাশা। ’
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘আমাদের বিচার ব্যবস্থায় মামলাজট ও বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা জনগণের বিচার লাভের ক্ষেত্রে একটি বড় অন্তরায়। আমাদের নিম্ন আদালতে প্রায় ২৭ লাখ মামলার জট আমরা বয়ে বেড়াচ্ছি। অনিষ্পন্ন মামলার এ বোঝা আদালত ব্যবস্থাপনাকে করতে পারে গতিহীন। বাড়িয়ে দিতে পারে মামলার ব্যয়। এ কারণে মানুষ তার বিরোধকে আদালতে আনতে নিরুৎসাহিত হতে পারে। আগ্রহী হতে পারে বিচারবহির্ভূত পন্থায় অর্থ বা পেশিশক্তির মাধ্যমে সুবিধাজনক সমাধান পাওয়ার। ফলে আইনের শাসনের প্রতি জনগণের আস্থা শিথিল হতে পারে। সমাজে অসহিষ্ণুতা ও সংঘাতের প্রসার ঘটতে পারে। আমাদের অবশ্যই মামলাজটের দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে হবে। এ জন্য আমাদের পরিহার করতে হবে অপ্রয়োজনীয় সময়দানের সংস্কৃতি। আদালতের পুরো সময় বিচারকাজে ব্যয় করতে হবে। ’
‘আমি শুনতে পাই কোনো জেলা জজ মধ্যাহ্ন বিরতির পরে আদৌ বিচারকাজে বসেন না। এটা আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। কজলিস্টে এমনভাবে ও এ রকম সংখ্যায় মামলা রাখতে হবে যেন পুরো বিচারিক সময়ে আদালত কার্যরত থাকতে পারে’ বলে উল্লেখকরেন প্রধান বিচারপতি।
বিচারপতি এস কে সিনহা আরও বলেন, আইনজীবীরা আমাদের বিচারব্যবস্থার অপরিহার্য অঙ্গ। প্রকৃতপক্ষে, একজন আইনজীবী কোর্টের অফিসার। তার প্রাথমিক দায়িত্ব হলো সুবিচার নিশ্চিতকরণে আদালতকে সাহায্য করা। আইনজীবীদের যুক্তিসঙ্গত কোনো বৈধ দাবিদাওয়া থাকলে জেলা জজ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ও পরামর্শ অনুসারে ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু কোনোভাবেই আইন ও বিধির বাইরে পদক্ষেপ নেবেন না। ’
দ্বিতীয় কর্ম অধিবেশনে উপস্থিত রয়েছেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা ও বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীসহ সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারকগণ।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৬
ইএস/এসএইচ