৩৬ পৃষ্ঠার রায়টি লিখেছেন হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। একমত পোষণ করেছেন বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাস।
রায়ে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমে ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই প্রকাশিত ‘নির্ধারিত বোর্ড বই নিয়ে শিশুদের স্কুলে যাওয়ার আহ্বান’ প্রতিবেদনটির কথা উল্লেখ করা হয়।
গত বছরের ০৭ ডিসেম্বর রায়টি দেন হাইকোর্ট।
রায়ে প্রাথমিকে শিশুর শরীরের ১০ শতাংশের বেশি ওজনের ব্যাগ বহন নিষিদ্ধে ছয়মাসের মধ্যে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে ১০ শতাংশের বেশি ওজনের ব্যাগ বহন না করতে দেশের সকল বাংলা ও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ৩০ দিনের মধ্যে একটি সার্কুলার জারি করতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ আদেশ না মানলে সংশ্লিষ্টদের প্রতি ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে।
স্কুলে শিশুদের ব্যাগ বহন নিয়ে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী মাসুদ হোসাইন দোলন, মোহাম্মদ জিয়াউল হক ও আনোয়ারুল করিম।
এরপর গত বছরের ১১ আগস্ট রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
রায়ের পরে ০৭ ডিসেম্বর মাসুদ হোসেন দোলন বলেন, আদালত রায়ে বলেছেন- ১০ শতাংশের বেশি ওজনের ব্যাগ বহন করলে শিশুদের শরীরে ইনজুরি হয়। যেটা সারা জীবন বহন করতে হয়। তাই শিশুর ওজনের ১০ শতাংশের বেশি নয়, এমন ওজনের ব্যাগ বহন নিষিদ্ধে ছয়মাসের দিনের মধ্যে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ আদেশ বাস্তবায়ন করবেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব এবং প্রাথমিক গণশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক।
একইসঙ্গে ১০ শতাংশের বেশি ওজনের ব্যাগ বহন না করতে দেশের সকল বাংলা ও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ৩০ দিনের মধ্যে একটি সার্কুলার জারি করতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ আদেশ না মানলে সংশ্লিষ্টদের প্রতি ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে বলেও জানান আইনজীবী দোলন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।
রিট আবেদনে বলা হয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে স্কুল শিশুদের ব্যাগ বহনে আইন রয়েছে। এতে দেখা যায়, প্রাথমিক পূর্ব শিশুরা ব্যাগ গ্রহণ করে না। প্রাথমিক পর্যায়ের শিশুদের ক্ষেত্রে শিশুর ওজনের ১০ শতাংশের বেশি ওজনের ব্যাগ বহন করা যায় না। এতে শিশুর স্বাস্থ্যে প্রভাব পড়ে।
রিট আবেদনে বিভিন্ন গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদন যুক্ত করা হয়।
ওইসব প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘জীবনই যদি না বাঁচল, তবে তা আবার কেমন ধারার পড়ালেখা? দিল্লিতে শুরু হলো স্বাক্ষর সংগ্রহ। তার পরিপ্রেক্ষিতে কোন ক্লাসের শিশুরা সর্বোচ্চ কত ওজনের ব্যাগ বইতে পারবে, সে ব্যাপারে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় নীতিমালায় নির্দেশনাও দেওয়া হয়। দিল্লি হাইকোর্ট প্রাক্ স্কুল পর্যায়ে ব্যাগের ওজন শিশুর ওজনের ১০ শতাংশের কম করার নির্দেশ জারি করেন’।
‘সম্প্রতি ইন্ডিয়ান জার্নাল অব পেডিয়াট্রিকসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩০ শতাংশ শিশু বেশি ওজনের ব্যাগ বহনের কারণে পিঠে ব্যথায় ভুগছে। আরেক প্রতিবেদনে ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন উদ্বেগ জানিয়ে বলেছে, বেশি ওজনের ব্যাগ বহনের কারণে শিশুদের স্থায়ী শারীরিক ক্ষতি হয়ে থাকে। বয়ঃসন্ধিকালে হাড়ের কাঠামো ঠিক হয়। এ সময় বেশি ওজন বহন করা একেবারে অনুচিত’।
‘আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতেও শিশুরা এভাবে ভুগছে। গত বছর দেশটির ফেডারেল ন্যাশনাল কাউন্সিল সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ভারি ব্যাগ বহনের কারণে শিশুদের মেরুদণ্ডের স্থায়ী ক্ষতি হচ্ছে। স্পেনেও আছে একই সমস্যা। দেশটির ‘আর্কাইভস অব ডিজিজ ইন চাইল্ডহুড’ শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়েছে, স্কুলব্যাগের অতিরিক্ত ওজনে শিশুর পিঠ ব্যথাসহ নানা শারীরিক সমস্যা হয়। একই অবস্থা পাকিস্তানের শিশুদেরও’।
বাংলাদেশ সময়: ২১২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৬
ইএস/এএসআর