ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

প্রথম বাঙালি সেনার যুদ্ধাপরাধের তদন্ত প্রতিবেদন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৭
প্রথম বাঙালি সেনার যুদ্ধাপরাধের তদন্ত প্রতিবেদন

ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালিদের সহযোগিতা না করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পক্ষে ঢাকা ও কুমিল্লায় হত্যাযজ্ঞে লিপ্ত হওয়া ক্যাপ্টেন (অব.) মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ’র বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

মঙ্গলবার (২১ মার্চ) তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার ৫১তম এ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার আমিরাবাদ এলাকার জিন্নত আলীর ছেলে শহীদুল্লাহ্‌ (৭৫) গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আটক আছেন।

তার বিরুদ্ধে হত্যা, আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের তিনটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।

এর মধ্যে রয়েছে ৩ জনকে হত্যা, ১৩ জনকে আটক ও নির্যাতন এবং ৫টি বাড়িতে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগে ধ্বংসের অভিযোগ। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি এলাকায় তিনি এসব অপরাধ করেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ (ক্যাপ্টেন অব.) পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করে পশ্চিম পাকিস্তানে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে নিজ বাড়িতে আসেন’।

‘মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি পশ্চিম পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান না করে ঢাকা সেনানিবাসে পাকিস্তানি দখলদার সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ঢাকা সেনানিবাস থেকে কুমিল্লার পাকিস্তানি দখলদার সেনানিবাসে যোগদান করেন। কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে পাকিস্তানি দখলদার সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে নিজ এলাকা দাউদকান্দি থানা সদরে ক্যাম্প স্থাপন করেন এবং এলাকায় অন্যায় আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাসহ অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘঠনে লিপ্ত থাকেন’।

শহীদুল্লাহ্‌’র বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর তদন্ত শুরু হয়ে সোমবার (২০ মার্চ) শেষ হয়।

তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান জানান, তদন্ত প্রতিবেদনটি শিগগিরই প্রসিকিউশনের কাছে জমা দেওয়া হবে। এর ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) তৈরি করে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করবেন প্রসিকিউশন।

প্রসিকিউশনের আবেদনে গত বছরের ০২ আগস্ট ক্যাপ্টেন শহিদুল্লাহ্‌’র বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। ওইদিনই রাত ১টায় আমিরাবাদ গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে দাউদকান্দি থানা পুলিশ। পরদিন ০৩ আগস্ট হাজির করা হলে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন ট্রাইব্যুনাল।

শহীদুল্লাহ্‌’র বিরুদ্ধে তিন অভিযোগ
প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ০৭ জুন শহীদুল্লাহ্‌ পাকিস্তানি দখলদার সেনাবাহিনীর ৮/১০ জন সদস্যসহ কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার দাউদকান্দি বাজারে হোমিও ওষুধের দোকানে হামলা চালিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ডা. হাবিবুর রহমানকে আটক করে পাকিস্তানি দখলদার সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে নির্যাতন করেন। পরে দাউদকান্দি ফেরিঘাট সংলগ্ন গোমতি নদীতে নিয়ে হত্যা করে মরদেহ নদীতে ফেলে দেন।
 
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১৬ জুন মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ পাকিস্তানি দখলদার সেনাবাহিনীর ৪০/৫০ জন সদস্যসহ দাউদকান্দির উত্তর ইউনিয়নের চেঙ্গাকান্দি ও গোলাপেরচর গ্রামে হামলা চালিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের নিরীহ নিরস্ত্র ২০ জনকে অন্যায় আটক করে নির্যাতন, ৫টি বাড়ির মালামাল লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগে ধ্বংস করেন। আটককৃত ২০ জনের মধ্যে ৫ জনকে ছেড়ে দিয়ে ১৫ জনকে মান্নান ফরাজীর বাড়ির সামনে এনে মান্নান ফরাজীর একটি বড় গরু জবাই করে জবাইকৃত গরুর ২ রান নিয়ে আটককৃত একজনকে ছেড়ে দেন। এরপর আটককৃত ১৪ জনকে দাউদকান্দি সেনা ক্যাম্পে নেওয়ার পথে গোলাপেরচর টেকে এনে লাইনে দাঁড় করান। লাইন থেকে একজনকে বের করে ৫০/৬০ হাত দূরে গোমতী নদীর কিনারে নিয়ে মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ্ একজনকে গুলি করে হত্যা করে মরদেহ নদীর কিনারে ফেলে দেন। আটককৃত ১৩ জনকে নিয়ে নৌকাযোগে দাউদকান্দি পাকিস্তানি দখলদার সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে এনে নির্যাতন করে মুক্তিযোদ্ধাদের খবরা-খবর দিতে এবং হত্যার ঘটনা কাউকে না জানানোর শর্তে সন্ধ্যার আগে ছেড়ে দেন।
 
তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২১ জুলাই শহিদুল্লাহ্ পাকিস্তানি দখলদার সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে দাউদকান্দি  বাজারে হামলা চালিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নিরীহ নিরস্ত্র ড্রাইভার কালা মিয়াকে আটক ও নির্যাতন করে পাকিস্তানি সেনাদের গাড়িতে তুলে চান্দিনা হাসপাতালের পেছনে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে মরদেহ খালে ফেলে দেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৭
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।