ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

পদ্মাসেতু: তদন্ত কমিশন গঠন প্রক্রিয়াধীন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩৩ ঘণ্টা, মে ৯, ২০১৭
পদ্মাসেতু: তদন্ত কমিশন গঠন প্রক্রিয়াধীন সুপ্রিম কোর্ট

ঢাকা: পদ্মাসেতু নির্মাণ চুক্তি এবং দুর্নীতির মিথ্যা গল্প সৃষ্টির নেপথ্যে প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিশন গঠনের অগ্রগতি প্রতিবেদন আগামী ০৩ জুলাইয়ের মধ্যে দিতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

তদন্ত কমিশন গঠনের বিষয়ে সরকারের দেওয়া প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে মঙ্গলবার (০৯ মে) এ নির্দেশ দেন বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ’র হাইকোর্ট বেঞ্চ।

প্রতিবেদনে রাষ্ট্রপক্ষ জানিয়েছেন, তদন্ত কমিশন গঠনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল টাইটাস হিল্লোল রেমা। তিনি পরে জানান, হাইকোর্টের আগের নির্দেশের পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে যে আইনে তদন্ত কমিশন গঠন করা হবে, সে আইনের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে আইন মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে এ বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। আদালত আগামী ০৩ জুলাইয়ের মধ্যে পরবর্তী অগ্রগতি জানাতে বলেছেন।

এদিকে এ মামলায় পক্ষভুক্ত হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের সচিব।  

এ বিষয়ে জারি করা রুলের শুনানি শেষে গত ২০ মার্চ তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে কি-না, তা জানাতে ০৭ মে’র মধ্যে প্রতিবেদন দিতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন একই হাইকোর্ট বেঞ্চ। গত রোববারই (০৭ মে) রাষ্ট্রপক্ষ প্রতিবেদনটি জমা দিলে মঙ্গলবার শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসে।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে ‘ইনকোয়ারি অ্যাক্ট ১৯৬৫ (৩ ধারা)’ অনুসারে তদন্ত কমিটি বা কমিশন গঠনের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং দোষীদের কেন বিচারের মুখোমুখি করা হবে না- তা জানতে চেয়ে স্বতপ্রণোদিত রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

দুই সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র, আইন ও যোগাযোগ সচিব এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

এ কমিটি বা কমিশন গঠনের বিষয়ে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতেও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

২০ মার্চ রুলের জবাব ও প্রতিবেদন দিতে আট সপ্তাহের সময়ের আবেদন জানান রাষ্ট্রপক্ষ। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে ০৭ মে পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে দেন হাইকোর্ট।

দৈনিক ইনকিলাবে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ইউনূসের বিচার দাবি: আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলো একাট্টা’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদের কথা উল্লেখ করে এ রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদ্মাসেতু নির্মাণে অর্থায়নের সিদ্ধান্ত থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়ার ঘটনা গোটা বিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি করে। আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোতে ওই ঘটনা ফলাও করে প্রচার করায় বাংলাদেশ এবং বর্তমান সরকারের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়। সাড়ে তিন বছর আগের ওই ঘটনার পর বিশ্বব্যাংকের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি কিছু ব্যক্তিত্বের দৌড়ঝাপ, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের ক্রিয়াকর্ম ও মিডিয়ার অতি উৎসাহ পদ্মাসেতু ইস্যুতে সরকারতে বিপাকে ফেলে দেয়। যা ছিল সরকারের জন্য চরম অবমাননাকর’।

‘কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। পদ্মাসেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন থেকে সরে যাওয়ার কারণ পর্দার আড়ালে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস কলকাঠি নাড়ছেন বলে মনে করে সরকার’।

‘কানাডার আদালত পদ্মাসেতু দুর্নীতির মামলা খারিজ করে দেয়ার পর সরব হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের সমমনা দলগুলো। তারা এখন মনে করছেন, ওই সময় পদ্মাসেতু ইস্যুতে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের সরকারের ভাবমর্যাদা নষ্ট করায় ড. ইউনূসকে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত’।

‘জাসদের নেতা মঈন উদ্দিন খান বাদল ঘোষণা দিয়েছেন, সিদ্ধান্ত হলে তিনি এবং মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন যৌথভাবে ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার বাদী হবেন। বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিত্ব ক্ষুদ্র ঋণের জনক ড. ইউনূসের বিচারের মুখোমুখি করার দাবিতে সংসদে থাকা দলগুলো কার্যত একাট্টা হয়েছে’।

‘কানাডার একটি আদালত পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতি ষড়যন্ত্র মামলা খারিজ করে দিয়ে অভিযুক্তদের বেকসুর খালাস দেয়ার পর আলোচিত এ ইস্যুতে সামনে নিয়ে এসেছে আওয়ামী লীগ। দলটি জাতীয় সংসদে ও সংসদের বাইরে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ড. ইউনূস ও জার্মানির অর্থে পরিচালিত দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা টিআইবি’র ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাদের দাবি, দেশের যারা পদ্মাসেতু নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছেন এবং বিশ্বব্যাংকের পক্ষ নিয়ে কথা বলেছেন, তাদের সবাইকে জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে’।

‘পদ্মাসেতু নির্মাণে বিলম্ব হওয়ায় যে অধিক অর্থ ব্যয় হচ্ছে, সে ক্ষতিপূরণ বিশ্বব্যাংককে দিতে হবে। প্রয়োজনে বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করারও দাবি জানানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী দল জাতীয় পার্টি, জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারা ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের দাবি করে বলেছেন, পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ‘গালগপ্পের’ অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাতিলের সিদ্ধান্তে ইন্ধন যুগিয়েছেন গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহম্মদ ইউনূস’।

‘এজন্য ড. ইউনূসকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। শুধু তাই নয়, এ ইস্যুতে সব ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের আওতায় আনারও দাবি জানানো হয়’।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৫ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০১৭
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।