ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

লাল সালু উঠে যাচ্ছে শিশু আদালত থেকে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৫ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৭
লাল সালু উঠে যাচ্ছে শিশু আদালত থেকে

ঢাকা: আইনের অনুসরণ না করে প্রচলিত কাঠগড়া ও লাল সালু ঘেরা আদালতে শিশু আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে- সুপ্রিম কোর্টের এমন তথ্যের পর তা পরিবর্তনে কাজ শুরু করেছে ইউনিসেফ।

শিশুবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতে শিশু আদালতের এজলাস, ডক, কাঠগড়াসহ আনুষঙ্গিক উন্নয়নমূলক কাজ শুরু করছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের বাংলাদেশ কার্যালয়।

এজন্য গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ইউনিসেফ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে ‘এমওইউ’ স্বাক্ষর করেছে।

সুপ্রিম কোর্ট স্পেশাল কমিটি ফর চাইল্ড রাইটসের ১৪তম সভায় ইউনিসেফের এ কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করতে সহায়তার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
 
এ সিদ্ধান্ত অনুসারে শিশু আদালতে শিশুবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতে ইউনিসেফকে সার্বিক সহযোগিতা করতে সকল জেলা জজ আদালত ও শিশু আদালতসহ সংশ্লিস্ট সকলকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
 
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নির্দেশে গত বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) এ আদেশ জারি করেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন।
 
এর আগে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে সার্কুলার জারি করেন সুপ্রিম কোর্ট। ওই সার্কুলারে শিশু আইনের বাইরে গিয়ে প্রচলিত আদালতের কাঠগড়া ও লাল সালু ঘেরা আদালতে শিশু আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্ট বলছেন, ‘যা শিশু ‌আইনের লঙ্ঘন’।
 
এছাড়াও ‘শিশুদের জন্য আদালত কক্ষের বাইরে আলাদা ওয়েটিং রুমের ব্যবস্থা, শিশু কল্যাণের কথা বিবেচনা করে শিশুকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি প্রদানের ব্যবস্থা নিতে হবে। যেসব আদালতে ভিডিও কনফারেন্সিং এর সুবিধা আছে, সে সকল আদালতে ভিডিও লিংক ব্যবহার করে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়ে শিশুর কার্যত উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে’।  
 
সার্কুলারে বলা হয়, ‘শিশু আইন, ২০১৩ এর ১৬ ধারা অনুসারে প্রত্যেক জেলা এবং মেট্টোপলিটন এলাকার এক বা একাধিক অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতকে শিশু আদালত হিসাবে নির্ধারণ করার বিধান রয়েছে’।

‘সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল কমিটি ফর চাইল্ড রাইটসের গোচরীভূত হয়েছে যে, শিশু আইন, ২০১৩ বলবৎ থাকা সত্বেও প্রচলিত আদালতের কাঠগড়া ও লাল সালু ঘেরা আদালত কক্ষে শিশু আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, যা শিশুর জন্য উপযুক্ত নয় এবং শিশু আইনের লঙ্ঘন’।
 
আইনের ১৭ (৪) ধারার বিষয়ে উল্লেখ করে বলা হয়, ‘সাধারণত যে সকল দালান বা কামরায় এবং যে সকল দিবস ও সময়ে প্রচলিত আদালতের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়, তা ছাড়া যতোদূর সম্ভব অন্য কোনো দালান বা কামরায়, প্রচলিত আদালতের মতো কাঠগড়া ও লাল সালু ঘেরা আদালত কক্ষের পরিবর্তে একটি সাধারণ কক্ষে এবং অন্য কোনো দিবস ও সময়ে প্রাপ্তবয়ষ্ক ব্যক্তি ছাড়া শুধুমাত্র শিশুর ক্ষেত্রে শিশু আদালতের অধিবেশন অনুষ্ঠান করার বিধান থাকা সত্বেও বাস্তবে তা প্রতিপালিত হচ্ছে না’।
 
‘শিশু আদালতের অধিবেশনের জন্য আলাদা কক্ষের ব্যবস্থা করা না গেলে পর্দা দিয়ে এজলাস কক্ষ, ডক, কাঠগড়া ঢেকে শিশুর জন্য উপযুক্ত পরিবেশের ব্যবস্থা করতে হবে। এটি সম্ভব না হলে আদালতের বিচারক তার খাস কামরায় শিশু আদালতের বিচারকাজ পরিচালনা করবেন। এছাড়া শিশু আদালতের পাশে শিশুর জন্য উপযুক্ত পরিবেশসম্মত একটি অপেক্ষা কক্ষের ব্যবস্থা করতে হবে, যেন মামলা শুনানির আগে-পরে শিশুরা সেখানে অবস্থান করতে পারে’।

১৯ ধারার বিষয়ে সার্কুলারে বলা হয়, ‘শিশু আদালতের কক্ষের বিন্যাস, সাজসজ্জা ও আসন ব্যবস্থা বিধি দ্বারা নির্ধারিত হবে। এটি নিশ্চিত করতে হবে যে, বিচার চলাকালে শিশুর মা-বাবা এবং তাদের অবর্তমানে তত্ত্বাবধানকারী অভিভাবক বা কর্তৃপক্ষ অথবা আইনানুগ বৈধ অভিভাবক বা ক্ষেত্রমতে বর্ধিত পরিবারের সদস্যরা এবং প্রবেশন কর্মকর্তা ও তার আইনজীবীরা যতোদূর সম্ভব কাছাকাছি বসতে পারবেন’।
 
‘আদালতে শিশুর জন্য উপযুক্ত আসন এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য ক্ষেত্রমতো, বিশেষ ধরনের আসনের ব্যবস্থা করতে হবে। শিশুর বিচার চলাকালে বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ বা আদালতের কোনো কর্মচারী আদালত কক্ষে পেশাগত বা দাফতরিক ইউনিফরম পরবেন না’।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৬২৩ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৭
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।