ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

দুপুরের খাবার হাজতখানায়ই পাচ্ছেন হাজতিরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৭
দুপুরের খাবার হাজতখানায়ই পাচ্ছেন হাজতিরা দুপুরের খাবার হাজতখানায়ই পাচ্ছেন হাজতিরা

পিরোজপুর: পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ মো. গোলাম কিবরিয়ার উদ্যোগে দুইশ’ বছরের পুরনো প্রথা ভেঙে হাজতিদের দুপুরের খাবার আদালতের হাজতখানায়ই দেওয়া হচ্ছে। বারান্দায় বিচারপ্রার্থীদের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানি, পর্যাপ্ত সংখ্যক বেঞ্চ ও সিলিং ফ্যানেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতেও অনন্য রেকর্ড করেছেন তিনি।

সরকারি কৌসুলি (পিপি) খান মো. আলাউদ্দিন জানান, ২০১৫ সালের ৩১ মার্চ জেলা ও দায়রা জজ মো. গোলাম কিবরিয়া পিরোজপুরে যোগদানের পর একদিন আদালত চলাকালে হাজতখানার দিক থেকে হই-চইয়ের আওয়াজ শুনতে পান।

অনুসন্ধান করে জানতে পারেন, হাজতিদের অধিকাংশই সকালে দু’টি রুটি খেয়ে আদালতে এসেছেন এবং সারাদিন অভূক্ত আছেন। কারাগারে নিতে দেরি হলে রাতের খাবারও হয়তো পাবেন না- এ আশঙ্কায় দ্রুত ফিরিয়ে নিতে হই-চই করছেন।

এর কয়েকদিন পর তিনি পিরোজপুর জেলা কারাগার পরিদর্শনে গিয়ে জানতে পারেন যে, আদালতে পাঠানোর সময় হাজতিদের দুপুরের খাবার হিসেবে চিড়া-গুড় সঙ্গে দেওয়া হয়। কারাগারে ফেরার পর একবারে রাতের খাবার পান হাজতিরা।

পরে জেলা জজ জেলা আইনগত সহায়তা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেন, কারা কর্তৃপক্ষ হাজতিদের দুপুরের খাবার আদালতের হাজতখানায় সরবরাহ করবেন এবং দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা পরিবেশনের তদারকি করবেন।

২০১৫ সালের জুলাই মাস থেকে এ ব্যবস্থা অব্যাহত আছে। মো. গোলাম কিবরিয়ার এ অনুসরণীয় মহৎ উদ্যোগ ইতোমধ্যেই মাদারীপুরসহ আরো কয়েকটি জেলায় চালু হয়েছে বলেও জানান পিপি আলাউদ্দিন।

পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ ‍আদালত

সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলা জজ আদালত ভবনে বিচারপ্রার্থী এবং আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহে পিরোজপুর পৌরসভার সহায়তায় রিভার্স ওসমোসিস টেকনোলজির তিনটি আধুনিক পানি বিশুদ্ধকরণ মেশিন, প্রত্যেকটি ফ্লোরের বারান্দায় পর্যাপ্ত সংখ্যক বসার বেঞ্চ ও সিলিং ফ্যান স্থাপিত হয়েছে।

পিপি জানান, আইনগতভাবে ভিত্তিহীন ডান্ডা-বেড়ি নিষিদ্ধ করে বেআইনি অবমাননাকর শাস্তি রোধ ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে কার্যকর ভূমিকাও পালন করেছেন পিরোজপুরের জেলা জজ মো. গোলাম কিবরিয়া। তার নির্দেশে গত দু’বছর ধরে কারাগার থেকে আদালতে আনা-নেওয়ার সময় কোনো বিচারাধীন বন্দিকে ডান্ডা-বেড়ি পরানো হচ্ছে না।

পিপি আরও জানান, বিচারের জন্য মামলা বদলির পর জামিনে থাকা আসামিদের ফের জামিনের আবেদন ও জামিননামা দাখিলের নিয়ম পিরোজপুরসহ দেশের সব আদালতে প্রচলিত রয়েছে। এতে আসামিদের অহেতুক খরচ ও হয়রানি হতে হয়। প্রকৃতপক্ষে দায়রা জজ আদালতে যে জামিননামা দাখিল করা হয়, নথি বদলি করা হলেও তা বহাল থাকে। সেহেতু নতুনভাবে জামিনের আবেদন বা জামিননামা দাখিলের কোনো প্রয়োজন পড়ে না।

আসামিদের অহেতুক ভোগান্তি লাঘবে পিরোজপুরের জেলা জজ ফের জামিনের আবেদন করার ভোগান্তি থেকেও নিষ্কৃতি দিয়েছেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, যোগদানের পর দ্রুত মামলা নিষ্পত্তিরও উদ্যোগ নেন মো. গোলাম কিবরিয়া।

এর আগে ২০১৪ সালে পিরোজপুরের আদালতে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা ছিল ১৩ হাজার ৮১৭টি, নিষ্পত্তি হয় ২ হাজার ৫২৭টি। তিনি যোগ দেওয়ার পর ২০১৫ সালে ২০ হাজার ১৪১টির মধ্যে ৪ হাজার ১০৭টি ও ২০১৬ সালে ২১ হাজার ৪৪২টির মধ্যে ৪ হাজার ৫৫৪টি মামলার নিষ্পত্তি হয়।

আদালত সূত্রের আশাবাদ, পিরোজপুর জেলা জজশিপে ১১টি পদের মধ্যে দু’জন সহকারী জজ এবং ৮টি জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসিতে ৪টি জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের পদ শূন্য আছে। বিচারকদের শূন্য পদগুলো পূরণ করা হলে মামলা নিষ্পত্তির হার দ্বিগুণ করে মামলার জট নিরসন সম্ভব।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।