ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

সাত খুনের ডেথ রেফারেন্স-আপিল শুনানি ‘শেষ পর্যায়ে’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৪ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৭
সাত খুনের ডেথ রেফারেন্স-আপিল শুনানি ‘শেষ পর্যায়ে’

ঢাকা: নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের দুই মামলায় ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে শুনানি শেষ হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ মামলার আপিল শুনানি অব্যাহত রয়েছে।
 
গত ২২ মে থেকে দুই মামলায় আপিল শুনানি চলছে।

এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ কার্যদিবসের মতো শুনানি হয়েছে।
 
গত ১৬ জানুয়ারি চাঞ্চল্যকর সাত খুনের দুই মামলার রায়ে নূর হোসেন ও র্যাবের বরখাস্তকৃত তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালত। ৩৫ জন আসামির মধ্যে বাকি ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এরপর হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখা মামলার সব নথি বিজি প্রেসে পাঠানো হয়। এরপরই বিজি প্রেস পেপারবুক প্রস্তুত করে ০৭ মে হাইকোর্টে পাঠায়।
 
এরপর প্রয়োজনীয় আইনি কাজ শেষে ২২ মে থেকে আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শুরু হয়। ওই দিন পেপারবুক থেকে রায় পড়া শুরু করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এম এ মান্নান্ন মোহন। পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতে এসে  ডেপুটি অ্যাটির্নি জেনারেল জাহিদ সরওয়ার কাজল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে থাকবে বলে অবহিত করেন।

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানিতে অংশ নেন।
 
শুনানিতে মাহবুবে আলম বলেন, এ ঘটনাটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। র‌্যাবের তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মাসুদ রানা ও আরিফ হোসেন পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত করেছেন।    
 
জাহিদ সারোয়ার কাজল বাংলানিউজকে বলেন, গত ২২ মে থেকে এ মামলার আপিল শুনানি শুরু হয়। প্রায় ৩০ কার‌্যদিবস শুনানি হয়েছে। শুনানি  প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
 
আসামিপক্ষে শুনানি করছেন আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী, এস এম শাহজাহান প্রমুখ।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২৬ জনের মধ্যে গ্রেফতার ও আত্মসমর্পণ করে কারাগারে থাকা  ২০ জন নিয়মিত ও জেল আপিল করেছেন। তারা হচ্ছেন- প্রধান আসামি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র্যাব-১১’র চাকরিচ্যুত সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মুহাম্মদ, মেজর (অব.) আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার (অব.) মাসুদ রানা, হাবিলদার মো. এমদাদুল হক, ল্যান্সনায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহী আবু তৈয়্যব আলী,  কনস্টেবল শিহাব উদ্দিন, এসআই পূর্ণেন্দু বালা, সিপাহী আসাদুজ্জামান নূর, সৈনিক আবদুল আলীম, সার্জেন্ট এনামুল কবির, ল্যান্সনায়েক হীরা মিয়া ও আরওজি-১ এ বি মো. আরিফ হোসেন এবং নূর হোসেনের ৬ সহযোগী মূর্তজা জামান চার্চিল, আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দিপু, আবুল বাশার, রহম আলী ও জামাল উদ্দিন সরদার।

পলাতক যে ৬ আসামি আপিল করেননি তারা হলেন- র্যাব-১১’র চাকরিচ্যুত সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সী, সৈনিক আলামিন শরীফ ও সৈনিক তাজুল ইসলাম এবং নূর হোসেনের তিন সহযোগী ভারতে গ্রেফতারকৃত সেলিম, সানাউল্লাহ সানা ও শাহজাহান।

বিচারিক আদালতের রায়ে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড পাওয়া ৯ জনও র্যাবের বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা ও সদস্য। তাদের মধ্যে কনস্টেবল (পরে এএসআই পদে পদোন্নতি পেয়ে নৌ-থানায় কর্মরত) হাবিবুর রহমানকে ১৭ বছর, এএসআই আবুল কালাম আজাদ, এএসআই কামাল হোসেন, কনস্টেবল বাবুল হাসান, কর্পোরাল মোখলেসুর রহমান, ল্যান্স কর্পোরাল রুহুল আমিন ও সিপাহী নুরুজ্জামানকে ১০ বছর এবং এএসআই বজলুর রহমান ও হাবিলদার নাসির উদ্দিনকে ৭ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।

তাদের মধ্যে পলাতক দু’ জন হচ্ছেন- র্যাবের চাকরিচ্যুত কর্পোরাল মোখলেসুর রহমান ও এএসআই কামাল হোসেন।

সব মিলিয়ে দণ্ডপ্রাপ্ত ৩৫ জনের মধ্যে কারাগারে আছেন ২৭ জন আর পলাতক ৮ জন।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৭ জনকে অপহরণের তিনদিন পর তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

ওই ঘটনায় নিহত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২নং ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, নজরুলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিম।

সাত খুনের ঘটনায় প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও তার ৪ সহকর্মী হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় একটি এবং সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়ির চালক ইব্রাহিম হত্যার ঘটনায় জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে একই থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন।

দু’টি মামলার বিচারিক কার্যক্রম একসঙ্গে শেষ করে রায় দেন বিচারিক আদালত।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮২২ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৭
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।